শিক্ষকের চরণধূলি নিলেন ড. হাছান মাহমুদ!


সকালের-সময় রিপোর্ট ১১ আগস্ট, ২০১৯ ৩:০৮ : পূর্বাহ্ণ

ইতিহাস বলে, যুগে যুগে অতি অত্যাচারী শাসকও নত শিরে গুরুর সামনে দাঁড়িয়েছেন। গুরুকে অসম্মানের ধৃষ্টতা কেউ দেখাননি। চাণক্য শ্লোকে আছে, এক অক্ষরদাতা গুরুকেও গুরু বলিয়া মান্য করিবে। এক অক্ষরদাতা গুরুকে যে গুরু বলিয়া মান্য করে না, সে শতবার কুকুরের যোনীতে জন্মগ্রহণ করে চণ্ডালত্ব লাভ করিবে। শিক্ষকের মর্যাদা’ শুধু কবিতামালায় নয়, বাস্তবেই শিক্ষকের চরণধূলি নিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি।

চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাইস্কুলের ছাত্র থাকাকালীন তিনি পেয়েছিলেন ইংরেজির শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাকের সান্নিধ্য। প্রিয় শিক্ষকের পাঠদানে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকতো শিক্ষার্থীরা। সেসব স্মৃতি আজও ভুলেননি তিনি। শুক্রবার (৯ আগস্ট) সকালে বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার বাসায় দেখতে গিয়ে প্রবীণ শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাকের পা ছুঁয়ে সালাম করেন তথ্যমন্ত্রী। প্রিয় ছাত্রকে কাছে পেয়ে তাই চোখের জল আটকাতে পারেননি মোহাম্মদ ইসহাক।

তথ্যমন্ত্রীর মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করেন শিক্ষক মো. ইসহাক। আলাপচারিতায় ড. হাছান মাহমুদের কাছে তিনি জানতে চান, তার ছেলেমেয়ে ক’জন? মন্ত্রী বলেন, ‘আমার এক ছেলে, দুই মেয়ে। ছেলে পড়ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে। এক মেয়ে এ-লেভেলে পড়ছে আর…।’ শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাক তথ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে কথা টেনে নিয়ে বললেন, চট্টগ্রামে মুসলিম হাইস্কুল, কলেজিয়েট ও খাস্তগীর সবচেয়ে ভালো স্কুল। দেশের সরকারি প্রাইমারী স্কুলগুলোও ভালো।

এসময় তথ্যমন্ত্রী বলেন, মুসলিম হাইস্কুলে এখন পড়ালেখার মান কেমন? শিক্ষকের উত্তর, খুব ভালো। প্রথম, ২য়, ৩য়-এর মধ্যেই থাকে। পাসের হার শতভাগ বলা যায়।

তিনি বলেন, তথ্যমন্ত্রীকে আগামীতে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। একজন ডক্টর আরেকজন ডক্টরের মূল্য বুঝে। ডা. দীপু মনি এখন শিক্ষামন্ত্রী। তবে তিনি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ভালো করছেন। আর আমার প্রিয় সাংবাদিক হলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম। তথ্যমন্ত্রী তাকে বলেন, স্যার আগে সাইকেল চালাতেন, এখনও চালান? শিক্ষকের জবাব আসে, অনেকদিন ধরে চালাই না।

মোহাম্মদ ইসহাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করার পর বৈরুতে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে একই বিষয়ে এমএ ডিগ্রি নেন। এরপর যুক্ত হন শিক্ষকতায়। তিনি ১৯৬৫ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত মুসলিম হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন, ছিলেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকও।

তথ্যমন্ত্রী তার সফরসঙ্গীদের বলেন, স্যারের যোগ্যতা এত বেশি যে, শিক্ষকতায় না এলে তিনি পাকিস্তানের সচিব হতেন। আশি বছরের মোহাম্মদ ইসহাক প্রত্যুত্তরে বলেন, আমি তো সেখানে যাবো না বলে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম।

চট্টগ্রাম মুসলিম হাইস্কুল থেকে ১৯৭৮ সালে এসএসসি পাস করেন ড. হাছান মাহমুদ। তিনি নিজেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন।

স্মৃতি রোমন্থন করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, স্কুল জীবনে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় স্যার একবার আমার বাবাকে অভিযোগ দিয়ে বলেছিলেন- আমি পড়ালেখার চেয়ে রাজনীতি নিয়ে ঘুরছি বেশি। এরপর বাবা আমাকে প্রচণ্ড পিটিয়েছিলেন। ইসহাক স্যার সেসময়ে বাইসাইকেল নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতেন। স্যারের মতো গুণী শিক্ষকরা তাদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশে আলোকিত মানবসম্পদ সৃষ্টিতে অসামান্য অবদান রেখেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page