বিষয় :

জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে বাঁশখালীর ৬২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ


নিজস্ব প্রতিবেদক ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ২:২৫ : অপরাহ্ণ

স্বাধীনতার মাসে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে স্থাপিত এসএস পাওয়ারের বিদ্যুৎ। শুরুতে একটি ইউনিটে উৎপাদিত ৬২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। তবে আগামী জুন থেকে দুই ইউনিটে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রটি থেকে ১২২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে জাতীয় গ্রিডে।

এসএস পাওয়ারের কাছ থেকে আপাতত প্রতিইউনিট বিদ্যুৎ ৯ টাকা হারে কিনছে সরকার। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম হ্রাস-বৃদ্ধি হলে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দামও ওঠানামা করবে। দেশের বেসরকারি খাতে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে নতুন এক মাইলফলক স্থাপন করেছে এসএস পাওয়ার কর্তৃপক্ষ। বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমিতে স্থাপন করা হয়েছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র।

গতকাল রবিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। বসানো হয়েছে ভারী যন্ত্রপাতি। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। এখানে ব্যবহারের জন্য কয়লা আমদানি হবে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে। ওই দুই দেশের সঙ্গে ইতোমধ্যেই চুক্তি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী কয়লা কিনে সমুদ্রপথে পরিবহন করে আনা হবে বঙ্গোপসাগরের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা উপকূলে। জাহাজ থেকে এক কিলোমিটার লম্বা কনভেয়ার বেল্ট দিয়ে এগুলো নেওয়া হবে কয়লা শেডে। সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী কয়লা নেওয়া হবে ব্রয়লারে। সেখানে কয়লা পুড়িয়ে জলীয় বাষ্প তৈরি করা হবে। এই জলীয় বাষ্পের শক্তিতে ঘুরবে টারবাইন। আর টারবাইন ঘুরলে জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

সেই বিদ্যুৎই যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। জলীয় বাষ্প উৎপাদন পর্বে লাগবে পানি। সেই পানি সংগ্রহ করা হবে বঙ্গোপসাগর থেকে। পরিশোধনের পর পানি ব্যবহার হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন পর্যায়ে। ৬২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইউনিটে ঘণ্টায় কয়লার প্রয়োজন হবে ২৯০ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে পূর্ণশক্তিতে দুই ইউনিট ব্যবহার হলে প্রতিমাসে ২০ হাজার টনের বেশি কয়লা লাগবে। এত পরিমাণ কয়লা পোড়ানোর পর ২৭৫ মিটার উঁচু চুল্লি দিয়ে ধোঁয়া যাবে ঊর্ধ্বগগনে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিবেশ দূষণ এড়াতে এই কেন্দ্রে সুপার পেডিকেল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কন্ট্রোল রুমে একদল প্রকৌশলী কম্পিউটারে কাজ করছেন। মনিটরে পুরো প্রকল্পের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। এখান থেকেই মূলত কেন্দ্রটি পরিচালিত হবে। পূর্ণশক্তিতে উৎপাদন শুরু হলে এই কেন্দ্রে ১২০০ কর্মী কাজ করবেন। এর মধ্যে অন্তত ৪৫০ জন থাকবেন প্রকৌশলী। যদিও নির্মাণ পর্যায়ে এখানে অন্তত ৭ হাজার কর্মী কাজ করেছেন। প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কেন্দ্রটির ৭০ শতাংশের মালিকানা এস আলম গ্রুপের। বাকি ৩০ শতাংশ দুটি চীনা প্রতিষ্ঠানের।

গতকাল কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন বিদ্যুৎ সচিবসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এসএস পাওয়ারের পক্ষে ছিলেন এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ লাভু।

তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আসছে। প্রথমে ২০ হাজার টন আসবে। পরে দুই লাখ টন। আগামী মার্চে উৎপাদন শুরু হবে। দুটি ইউনিট চালু হলে জুন থেকে পুরোদমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। কয়লা আমদানিতে এলসি সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানান আব্দুস সামাদ লাভু। তিনি বলেন, আলোচনার পর একটা সুরাহা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৯ টাকার কিছু কম।

প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টার কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, এসএস পাওয়ারের বিদ্যুৎ প্রতিইউনিট ৯ টাকা হলে আদানির বিদ্যুৎ কেন ১৬ টাকায় কিনছে সরকার?’ জবাবে তিনি বলেন, তথ্যটি ভুল। আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। এ কারণে বিদ্যুতের দামও হ্রাস-বৃদ্ধি হয়। এটা এক মাস আগের দর। এসএস পাওয়ার, পায়রা, রামপাল ও আদানিসহ সব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ একই দরে কেনে সরকার।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যুদ্ধ বন্ধ হলেই আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে। তখন সব কিছু সাশ্রয়ী হবে। এখন সব কিছুই ঊর্ধ্বমুখী। বিদ্যুতে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার। এখন দাম বাড়াতে হচ্ছে ভুর্তকি যাতে দিতে না হয়। গত মাসে বিদ্যুৎ ভবনে সরকারের পক্ষে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও এসএস পাওয়ার কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। সরকার পক্ষে পিডিবি সচিব মাজহারুল হক এবং এসএস পাওয়ারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ এতে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি অনুযায়ী আগামী ২৫ বছর এসএস পাওয়ার প্লান্ট থেকে প্রতিইউনিট ৬ টাকা ৬০ পয়সা হারে বিদ্যুৎ কেনার কথা ছিল সরকারের। কিন্তু গতকাল জ্বালানি উপদেষ্টার পাশে দাঁড়িয়ে এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ লাভু সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রতিইউনিট বিদ্যুতের দাম ৯ টাকার কিছু কম।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page