স্টেশন রোডে ভেজাল মদের রমরমা ব্যবসা, মা-ছেলে অধরা!


মোহাম্মদ ফোরকান  ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২:৫২ : পূর্বাহ্ণ

মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে প্রশাসনের অভিযানে চুনোপুটিরা হয় গ্রেপ্তার, কিছুটা সাজা তাদেরই মেলে। কিন্তু চোলাইমদের যে অবৈধ ব্যবসা এখন বন্দর নগরী চট্টগ্রামজুড়ে ছেয়ে গেছে, তার মূল হোতাদের নাগাল কখনোই পাওয়া যায় না। তারা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্থানীয় সন্ত্রাসী ও কিছু পাতি নেতা তাদের ছায়া দিয়ে যান টাকার বিনিময়ে।

শেলী চক্রবর্ত্তী ও বিজয় চক্রবর্ত্তী (শাওন) তারা মা-ছেলে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আবার কিছু কথিত সাংবাদিকদের সঙ্গে যাদের উঠাবসা। কখনও জাতীয় পার্টি, কখনও সংস্কৃতিকর্মী কখনও ক্রীড়া সংগঠক। বছরের পর বছর তাদের নেতৃত্বেই স্টেশন রোড এলাকাই চলছে ভেজাল চোলাই মদের রমরমা ব্যবসা।

সম্প্রতি (২৩ ডিসেম্বর ২০২১ ) মধ্যরাতে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন স্টেশন রোড বাগদাদ গলির পিছন থেকে অভিযান চালিয়ে শেলী চক্রবর্তী ও বিজয় চক্রবর্ত্তীর দাবী করা মদের মহাল থেকে ১৮৪ লিটার লিটার ছোলাই মদ জব্দ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)।

র‍্যাবের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে আটক করা হয় ৩১ জন মাদকসেবিকে। এ নিয়ে তখন র‍্যাব বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করে। যার নম্বর–৩৮, ২৩/১২/২০২১ ইং, ধারা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬(১) এর ২৪( গ)। এর পরও ধরা ছোয়ার বাহিরে রয়ে গেছে মা-ছেলে ও তাদের সিন্ডিকেট।

জানা গেছে– ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩১ জনকে জেল- জরিমানার সাজা দেওয়া হয়েছে। এখানে মাদক সেবনের অনুমতি নেই এমন ৩১ ব্যক্তি সাজা পেলেও দেশি ভেজাল মদের বিক্রেতা শেলী চক্রবর্ত্তী ও বিজয় চক্রবর্ত্তী (শাওন) ও অমিত চক্রবর্ত্তী ও তাদের সিন্ডিকেট বরাবরের মতোই রয়ে গেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে! হারু বাবুর স্ত্রী অনিতা দাশ গুপ্তা ও তপন চক্রবর্ত্তীর যৌথ মালিকানাধীন লাইসেন্সকে নিজেদের ৯০% দাবী করে মদের ব্যবসা করে আসলেও এই লাইসেন্সের আড়ালেই রয়েছে অনেক বড় রহস্য?

সরেজমিন দেখা যায়, তপন চক্রবর্ত্তী ও অনিতা দাশ গুপ্তার নামে স্টেশন রোড এলাকার ৩/এ বাগদাদ হোটেলকে মদের মহালের লাইসেন্সের ঠিকানা উল্লেখ করা হলেও মদের মহালটি আসলে গড়ে তোলা হয়েছে রেলের জায়গা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে। সেখানেই দিন-রাত চলছে ভেজাল দেশী মদের রমরমা ব্যবসা।

প্রথম পর্ব পড়ুন:  চট্টগ্রাম স্টেশন রোডে দেশি ভেজাল মদের রমরমা বাণিজ্য–নিরব কর্তৃপক্ষ!

জানা যায়, বছরের পর বছর মূলত এই মদের মহালের আড়ালেই চলে ইয়াবা, গাজা ও ভেজাল চোলাই মদের ব্যবসা। শুরুতে ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে এলাকার প্রভাবশালী, কিছু পাতি নেতা ও একশ্রেণীর যুবক ও মধ্যবয়স্ক শ্রেণীদের ৫ থেকে ৮ লিটার পর্যন্ত মদ বিনামূল্যে দেওয়া হতো। বিনামূল্যে পাওয়া মদের কিছুটা নিজেরা সেবন করতো, বাকি মদ অন্যজনের কাছে বিক্রি করে দিতো। এভাবে পুরো স্টেশন রোড এলাকায় এই ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে।

এ ব্যাপারে মদের মহালের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকালের-সময়কে বলেন, অবৈধ চোলাইমদের ব্যবসাকে নির্বিঘ্ন রাখতে শেলী ও তার ছেলেরা স্থানীয় প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ রাখা ছাড়াও রাজনৈতিক প্রভাবশালী, কিছু কথিত সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেছেন উদার হাতে টাকা ছিটিয়ে। এভাবে তাদের চোলাইমদের অবৈধ ব্যবসা ও মাদক ব্যবসা এখন নগরজুড়ে ছেয়ে গেছে।

জানা গেছে, প্রয়াত তপন চক্রবর্ত্তীর রাজনৈতিক সুবাদে জাতীয় পার্টির কিছু কথিত নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা রয়েছে তপনের পরিবারের সাথে। এই ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ সময় তারা প্রভাব কাটিয়ে এই মাদক ব্যবসা করে আসছে। তারা জাতীয় পার্টির গুটিকয়েক পাতি নেতাদের সখ্যতার পাশাপাশি দেশ বিরোধী–সমাজ বিরোধীদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, মা-ছেলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এই ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও গুন্ডাদের হাত করে। আবার লোকদেখানো বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মোটা অংকের টাকা চাঁদাও দেন। আবার সেলিব্রিটি সাজতে বিশাল অংকের টাকা দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের ক্রেস্টও উপহার নেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাদক ব্যবসায়ী শেলী ও তার ছেলে শাওন বিভিন্ন প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় মা-ছেলে খুবেই বেপরোয়া।

এ বিষয়ে জানার জন্য শেলী চক্রবর্ত্তীর মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেনি।

আরও জানা যায়, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ার পাশাপাশি প্রশাসনের নীরবতায় মা-ছেলে পুরো এলাকাকে মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এবং তাদের অবৈধ মাদকের আখড়া উচ্ছেদের ব্যপারে বখতিয়ার নামক এক রেলের কর্মচারীও অভিযোগ দিয়েছেন খোদ পূর্ব রেলের স্টেট বিভাগকে।

এ বিষয়ে পূর্ব রেলের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মাহবুব করিম সকালের-সময়কে বলেন, আমাদের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত আছে। ধাপে ধাপে দখল হওয়া রেলের সব জায়গা উদ্ধার করব। রেলের জায়গায় কোন অবৈধ স্থাপনা থাকতে দিব না, সেই যেই হোক।

আর এদিকে ‘চট্টগ্রাম স্টেশন রোডে দেশি ভেজাল মদের রমরমা বাণিজ্য–নিরব কর্তৃপক্ষ!’ শিরোনামে (প্রথম পর্বে) মা-ছেলের রমরমা মাদকের বিরুদ্ধে নিউজ করায় সকালের-সময় ডটকমের প্রকাশক ও সম্পাদককে প্রতিনিয়ত প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এই ব্যাপারে হামলার উদ্দেশ্য চেরাগি পাহাড় আজাদী গলিতে জড়ো হয়েছিলেন মা-ছেলের গুন্ডা বাহিনী।

আবার তাদের অপকর্ম ঢাকতে প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হামলা-মামলার চক তৈরি করে রেখেছে বলে দ্বীর্ঘ সূত্রে জানা যায়। এই বিষয়ে কিছু কথিত সাংবাদিক ও জাতীয় পার্টির এক পাতি নেতাকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন।

এ বিষয়ে সকালের-সময় ডটকমের পক্ষ থেকে সকল প্রকার আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করার প্রস্তুতি চলছে…।

প্রিয় পাঠক–তৃতীয় পর্বে তাদের আরও কুকীর্তির খবর আসছে, সাথে থাকুন…ধন্যবাদ।

এসএস/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ