বিষয় :

আজ মহান মে দিবস


১ মে, ২০১৮ ২:১৫ : পূর্বাহ্ণ

সকালেরসময় নিউজ ডেস্ক::  মহান মে দিবস শ্রমিকদের আত্মমর্যাদারর দিন আজ। শ্রমিকের ঘামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের দিন। তাই বিশ্বের দেশে দেশে শ্রমের ন্যায্য মূল্য আর শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিনটি উপলক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সাধারণ ছুটি অব্যাহত রেখেছে। হাতে নিয়েছে নানা কর্মসূচিও।

দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এবারও পালন করা হবে মে দিবস। মঙ্গলবার (১ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধুর আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত মে উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বেসরকার উন্নয়ন সংস্থা, টেড ইউনিয়নগুলোও হাতে নিয়েছে নানা কর্মসূচি। ১৩১ বছর আগে পহেলা মে-তে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্টেকে শ্রমের ন্যায্য মূল্য ও দৈনিক আট ঘণ্টার কাজের দাবিতে ঘর্মঘট আহ্বান করেন শ্রমিকরা।

এতে প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক অংশ নেন। শ্রমিকদের আন্দোলন দমন করতে সেদিন সমাবেশে পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এতে অনেকে নিহত হন। এছাড়া গ্রেফতার করা হয় অনেককে। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে ৬ শ্রমিককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয় সে সময়কার শাসকগোষ্ঠী। কারাগারে বন্দি অবস্থায় এক শ্রমিক আত্মহত্মা করেন।

এই আন্দোলনের ফলে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের পথ প্রশস্ত হয়। মালিকরা স্বীকার করে নেয়, শ্রমিকদেরও বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। কাজের সময়সীমা কমে নেমে আসে ৮ ঘণ্টায়। এরপর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শ্রমিকের অধিকার আদায়ে একটি দিবস পালনের জন্য পহেলা মে ‘মে দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সেই থেকে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন হয়ে আসছে।

বাংলাদেশ সরকার শুধু দিবসটি পালনই নয়, শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় আইনেও অনেক পরিবর্তন, সংযোজন এনেছে। গঠন করা হয়েছে শ্রম আদালত। যেখানে শ্রমিককে মামলা লড়ার সামর্থ্য না থাকলে বিনামূল্যে আইনি সহায়তাও দেওয়া হয়। গর্ভরতী মা শ্রমিকের জন্য বেতন ভাতাসহ ১১২ দিনের ছুটির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে সন্তান জন্মদানের আগে ৫৬ দিন ও পরে ৫৬ দিন ছুটি পান তিনি। এছাড়া জন্মদানের সময় মা মারা গেলে সন্তানকে উত্তরাধিকারী প্রসূতি কল্যাণ ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আর সন্তান মারা গেলে স্বামীকে উত্তরাধিকারী ভাতা প্রদানের বিষয়টিও আইনে উল্লেখ রয়েছে।

সরকারের একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী আইনের কারণে দেশে এখন বলতে গেলে প্রায় কোনো শ্রমিককেই আর মালিকরা বিনা নোটিশ বা পারিশ্রমিক ব্যতিরেকে চাকরিচ্যুত করতে পারে না। এক্ষেত্রে অন্তত তিন মাসের নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করতে হয়। সে সময় শ্রমিক তার বেতন ভাতা পেয়ে থাকেন। অথবা বেতন-ভাতা পরিশোধ করেই চাকরিচ্যুত করা হয়।

শ্রম আদালতও সব সময় শ্রমিকের পক্ষেই যায়। একটি কথা প্রায় প্রচলিতই হয়ে গেছে, যে শ্রম আদালতে মামলা করলে শ্রমিক হারে না। আজ বা কাল, যেদিনই হোক মালিককে তার পাওনা পরিশোধ করতেই হয়। তবে গার্মেন্ট শিল্প বা বিভিন্ন ধরণের কারখানার শ্রমিকের নিরাপত্তা ও স্বার্থরক্ষার বিষয়টি প্রায় সময়ই ব্যত্যয় দেখা যায়। বিশেষ করে হুটহাট কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা কিংবা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার বিষয়গুলো এখনো মীমাসিংত নয়।

সরকার এবং শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিতে আন্দোলনকারী বিভিন্ন সংস্থাও এসব বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর আন্তরিকতা লক্ষ্য করা গেলেও মালিকদের অনেকেই এ বিষয়ে সহায়তা করছে না। যে কারণে প্রায় সময়ই কারখানা শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে দেখা যায়।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page