সংকটে গতিহীন চট্টগ্রাম কাস্টমস–রাজস্ব আদায়ে ধীরগতি!


মোহাম্মদ ফোরকান  ৩ এপ্রিল, ২০২৩ ৩:১০ : পূর্বাহ্ণ

দেশের আমদানি-রপ্তানি থেকে শুরু করে সরকারের রাজস্ব আয়ের বড় অংশ আসে চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকে। রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার যোগান দিয়েছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ আর্থিক সংস্থাটি। তবে সংকট যেন পিছুই ছাড়ছে না তাদের। জনবল সংকট, বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব, আ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম সার্ভারে সমস্যা, অবকাঠামো সংকট এবং রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জামের অভাবে ধুকছে প্রতিষ্ঠানটি।

এসব সংকটে কাস্টমসের শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় বাড়ছে ধীরগতি। ফলে পণ্য খালাসে দেরি হওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে আমদানিকারকদের। এতে করে বিপাকে পড়ছে ব্যবসায়ীরা। সর্বোপরি বন্দরে তৈরী হচ্ছে স্থবিরতা, ব্যাহত হচ্ছে রাজস্ব আদায়।

চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে জাহাজজট নেই। তবে চট্টগ্রাম কাস্টমসে বিভিন্ন জটিলতায় বন্দরের রাজস্ব আদায়ে ধীরগতির ফলে স্থবির হয়ে পড়ছে পণ্য খালাস কার্যক্রম। কাস্টমসের ধীরগতির ফলে গতি হারাচ্ছে বন্দরের কার্যক্রম।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টমস। জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের বৃহৎ এ প্রতিষ্ঠান। আমদানি কম হওয়ার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হয়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসে ২০২২–২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার হাজার ৪৮২ কোটি টাকা, আগস্টে পাঁচ হাজার ৬৬১ কোটি, সেপ্টেম্বরে ছয় হাজার ৫৫৭ কোটি, অক্টোবরে ছয় হাজার ৫৫৭ কোটি, নভেম্বরে ছয় হাজার ৬০৪ কোটি, ডিসেম্বরে ছয় হাজার ৬০৪ কোটি টাকা, জানুয়ারিতে ছয় হাজার ৬৫২ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ হাজার ৭৫৫ কোটি।

এছাড়া মার্চ মাসে ছয় হাজার ৮৪০ কোটি টাকা, এপ্রিলে ছয় হাজার ৮৪০ কোটি টাকা, মে মাসে চার হাজার ৭১৭ কোটি টাকা ও জুন মাসে ছয় হাজার ৮৪০ কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৯ হাজার ২২০ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

একই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ হাজার ৭৪৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা কম। তবে গত ২০২১–২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায়ে ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছে কাস্টমস।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ডলার সংকটের কারণে বিলাসীপণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করছে সরকার। যারা আমদানি করেছেন, তারাও শতভাগ মার্জিনে এলসি খুলেছেন। আবার অন্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতেও শৈথিল্য ছিল।

তিনি আরও বলেন, এলসি যেমন কম হয়েছে, সে অনুপাতে আমদানিও কমেছে। আমদানিতে রাজস্ব আদায়ের কিছুটা স্থবিরতা বিরাজ করছে। তাছাড়া গত দুই-তিনমাস ধরে উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানি কমেছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণে শুল্ক হার বাড়ানো হয়েছে।

বিষটি জানার জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার মো. ফাইজুর রহমানের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল দেওয়া হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ