৯২ জনের সিণ্ডিকেট কাটছিল পাহাড়, চসিকের অভিযানে বন্ধ


নিজস্ব প্রতিবেদক ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ১২:৩৫ : পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র আসকার দীঘির পাড় এলাকায় গ্রিনলেজ ব্যাংক পাহাড় কেটে সাবাড় করছে একটি প্রভাবশালী ৯২ জনের সিণ্ডিকেট। কথিত ‘স্বপ্নিল ফ্যামিলি ওনার্স’ নামের ডেভেলপার চারদিকে ঘেরা দিয়ে ভেতরে পুরো পাহাড়টি সাবাড় করে ফেলেছে। এই পাহাড় কাটার ঘটনায় অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

সম্প্রতি ৯২ জনের সিণ্ডিকেটের দুই জনকে ২৮ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। খুলশীর পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এ বিষয়ে শুনানি শেষে তাদেরকে এ জরিমানা করা হয়েছিল।

তখন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রোর উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক জানান, ভবন নির্মাণের জন্য দুজন ব্যক্তি গ্রিনলেজ ব্যাংক পাহাড় কেটে সমান করেছেন। এজন্য তারা অনুমতি নেননি এবং পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদনও করেননি। ২৮ হাজার বর্গফুট পাহাড় কেটেছেন বিধায় তাদের ২৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাহাড়ের কাটা অংশ আগের অবস্থায় ভরাট করতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর ব্যত্যয় ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তখন জানিয়েছিল তিনি।

কিন্তু কে শুনে কার কথা! জরিমানার পরও হরদম ৯২ জন মিলে পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের পায়তারা করে আসছিল আসকার দীঘি এলাকার এই পাহাড়ে। দিনে-রাতে শহর থেকে দূরে চোরাগুপ্তাভাবে পাহাড় সাবাড় করা হচ্ছে এটা নিয়ে ক্ষুব্ধ নগরবাসীকে এবার ঘরের ভিতরের পাহাড় গিলে ফেলা দেখতে হচ্ছে।

চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো রক্ষা করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে নির্দেশনা দিয়েছেন সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে। যেখানে খোদ প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন সেখানে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে পাহাড় কাটার ঘটনা সবাইকে ক্ষুব্ধ ও হতবাক করেছে।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, অনেকদিন ধরে পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। ৯২ জনের একটি প্রভাবশালী সিণ্ডিকেট চারপাশে ঘেরা দিয়ে পুরো পাহাড়টি সাবাড় করে ফেলেছে। দেশে কি আইনকানুন নেই, এভাবে পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ করার পায়তারা বন্ধ করতে হবে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা দরকার।

তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, আসকারদীঘির পাড়ের পাহাড়টি ড্রেসিং করে ভবন নির্মাণের জন্য সিডিএ থেকে অনুমোদন নেয়া হয়েছে। সিডিএ যেভাবে পাহাড়টি ড্রেসিং করতে বলা হয়েছে তার ছিটেফোটাও রক্ষা করছে না পাহাড়খেকোর দল। ড্রেসিং করার নামে পুরো পাহাড়টিই গায়েব করে দেয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। যারা পাহাড় কাটার সাথে জড়িত তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

তবে শেষ রক্ষা হলো কথিত ‘স্বপ্নিল ফ্যামিলি ওনার্স’ এর পাহাড়খেকো ৯২ জনের। তারা চট্টগ্রাম নগরীর আসকার দীঘি পাড়ের গ্রিনলেজ ব্যাংক পাহাড় কেটে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের নামে বাড়ি নির্মাণ করছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি টীম অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দেয়।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের টীমের খবর পেয়ে এই আবাসন প্রকল্পের প্রকল্প প্রকৌশলী পালিয়ে যান বলে সিটি কর্পোরেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতি সর্ববিদ্যা এ অভিযান পরিচালনা করেন।

অভিযান সম্পর্কে চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতি সর্ববিদ্যা জানান, নগরীর আসকার দিঘীর পাড় এলাকায় পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে জানতে পেরে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

তখন জানা যায়, ৯২ জন ব্যক্তি একজোট হয়ে ‘স্বপ্নিল ফ্যামিলি ওনার্স’ নামীয় একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আসকার দীঘির পাড়ে পাহাড় কেটে ৩টি ভবন নির্মাণ করছিলেন। অভিযানের কথা জানতে পেরে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা সাইট ইঞ্জিনিয়ার পালিয়ে যান।

দায়িত্বশীল আর কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। আমরা প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। ঘটনাস্থলে মালিক পক্ষের কাউকে না পাওয়ায় আমরা মামলা বা জরিমানা করতে পারিনি। তবে, আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। এই পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা হবে।

এসএস/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page