ই/এম বিভাগের নব্য জিকে শামীম কে এই আরাফাত!

ক্ষমতাবান বলয়ের ত্রী-দানবীয় সিন্ডিকেটে জিম্মি চট্টগ্রাম গণপূর্ত!


মোহাম্মদ ফোরকান  ৫ জুলাই, ২০২৩ ৬:২৩ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম গণপূর্ত ই/এম বিভাগ ক্ষমতাবান বলয়ের দূর্নীতির ত্রী-দানবীয় সিন্ডিকেটের নাম কায়কোবাদ- ময়নুল-আরাফাত। পাহাড়সম অভিযোগ রয়েছে এ সিন্ডিকেটর বিরুদ্ধে, রয়েছে তাদের বিশাল বাহিনী, সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ক্যাডার বাহিনী থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী ব্যাক্তিও রয়েছেন জড়িত। যাদের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস দেখায় না কেউ। তাদের ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ ও দিয়েছে এক এডভোকেট।

জানা গেছে—ভূয়া টেন্ডার, ঘুপচি টেন্ডার, টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়া, অর্থনৈতিক কোডের আইন ভঙ্গ করে পুরানো বিলের চেক পাশ করিয়ে দেয়া, টেন্ডার না করিয়ে বেআইনিভাবে আবেদনের মাধ্যমে কাজের সময় বর্ধিতকরণের আদেশ দেয়া, আইন ও ক্ষমতাবহির্ভূতভাবে সরকারি ব্যাংকের ভুয়া পে-অর্ডার জালিয়াতি মামলার আসামি দি কার্মস্ ইঞ্জিনিয়ার্স নামক এক কথিত ঠিকাদারকে শত কোটি টাকার কাজ পাইয়ে দেয়াসহ রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ।

তবে—উপরোক্ত বিষয়ে তথ্য চেয়ে গত ২৫ জুন আবেদন করা হয় চট্টগ্রাম গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-১ ও ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর। তথ্য চাওয়াতে রাতেই তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে খুলশি থানায় জিডি করেন কথিত ঠিকাদার আরাফাত হোসেন রাজু। সেই জিডিতেও তিনি ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে জাতীয় পরিচয় নাই উল্লেখ করে জিডি করেছেন যা দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল। এর আগে তিনি গণপূর্ত ই/এম বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে করা নিউজ সরিয়ে ফেলতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী দিয়ে প্রতিবেদকে হুমকিও দেন। এবং মামলার ভয় দেখান।

তথ্য সূত্রে জানা যায়—তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদ ও নির্বাহী প্রকৌশলী ময়নুল হক এভাবে বিভিন্ন কাজে নয়ছয় করে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন, গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদের পাহাড়। তাদের নেতৃত্বেই চলে চট্টগ্রাম গণপূর্ত ই/এম বিভাগে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। কমিশন ছাড়া কোনো বিলেই সই করেন না তারা। কমিশন এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন প্রতারণা মামলার আসামি কথিত ঠিকাদার আরাফাত হোসেন রাজু। তবে এই রাজুর নিদিষ্ট কোনো অফিস নেই, তার ভাড়া বাসার বেডরুম থেকেই তিনি শতকোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী ঠিকাদার জানান, সরকারি অর্থ অপচয় করে এই সিন্ডিকেটের পকেট ভারী করাই তাদের মূল কাজ। দেশের সেবা করার পরিবর্তে নিজেদের আখের গোছাতেই মহাব্যস্ত তারা। আবার রয়েছে ঘুপচে টেন্ডারের অভিযোগ, গত হওয়া অর্থবছরগুলো থেকে বর্তমান অর্থবছর পর্যন্ত সমস্ত টেন্ডারের মালামাল ও উক্ত মালামাল ব্যবহারের ক্ষেত্র তদন্ত করলেই সকল রহস্য বেড়িয়ে আসবে। কম্পিউটার অপারেটর থেকে শুরু করে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত প্রত্যকেই এ সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। নামে-বেনামে এদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ, আলিশান ফ্ল্যাট, প্লট, ব্যবসা বাণিজ্য, বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংক-ব্যালেন্স রয়েছে।

আরও জানা গেছে, চট্টগ্রাম গণপূর্ত ই/এম বিভাগে প্রায় অর্ধশত ঠিকাদার রয়েছে, তাদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ঠিকাদার ছাড়া আর কেউ কাজ পায়না। এবং কিছু ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ভুয়া টেন্ডারে অংশগ্রহন করে বিল জমা দেওয়ার অভিযোগ আছে। কাগজে কলমে এরা টাকা পাওনা থাকলেও বাস্তবে এ মালামাল সংগ্রহ করা হয়েছে কিনা অথবা কোথা থেকে সংগ্রহ করে মালামাল সরবরাহ করেছে তা কঠোরভাবে দূর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক যাচাই করলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। মূলত ই/এম বিভাগ-১ ও ২ এ দূর্নীতির মহা উৎসব চলে আসছে।

আরও এক ঠিকাদার জানান, বর্তমানে এই সিন্ডিকেট একটি বিরাট অংকের নতুন ও পুরানো বিল ছাড় করানোর তোড়জোড় করছে। নিয়মানুসারে ফান্ড বরাদ্দ পাওয়ার পর টেন্ডার আহ্বান করা বিধান। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হচ্ছে তা ব্যতিক্রম। ফান্ড বরাদ্দ পাওয়ার সাথে সাথেই ২৪ ঘন্টার মধ্যেই চেক বিতরন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটু সজাগ হলেই বিপুল পরিমান অনিয়ম উৎঘাটন করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও জানান, কিছুদিন আগের একটি বড় বরাদ্দ ভাগবাটোরা করার পায়তারা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, এই সিন্ডিকেট (ঠিকাদার ও কর্মচারী-কর্মকর্তা) মিলে অনিয়মের বীজ বপন করেছে চট্টগ্রাম গণপূর্ত ই/এম বিভাগে। উল্লেখ্য যে, যে পরিমান ফান্ড বরাদ্দ হয়েছে এবং সে পরিমান মালামাল সংরক্ষণ বিভাগে মজুদ রয়েছে কিনা তা যাচাই করলেই সমস্ত তথ্য ও অনিয়মের থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, মডেল মসজিদ নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট, ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ শীর্ষক প্রকল্পের প্রায় কাজ পছন্দের ঠিকাদারদের দেওয়া হয়। শত শত কোটি টাকার এ কাজগুলো প্রদান করা হয়েছে বড় ধরনের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে।

মাঝারি ও বড় কাজে কমিশন (অনৈতিক) সুবিদা নিয়ে দি কার্মস্ ইনঞ্জিনিয়ার্স এর ঠিকাদারসহ প্রকৌশলী কায়কোবাদ ও নির্বাহী প্রকৌশলী ময়নুল ঠিকাদারের সাথে বসে স্পেসিফিকেশন নির্দিষ্ট করেন। যাতে অন্য ঠিকাদাররা ডিসকোয়ালিফাই হন তার ব্যবস্থা করে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। যা গণপূর্ত ই/এম বিভাগে সবার মুখে মুখে। প্রকৌশলী ময়নুল হকরা প্রতিদিন অফিসে বসে মাদক জাতীয় দ্রব্য সেবন করেন যা অফিসিয়াল নিয়মবহির্ভূত।

অভিযোগ রয়েছে, অর্থনৈতিক কোডের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়ে গত ৫ বছরের পুরানো বিল চলতি আর্থিক বছরের টাকা থেকে চেক প্রদান করতে নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সিন্ডিকেট বরাবরই কাজ করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে দি কার্মস্ ইন্জিনিয়ার্স এর ঠিকাদার আরাফাত হোসেন রাজু সকালের-সময়কে বলেন, আমি চট্টগ্রাম গণপূর্ত ই/এম বিভাগের বড় ঠিকাদার, আমাকে এখানে সবাই যমের মত ভয় পায়, আমি শুধু গণপূর্তে না বিভিন্ন দপ্তরে ঠিকাদারী করি। আমি সম্প্রতি এক সচিবের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দিয়েছি। দেখেন এখানে অনেক বড় বড় ঠিকাদার টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলেও কাজ কিন্তু আমি পায়। আমি জয়েন্ট এডভেঞ্চারে ও কাজ করি।

এদিকে গণপূর্ত চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদ ও গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ময়নুল হকের মুঠোফোনে কল দেয়া হলে উভয়ে কল রিসিভ করেনি।

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল খায়েরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কল রিসিভ করেনি।

এছাড়া—কোটি কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি ও অপচয়ের তথ্য সবলিত নথি সকালের-সময় ডটকমের কাছে সংরক্ষিত আছে। পরের পর্বে থাকছে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের ভুয়া পে-অর্ডার দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দি কার্মস্ ইঞ্জিনিয়ার্সের কথিত ঠিকাদার আরাফাত হোসেন রাজুর বিরুদ্ধে করা প্রতারণার মামলার ফিরিস্তি—সাথে থাকুন।

এসএস/এসডি/জেএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ