শিরীণ আখতারের খুঁটির জোর কোথায়!


নিজস্ব প্রতিবেদক ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ২:২৭ : পূর্বাহ্ণ

শিক্ষকসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন করে গণমাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। তদন্তেও প্রমাণ হয়েছে এসব দুর্নীতি। অনিয়মের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিতে গিয়ে মামলা-মোকদ্দমায়ও জড়িয়ে পড়ছে প্রশাসন। নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষেত্রে একের পর এক হাইকোর্ট থেকে আসছে নিষেধাজ্ঞা ও রুল। তাতেও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

এতে—বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বঙ্গবন্ধুর স্বায়ত্তশাসনের মূলনীতিকে উপেক্ষা করছেন বলে অভিযোগ তুলেছে শিক্ষক সমিতি। ফলে আন্দোলনের ঘোষণার কথা জানিয়ে শিক্ষক সমিতি গত ২৯ ডিসেম্বর উপাচার্য শিরীণ আখতার বরাবর সর্বশেষ চিঠি পাঠিয়েছে বলে জানানো হয়।

শুক্রবার এই তথ্য নিশ্চিত করেন চবি শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রফেসর আবদুল হক। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটে শিক্ষকদের নির্বাচিত কোনো প্রতিনিধি নেই। ভারসাম্যহীন এই সিন্ডিকেটে একতরফা নানা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যা স্বৈরচারী মনোভাবের শামিল।

এতে শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমরা শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন ছাড়া সিন্ডিকেট সভা না করার জন্য উপাচার্যকে জানিয়েছি। যদি দাবি মানা না হয় তবে কার্যকরী কমিটি অথবা সাধারণ সভা করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জানান, শিক্ষক সমিতির ডাকা আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সমর্থন আছে। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুরু থেকেই আইন ও প্রচলিত নিয়ম ভেঙে চলেছে। তাদের বারবার চিঠি দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। ফার্সিসহ বিভিন্ন বিভাগের নিয়োগে টাকা লেনদেনের বিষয় প্রথম দিকে শোনা গেলেও পরে উপাচার্য দফতরের লোকজনই এক প্রকার হাতেনাতে ধরা পড়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি উপাচার্যের পিএসকে দায়ী করেছে।

ফাঁস হওয়া একাধিক ফোনালাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকের নাম উঠে এলেও তাদের তদন্তের আওতায়ই আনা হয়নি। এমনকি তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি, যা তদন্তের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তদন্ত কমিটি এই চক্রকে শনাক্ত করতে ফৌজদারি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলার সুপারিশ করলেও উপাচার্য তা আমলে নেননি। এই শিক্ষকদের প্রশ্ন, উপাচার্য নিজে যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকেন তাহলে কেন তিনি মামলা করছেন না।

এদিকে উপাচার্য বরাবর দেওয়া শিক্ষক সমিতির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) ছাড়া সর্বমোট ১৪ পদের মধ্যে চবি সিন্ডিকেটে শিক্ষক কর্তৃক নির্বাচিত বিভিন্ন ক্যাটাগরির ছয় জন প্রতিনিধিসহ আটটি পদ শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অপর দুটি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ সিন্ডিকেটে দীর্ঘদিন ধরে একটি চরম ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত স্বায়ত্তশাসন তথা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ এর মূলনীতি পরিপন্থি।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, শিক্ষক প্রতিনিধির পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ও পদোন্নতি বোর্ডসহ অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে শিক্ষা, গবেষণা এবং শিক্ষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ হচ্ছে না। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলোতে যা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চবির উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেনি।

সকালের-সময়/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ