অবৈধ আয়কে বৈধ করার চেষ্টা, ফেঁসে গেলেন স্বামী-স্ত্রী


নিউজ ডেস্ক  ৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ৯:৫৫ : পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কাস্টমস’র সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা ও ঝালকাঠি সদরের কেওড়া এলাকার বাসিন্দা মো. নিজামুল হক ও তার স্ত্রী নাসিমা আক্তারের ২ কোটি ২৫ লাখ ৯৩ হাজার ১৩৮ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক চট্টগ্রাম। এ ঘটনায় এই দম্পতির বিরুদ্ধে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম–১ এ মামলা দায়ের করেছেন কার্যালয়ের উপপরিচালক (সংযুক্ত) মো. ফজলুল বারী।

মামলায় উল্লেখ করা হয়–নাছিমা আক্তার ব্যবসার আড়ালে স্বামীর অবৈধ আয়কে বৈধ দেখানোর অপচেষ্টা করেছেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম–১ এর উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা মো. ফজলুল বারী বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নিজামুল হক কেরানীগঞ্জের পানগাঁও কাস্টমস হাউস হয়ে ২০১৭ সালে অবসরে যান। চাকরিকালীন তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠলে দুদক, চট্টগ্রাম তাকে সস্ত্রীক সম্পদ বিবরণী দাখিল করার জন্য নোটিশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন নিজামুল ও নাসিমা দম্পতি।

দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাই করলে দেখা যায়, ওই দম্পতি পরস্পর যোগসাজশে ২ কোটি ২৫ লাখ ৯৩ হাজার ১৩৮ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। পাশাপাশি ২৬ লাখ ১৬ হাজার ৬৩ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন তারা। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং দন্ডবিধির ১০৯ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দুদক সূত্র জানায়, সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নিজামুল হক তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১০ লাখ ১৩ হাজার ৯৫০ টাকার স্থাবর ও ১ কোটি ৯১ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৭ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২ কোটি ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৪৭ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া গেছে ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৮৯৮ টাকা।

সেই হিসেবে নিজামুলের মোট অর্জিত সম্পদের মূল্য ২ কোটি ৩১ লাখ ৪৮ হাজার ১৪৫ টাকা। এর বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৮১ হাজার ৯১৬ টাকা। বাকি ১ কোটি ৫ লাখ ৬৬ হাজার ২২৯ টাকার সম্পদ হচ্ছে নিজামুলের জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। যা তিনি ভোগ দখলে রেখে অপরাধ করেছেন।

দুদক সূত্র জানায়, নিজামুলের মতো তার স্ত্রী নাছিমা আক্তারও ২০২০ সালের ৩০ জুন দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এতে তিনি নিজ নামে ৮৯ লাখ ৬২ হাজার ৩১৪ টাকার স্থাবর ও ৬১ লাখ ১২ হাজার ২১১ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১ কোটি ৫০ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৫ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন।

যাচাই করলে দেখা যায়, নাছিমা আক্তার তার নিজ নামে একটি পাঁচ তলা ভবন নির্মাণে ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার ২৪৫ টাকা বিনিয়োগ দেখিয়েছেন। কিন্তু গণপূর্তের প্রকৌশলী দিয়ে পরিমাপ করলে উক্ত ভবনে তার প্রকৃত বিনিয়োগ পাওয়া যায় ৭৫ লাখ ৫১ হাজার ৩০৮ টাকা। এক্ষেত্রে তিনি ২৬ লাখ ১৬ হাজার ৬৩ টাকা কম প্রদর্শন করে অপরাধ করেছেন। পাশাপাশি তার ২৪ লাখ ৪ হাজার ১৫ টাকার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া গেছে।

সেই হিসেবে নাছিমা আক্তার ১ কোটি ১৫ লাখ ৭৮ হাজার ৩৭৭ টাকার স্থাবর ও ৬১ লাখ ১২ হাজার ২১১ টাকার অস্থাবর এবং ২৪ লাখ ৪ হাজার ১৫ টাকার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ মোট ২ কোটি ৯৪ হাজার ৬০৩ টাকার সম্পদের মালিক। এর বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ৮০ লাখ ৬৭ হাজার ৬৯৪ টাকা। বাকি ১ কোটি ২০ লাখ ২৬ হাজার ৯০৯ টাকার সম্পদ তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। যা তিনি ভোগ দখলে রেখে অপরাধ করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, নাছিমা আক্তার আয়কর নথিতে বিভিন্ন রাখি মালের (স্টক ব্যবসা) ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করেছেন। তবে আড়ালে ছিল অন্য কিছু। মূলত স্বামী নিজামুলের অবৈধ উপায়ে অর্জিত আয় দিয়ে তিনি সম্পদ অর্জন করে বৈধ করার অপচেষ্টা করেছেন।

সূত্র–ডিএ/এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ