বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) এম এ মান্নানসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আট কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গতকাল রোববার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলাটি দায়ের করা হয়।
কমিশনের উপপরিচালক আবদুল মাজেদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের জনসংযোগ বিভাগ থেকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, মেজর (অব.) এম এ মান্নান বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে, পরস্পরের সহায়তায় মেসার্স টেলিকম সার্ভিসেস লিমিটেডের মালিক আমিনুর রহমানের নামে নিরাপত্তা জামানত ও মর্টগেজ ছাড়াই আট কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন, যা সুদ ও আসলসহ ৮ কোটি ৩৮ লাখ ৮১ হাজার ৭০৫ টাকা।
দুদক জানায়—জালিয়াতি করে ঋণের মাধ্যমে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ, স্থানান্তর ও রূপান্তর করার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ধারায় মামলা করা হয়।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালে ৮ ডিসেম্বর টেলিকম সার্ভিস লিমিটেডের মালিক আমিনুর রহমানের বিআইএফসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর ৬০ মাস মেয়াদে ব্যবসায়িক প্রয়োজন মেটানোর জন্য ৮ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থাপনা কমিটি ১৫ শতাংশ সুদে ৬০ মাসের জন্য এই ঋণের প্রস্তাব বোর্ডে উত্থাপন করে।
দুদকের করা মামলার এজাহার থেকে আরও জানা যায়, সিকিউরিটি হিসেবে প্রতিটি ঋণের বিপরীতে ৬০ পোস্টডেটেড ও একটি করে তারিখবিহীন স্বাক্ষরিত চেক জমা রাখার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে নিরাপত্তা জামানত হিসেবে চেক কিংবা অন্য কোনো সম্পদ মর্টগেজ নেয়া হয়নি। এমনকি তাদের আবেদনকারীর সিআইবি রিপোর্টও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করা না হলেও পরিচালনা পর্ষদ পাঁচ বছরের জন্য ৮ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেন।
মেজর (অব.) মান্নান ছাড়াও এই মামলার বাকি ১১ আসামি হলেন ঋণগ্রহীতা আমিনুর রহমান, বিআইএফসির পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক আব্বাস উদ্দিন আহমেদ, এএনএম জাহাঙ্গীর আলম, রইস উদ্দিন আহমেদ, এ. কে. এম মহিউদ্দিন আহমেদ, রোকো ফেরদৌস, বিআইএফসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহমুদ মানিক, বিআইএফসির সাবেক উপব্যবস্থাপনা সম্পাদক ইনামুর রহমান, বিআইএফসির সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব বিজনেস সৈয়দ ফকরে ফয়সাল, বিআইএফসির সাবেক এভিপি অ্যান্ড ইউনিট হেড আহমেদ করিম চৌধুরী এবং সাবেক সিনিয়র অফিসার বিজনেস মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন।
এর আগে—ঢাকা ব্যাংক চট্টগ্রামের জুবলি রোড শাখা কর্তৃক দায়েরকৃত মোট ২৪ (চব্বিশ) কোটি টাকা চেক ডিজঅনারের তিনটি মামলায় বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব ও তৈরি পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান সানম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অব:) এম এ মান্নান, তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম মান্নান (এমডি) এবং দুই পরিচালকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল চট্টগ্রামের প্রথম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালত।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি লিমিটেড থেকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত পাঁচটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। যার মধ্যে দুটি মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে, বাকি তিনটি মামলা এখনও তদন্ত করছে দুদক। এসব মামলায় মোট ৮৫ কোটি ২০ লাখ ৮৮ হাজার ১৪ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।
সকালের-সময়/ফোরকান