নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল বারীর পদে পদে অনিয়ম-দুর্নীতি!


মোহাম্মদ ফোরকান  ১৭ এপ্রিল, ২০২৩ ৩:২৭ : পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল বারী ভূঁইয়া, তার বিরুদ্ধে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে কাজ না করে বিল তোলার অভিযোগ উঠেছে। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চসিকে বিভিন্ন ‘অনিয়ম-দুর্নীতির’ অভিযোগের পাশাপাশি আদালতে ‘মিথ্যা তথ্য’ প্রদান করে পদোন্নতি নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে সম্প্রতি চসিক মেয়র, প্রধান নির্বাহী ও সচিব বরাবরে আবেদন করা হয়েছে।

জানা গেছে, রেজাউল বারী ১৯৮৯ সালের ৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগে উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। তখন থেকে তার অনিয়ম-দুর্নীতির ডালপালা মেলতে থাকে।

সম্প্রতি চসিক মেয়র, সচিব বরাবরে পাঠানো অভিযোগে জানা যায়, নগরীর ৪ নম্বর চাঁন্দগাঁও ওয়ার্ডের বিভিন্ন কবরস্থানে ১২৫০ মিটার ২৫ এমএম জিনেট ক্যাবলের মাধ্যমে নতুন ২০টি লাইট শেড স্থাপন করে আলোকায়নের জন্য ৪ লাখ ৭ হাজার ১৭৩ টাকার টেন্ডারে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাহিদ এন্টারপ্রাইজকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

কিন্তু তালিকা অনুযায়ী কবরস্থানে নতুন লাইট শেড স্থাপন না করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে ও তথ্য গোপন করে এই চসিক নির্বাহী প্রকৌশলী চূড়ান্ত বিল প্রদান করেন।

এছাড়া মেসার্স কেপি এন্টারপ্রাইজ নামে অপর এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বান্ডেল সেবক কলোনির নতুন ৫ম তলা ভবনে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং ও আনুষঙ্গিক মালামাল সরবরাহ ও স্থাপনের জন্য ২৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকার কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন না করলেও রেজাউল বারী ভূঁইয়া কাজ সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে চূড়ান্ত বিল প্রদান করেন।

অভিযোগকারীরা জানান, শুধু এই দুটি কার্যাদেশ থেকে অনিয়ম ও জালিয়াতির ম্যাধমে ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রেজাউল বারী ভূঁইয়া। এই ‘দুর্নীতিবাজ’ কর্মকর্তাকে বিভাগীয় আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানের দাবি জানান অভিযোগকারীরা।

চসিক সূত্র জানায়, রেজাউল বারী ১৯৮৯ সালের ৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। ২০০১ সালে প্রথম তাকে উপ-সহকারী থেকে সবেতনে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই দায়িত্ব পালন করার সময় সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে ২০০৭ সালে তাকে সহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব থেকে ফের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়।

পরে এম মঞ্জুর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে তাকে উপসহকারী প্রকৌশলী থেকে ২০১০ সালের ২২ জুলাই ফের চলতি দায়িত্ব দিয়ে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে গার্বেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে স্থানান্তর করেন। তিনি ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত উপসহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পালন করেন।

কিন্তু ২০১১ সালে প্রকৌশলী রেজাউল বারী ভূঁইয়া উচ্চ আদালতে পদোন্নতির জন্য একটি রিট মামলা দায়ের করেন। সেই রিটে তিনি ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটানা সহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পালন করে আসছেন বলে আদালতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেন।

২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত দুই বছর তিনি যে সহকারী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে ছিলেন না সেই তথ্য গোপন করেন। আদালতে জালিয়াতির আশ্রয় নেন তিনি। মিথ্যা তথ্য দিয়ে উচ্চ আদালত থেকে তাকে সহকারী প্রকৌশলী পদে স্থায়ী করতে নির্দেশনা নিয়ে আসেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এরপর তাকে আদালতের নির্দেশে সহকারী প্রকৌশলী পদে স্থায়ী পদোন্নতি দেয় চসিক। ২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল এক অফিস আদেশে তাকে স্থায়ীভাবে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। তবে পদোন্নতির নেপথ্যে জালিয়াতির বিষয়টি পর্দার আড়ালেই থেকে গেছে এতদিন।

চসিক নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ বলেন, এই সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত চলছে। তদন্তকারী নিয়োগ দেয়া হয়নি। আদালতে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে পদোন্নতির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি তেমন জানি না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে চসিক নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল বারী ভূঁইয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চসিক প্রকৌশল বিভাগে একটি স্বার্থান্বেষী মহল রয়েছে, যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভুয়া অভিযোগ করেছে। তবে—কার্যাদেশে আমি একা সই করেনি এখানে আরও তিনজন সই করেছে। দুর্নীতি একা করা সম্ভব নয়, সবাই মিলে করেছি।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ