বিষয় :

মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদুল আজহা উদযাপন


নিউজ ডেস্ক  ২৯ জুন, ২০২৩ ১০:০৪ : অপরাহ্ণ

ত্যাগের মহিমায় বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মুসলমান ঈদুল আজহা উদযাপন করেছে আজ। এটি মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে দিনটি। ঈদের নামাজের পাশাপাশি আল্লাহর জন্য বান্দার ত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে চলছে পশু কোরবানি। এর মাংস প্রতিবেশী, পরিবারের সদস্য এবং দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

বর্ণিল রঙের কাপড় পরে মেহেদি রাঙা হাতে ঝাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে দস্যি ছেলে-মেয়েরা। নামাজ শেষে ঘরে ফিরছেন মুসল্লিরা। পথে-প্রান্তরে বণ্টন করা হচ্ছে কোরবানির মাংস। বাড়িঘর থেকে ভেসে আসছে খাবারের সুঘ্রাণ।

চন্দ্র উদয়স্থলভেদে এক দিন আগে-পরে তা উদযাপন করবে বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা। ঠিক একই সময় পবিত্র হজ পালন শেষে লাখ লাখ মানুষ সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থান করছে। মূলত কোরবানির ঈদ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক নিজ পুত্র ইসমাঈল (আ:)-কে উৎসর্গ করার প্রতিজ্ঞার স্মারক।

তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে কোরবানির জন্য বিকল্প পশু হিসেবে একটি দুম্বা পাঠানো হয়। অবশ্য খ্রিস্টান ও ইহুদিদের বিশ্বাসমতে, তখন ইবরাহিম (আ.)-এর আরেক সন্তান ইসহাক (আ.)-কে কোরবানি করতে বলা হয়। যা-ই হোক, কোরবানির দিন ছাগল, গরু, ভেড়া, উটসহ বিভিন্ন গবাদি পশু জবাই করে উদযাপন করা হয়। এরপর এর মাংস পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা হয়।

দিবসটির মূল লক্ষ্য অভিন্ন হলেও এ দিনকে ঘিরে রয়েছে নানা দেশের নানা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। সংক্ষিপ্ত পরিসরে পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেন থেকে সিরিয়া অঞ্চলগুলোতে ঈদের দিন উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি তৈরি করা হয়। তা এখানকার খাবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর মধ্যে স্থানীয় বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে।

উৎসবের দিনগুলো কেবল তাই তৈরি করা হয়। মানামা থেকে শুরু করে লিবিয়ার ঘোড়সওয়ার সবার কাছে ঈদের সময় পাগড়ি ও দীর্ঘ জালাবিয়া জামা খুবই জনপ্রিয়। এদিকে এশিয়ার পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ধূপ থেকে শুরু করে মশাল জ্বালানোর ঐতিহ্য রয়েছে। আর পাকিন্তান, আফগানিন্তান ও অন্য অঞ্চলগুলোতে ঈদের রাতে হাতে মেহেদি দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। শিশু, কিশোরী থেকে তরুণী, বৃদ্ধাসহ সব বয়সী নারীদের দুহাত মেহেদি রাঙা থাকে।

আইভরি কোস্ট থেকে কেনিয়া ও অন্যান্য মুসলিম দেশে প্রকাশ্যে পশু জবাই করা হয়। অনেক সময় পশু জবাই দেখতে শিশু-কিশোর দর্শকদের ভিড় লাগে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, লাতিন আমেরিকায় প্রায় ৬০ লাখের বেশি মুসলিমের বসবাস রয়েছে। এখানকার অভিবাসী ও মেক্সিকান মুসলিমরা ঈদ উদযাপনে মেতে ওঠেন।

খাবার, ইবাদত এবং পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তাঁরা। উত্তর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪০ লাখ মুসলিম রয়েছে। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে কানাডায় ১৭ লাখের বেশি মুসলিম বসবাস করে। অভিবাসী মুসলিমদের মাধ্যমে দেশ দুটির মসজিদগুলো ঈদের সময় বর্ণিল রূপ ধারণ করে। বহু সংস্কৃতির সমন্বয়ে ঈদ উদযাপন করে তারা।

ইউরোপের দেশগুলোতেও ঈদ উৎসবে মেতে ওঠে শরণার্থী, অভিবাসীসহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। আফ্রিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা নিপীড়িত লোকজন কিছুটা আনন্দে দিন কাটানোর সুযোগ পায়। গত বছর ইউক্রেনের মুসলিম সৈন্যরা যুদ্ধ থেকে বিরতি নিয়ে ঈদ উৎসব উদযাপন করে।

ঈদ বাজারসহ নানা উৎসবে মেতে উঠে অস্ট্রেলিয়ার আট লাখের বেশি মুসলিম অভিবাসী। পরিচিত মুসলিম কমিউনিটির সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে দিনটি উদযাপন করে তারা।

সূত্র—আলজাজিরা

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ