দুদকের মামলায় ফেঁসে গেলেন কাস্টমস কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী কন্যা


নিজস্ব প্রতিবেদক ২১ জুন, ২০২৩ ৭:২৮ : অপরাহ্ণ

গোলাম কিবরিয়া হাজারী। চট্টগ্রাম কাস্টমসের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা। চাকরিতে যোগদান থেকে অবসরে যাওয়া পর্যন্ত সরকারি এ কর্মকর্তা বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে আয় করেন ১ কোটি ৭১ লাখ ৯৮ হাজার ৮২৭ টাকা। কিন্তু নিজ এবং স্ত্রী-সন্তানের নামেই গড়ে তোলেন আয়ের প্রায় পাঁচ গুণ বেশি সম্পদ। এসব সম্পদ গড়ে তোলেন চাকরিরত অবস্থায় অবৈধভাবে অর্জন করা অর্থ দিয়ে।

তাতে সহযোগিতা করেন খোদ নিজ স্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কন্যা সন্তানও। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে এসব তথ্য। যদিও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি স্বামী-স্ত্রী কিংবা তাদের কন্যার। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং সহযোগিতার দায়ে দুদকের মামলার জালে ফাঁসতে হয়েছে কাস্টমসের সাবেক কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া হাজারীসহ তার স্ত্রী ও কন্যাকে।

৮ কোটি ৩৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৪৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ এবং ৫ কোটি ৮৯ লাখ ৯৭ হাজার ৪৯৮ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করায় কিবরিয়া ও তার স্ত্রী এবং কন্যার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক। গতকাল মঙ্গলবার দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দুটি দায়ের করা হয়। দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন—চট্টগ্রাম কাস্টমসের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া হাজারী (৬৮), তার স্ত্রী সেলিনা আকতার (৪৮) ও কন্যা সাদিয়া আক্তার ফারহা (২৮)। তারা ফেনী জেলার সদর থানাধীন মাস্টারপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও বর্তমানে নগরীর আগ্রাবাদের সিডিএ আবাসিক এলাকার ২২ নম্বর রোডে একটি বাড়িতে বসবাস করেন।

মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম বলেন, কমিশনের নির্দেশে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সেলিনা আকতার অসৎ উদ্দেশ্যে দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ২ কোটি ৩৯ লাখ ৫ হাজার ৮৩৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেন। এছাড়াও ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫ হাজার ১৮৫ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রাখেন।

অন্য মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গোলাম কিবরিয়া হাজারী অসৎ উদ্দেশ্যে দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৩ কোটি ৫০ লাখ ৯১ হাজার ৬৬৩ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং ৩ কোটি ৪০ লাখ ৬৫ লাখ ৬৫৯ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ অস্থাবর সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন এবং তার মেয়ে সাদিয়া আক্তার ফারহা বাবার অবৈধ উপার্জিত অর্থ নিজ নামে সম্পদ অর্জনের সহযোগিতা করায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

জানা যায়, গোলাম কিবরিয়া হাজারী ১৯৯০ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারিতে কাস্টমস বিভাগের প্রিভেন্টিভ অফিসার পদে চাকরিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০০১ সালে ইন্সপেক্টর, ২০০৯ সালে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এবং ২০১২ সালে রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি গ্রহণ করে ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর অবসর গ্রহণ করেন।

দুদক সূত্র জানায়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া হাজারী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে অনুসন্ধানে নামে দুদক। স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক সম্পদের তথ্য পাওয়ার পর ২০১৮ সালের আগস্টে পৃথক পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয় সংস্থাটি।

এরমধ্যে গোলাম কিবরিয়া হাজারী দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে নিজ নামে ১ কোটি ৩০ লাখ ৯৮ হাজার ৪ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রদান করেন। তবে চাকরিরত অবস্থায় তিনি কোন স্থাবর সম্পদ অর্জন করেননি বলে সম্পদ বিবরণীতে ঘোষণা দেন।

তবে দুদকের অনুসন্ধানে গোলাম কিবরিয়া নিজ নামে এবং মেয়ের নামে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৭ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া তার পারিবারিক ব্যয় হয় ৩০ লাখ ৭৪ হাজার ৮১৯ টাকা। অর্থাৎ সবমিলিয়ে তার নামে ৫ কোটি ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৪৮৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পায় সংস্থাটি। তবে এর বিপরীতে তার বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে সর্বমোট ১ কোটি ৭১ লাখ ৯৮ হাজার ৮২৭ টাকার বৈধ আয় পাওয়া যায়। সে হিসেবে বাকি ৩ কোটি ৪০ লাখ ৬৫ হাজার ৬৫৯ টাকার সম্পর্দ আয় বহির্ভূত অর্জন।

এছাড়া স্ত্রী সেলিনা আকতারের সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে ৬ কোটি ১৯ লাখ ২০ হাজার ৫৪০ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পায় দুদক। তবে আয়কর নথি অনুসারে তার নামে ৫৬ লাখ ৯ হাজার ৯৫৮ টাকার ঋণ ছিল। সে হিসেবে তার নামে ৫ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার ৫৮২ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।

তিনি ৫৬ লাখ ২১ হাজার ৭৪ টাকার পারিবারিক ব্যয় করেন। অর্থাৎ তার নামে সম্পদ অর্জনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ কোটি ১৯ লাখ ৩১ হাজার ৬৫৬ টাকার। বিপরীতের তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ১ কোটি ২০ লাখ ২৬ হাজার ৪৭১ টাকা। অর্থাৎ বাকি ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫ হাজার ১৮৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন গোলাম কিবরিয়া হাজারীর স্ত্রী সেলিনা আকতার।

সূত্র—ডিপি/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ