সকালেরসময় ডেস্ক:: মঞ্চে রূপার তৈরি ঢাউস সাইজের নৌকা। পাশে ক্ষুদ্র আরেকটি। তার ঠিক পেছনে চেয়ারে বসা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ নেতাকর্মীরা। ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ধামরাইয়ের চৌহাটে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী বংশী নদীর ওপর নির্মিত সেতু উদ্বোধন শেষে সবে মঞ্চে বসেছেন কাদের।
পীড়াপীড়ির সূচনা এখানেই। স্থানীয় সংসদ সদস্য এমপি আব্দুল মালেকের পক্ষ থেকে তাগাদা দেওয়া হলো মঞ্চ থেকে ঘোষণা দিতে। সে মোতাবেক ঘোষণা এলো এখন রূপার তৈরি নৌকা মন্ত্রীকে তুলে দেবেন ঘোষণা শেষ না হতেই চোখে-মুখে চরম বিরক্তি আড়াল করতে পারলেন না ওবায়দুল কাদের। না না। এটা আমি নেবো না। জানেন না, আমি এগুলো নিই না। তারপরও কেন দিতে চান? অনেকটা ভর্ৎসনার সুরে বলেন মন্ত্রী। নাছোড়বান্দা এমপি। হাজার হলেও ১২৮ ভরি ওজনের রূপার তৈরি নৌকা! জনাকীর্ণ সমাবেশে মন্ত্রী এভাবে ফিরিয়ে দিলে সম্মান কী থাকে?
এবার শুরু এমপির পক্ষে চাপাচাপি। সেটা মাত্রা পেলো পীড়াপীড়িতে। না! কিছুতেই রাজি করা গেলো না ওবায়দুল কাদেরকে। শেষমেষ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ‘ফুলের তৈরি নৌকা’ তুলে দেন এমপি আব্দুল মালেক। হঠাৎ করেই যেন নির্বাক হয়ে গেলেন মন্ত্রী। সেই নীরবতার ভাষা আরও কড়া। অন্তরকে বিদ্ধ করার মতো। অনেকটা পরাজিত। ক্লান্ত আর ম্রিয়মান ভঙ্গিতে নৌকাকে পেছনে ঠেলে দিলেন এমপি মালেক।
উপহারের মর্যাদা মন্ত্রীর তরফ থেকে না পেয়ে রূপার নৌকা যখন ধুলোয় লুটোয়, তখন মিটিমিটি হাসি মালেকের প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাদের মুখে। কারওবা চোখে খুশির ঝিলিক! তাদের কাছে এমপির পরাজয় বলে কথা! তবে এমপি মালেকের ভাগ্য ভালো। শেষমেষ ‘ফুলের তৈরি নৌকা তুলে দিতে পারলেন। এতে যেমন তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেন, তেমনি ক্যামেরার ফ্লাশের আলোয় হাসি ফোটালেন ঠোঁটে। সমাবেশটা ছিল নিজ দলের নেতাদের মধ্যেই এক ধরনের শো ডাউন। ব্যানারে ব্যানারে মন্ত্রীর ছবি। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা। গগনবিদারী শ্লোগান। উদ্দেশ্য সামনে জাতীয় নির্বাচন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সবার চেহারাটাই যেন একরকম। আমিই ভরসা। আগামীতে নৌকা প্রতীকটা আমারই চাই’।কাদের। এই প্রার্থনাই যেন ব্যানার, তোরণ আর পোস্টার বন্দনায়। কিন্তু সব বন্দনাকে কিছুকে উড়িয়ে মন্ত্রী বললেন ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা। স্মরণ করিয়ে দিলেন, ক্ষমতা না দেখানোর। বললেন, ক্ষমতা বেশিদিন থাকে না। ভালো আচরণ না করলে সরকারের সব অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। মোটরসাইকেল মহড়া নিয়েও ছাড় দেননি কাদের সাত মাস পর নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। মহড়ায় থাকা মোটরসাইকেল গুনে মানুষ ভোট দেবে না। দলের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পরস্পরের দিকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে দেখা যায়। তখন অবশ্য মঞ্চের সামনে তুমুল করতালি।