২০ বছর ঘুরেফিরে পূর্ব রেলে আনোয়ার, খুঁটির জোর কোথায়?


নিজস্ব প্রতিবেদক ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ২:৩৩ : পূর্বাহ্ণ

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রভাবশালী প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নিজস্ব বলয় তৈরি করে দেড় যুগেরও বেশি সময় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে আধিপত্য কায়েম করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে এই কর্মকর্তা।

সর্বশেষ ২০২০ সালের অডিট আপত্তিতেও উঠে আসে তার দুর্নীতির নানা চিত্র। ওই সময় তিনি ছিলেন পাহাড়তলীতে অবস্থিত রেলওয়ে সরঞ্জাম অফিসের (সিসিএস) এর সহকারী নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা হিসেবে। তখন দূর্নীতির দায়ে তিনি দুদকের মামলার আসামিও হন। এরপরও শাস্তির বদলে সহকারী নিয়ন্ত্রক থেকে তিনি পদোন্নতি পান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (পূর্ব-সিওএস) সিআরবি পদে।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, সরকারি নিয়ম রক্ষায় বদলির প্রয়োজন পড়লে আনোয়ারকে কখনো সিআরবিতে, কখনোও পাহাড়তলীতে নামমাত্র বদলি করা হয়। সবমিলিয়ে জোর তদবির চালিয়ে বছরের পর বছর ধরে ঘুরেফিরে পূর্ব রেলেই আছেন তিনি। এমনকি সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক থেকে সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (পূর্ব-সিআরবি) পদে পদোন্নতি পাওয়ার পরও চট্টগ্রামের বাইরে বদলি হতে হয়নি তাকে। নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ ও ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে তার।

জানা গেছে, ডিরেক্টর অব ইনভেন্টরি কন্ট্রোল (ডিআইসি) প্রধান তিনি। এবং সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক সিআরবি’র একটি অংশ প্রকৌশলী আনোয়ারের হাতেই জিম্মি। এ দুটি দপ্তরের সব কিছু ক্রয়ের ক্ষমতাও রয়েছে তার। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি ঠিকাদারদের যোগসাজশে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।

রেলওয়ে সূত্র আরও জানায়, সম্প্রতি প্রায় এক কোটি টাকার পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানার ১০০ এমজি (মিটারগেজ) প্যাসেঞ্জার কোচ মেরামতের জন্য ই-জিপিতে ৭৫০টি এসএস সিট ক্রয়ের টেন্ডার কারসাজিরও অভিযোগ রয়েছে ডিরেক্টর ইনভেন্ট্রি কন্ট্রোলের (ডিআইসি) প্রধান কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ও তার সহযোগী ডিস্ট্রিক্ট কন্ট্রোলার অব স্টোর্স (জেনারেল) আসিফ উল ইসলামের বিরুদ্ধে।

এই টেন্ডার কারসাজি নিয়ে দুদকে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার ও সরবরাহকারীরা। যা তদন্ত শুরু করেছে দুদকের একটি টিম। ফলে এই কারসাজি আড়াল করতে অভিজ্ঞতার ধোঁয়া তুলে টেন্ডারটি পুনরায় রি-টেন্ডার করছে এই আনোয়ার।

আরও জানা গেছে, চট্টগ্রামে নামে-বেনামে ৫/৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই প্রকৌশলীর। তার শ্যালক রেলওয়ের ক্রয় বিভাগের অফিস সহকারী হৃদয়কে দিয়ে এসব ব্যবসা পরিচালনা করেন তিনি। হৃদয়ের মাধ্যমেই তার অনিয়ম-দুর্নীতির লেনদেন হয়। হৃদয় খালাসি পদে রেলে চাকরি পেলেও আনোয়ারের শ্যালক হওয়ায় তিনি রাতারাতি ক্রয় বিভাগের অফিস সহকারী হয়েছেন।

নাম প্রকাশেঅনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী ও সিআরবিতে সাপ্লাই-সরবরাহ ও কেনাকাটার সব কিছু আনোয়ারের দায়িত্বে। যার কারণে পছন্দের ঠিকাদারকে ক্রয় ও সরবরাহের কাজ দিয়ে বিনিময়ে হাতাচ্ছেন মোটা অংকের কমিশন।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ডিরেক্টর অব ইনভেন্টরি কন্ট্রোল (ডিআইসি) কাজ করে এমন একটি ফার্মের সঙ্গেও আনোয়ারের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। অনলাইন টেন্ডার ও কেনাকাটায় দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী এই প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগ রয়েছে, প্রকৌশলী আনোয়ারের কমিশন বাণিজ্যের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করেন তার অত্যান্ত আপনজন জিয়া। তার মাধ্যমেই করেন অবৈধ লেনদেন।

এসব অনিয়ম-দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যের বিষয়ে প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলামের প্রথমে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

অন্যদিকে ২০২০ সালে অডিট অধিদপ্তরের এক আপত্তিতে বলা হয়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক রুহুল কাদের আজাদ ও সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক বেলাল হোসেন সরকার, সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক আনোয়ারুল ইসলাম (বর্তমানে সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (পূর্ব- সিআরবি) এমদাদুর রহমান, প্রকৌশলী মারুফ, ইলেকট্রনিক প্রকৌশলী সাকের আহমেদসহ যোগসাজশে পূর্ব রেলের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন মেশিনারিজ মালপত্র বাজারদরের চেয়ে বেশি দাম দেখিয়ে লুট করেছেন কোটি কোটি টাকা।

অডিট রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পূর্ব রেলের কোচের এসি মেরামতের জন্য বিভিন্ন মালপত্র কেনা হয়। এক্ষেত্রেও প্রকৃত বাজারদরের চেয়ে বেশি দাম নেয় তারা। এছাড়া, বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে প্রকৃত বাজারদরের চেয়ে দ্বিগুণ দামে। এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে লাখ লাখ টাকা।

প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে তাদের পছন্দের ঠিকাদার দিয়েও নামে-বেনামে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। দীর্ঘদিন এমন কাণ্ড করতে থাকলেও নীরব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

এদিকে প্রকৌশলী আনোয়ারের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে দুদকের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তথ্যসূত্রে আরও জানা যায়, প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলাম আগের চেয়েও দূর্নীতিতে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। দুই দপ্তরের কেনাকাটায় তিনি একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন। এছাড়া রেলের আরএনবিসহ একাধিক দপ্তরের কেনাকাটা কমিটির আহ্বায়ক হওয়ার সুবাধে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

প্রকৌশলী আনোয়ারের আরও ফিরিস্তি দ্বিতীয় পর্বে দেখুন…।

সকালের-সময়/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page