রেলের জায়গা দখল করে কেএসআরএমের রাস্তা নির্মাণ!


নিজস্ব প্রতিবেদক ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ ৫:২৪ : অপরাহ্ণ

কৃষি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিক কাজ, জায়গা দখল, রেললাইনে ল্যাম্পপোস্ট, পুকুরে পাম্প হাউস বসানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বিতর্কিত শিল্প গ্রুপ কেএসআরএম। এবার রেলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড এলাকায় রেললাইন ঘেঁষে রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেছে গ্রুপটি। প্রায় এক মাস ধরে রাস্তা নির্মাণের কাজ করলেও জানত না রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তদারকির দায়িত্বে থাকা ভূমি বিভাগ।

তবে—চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সরেজমিন গিয়ে পরিদর্শন করে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে রেলের জায়গা থেকে মাটি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। রেলওয়ে ভূমি বিভাগকে জায়গা পরিমাপ এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে টহলের নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের সাবেক আনোয়ারা জুট মিলটি কিনে নেয় কেএসআরএম। সেখানে রডের কারখানা গড়ে তোলে। রেল থেকে কৃষি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি দেয়াল দিয়ে দখলে নেয়। সম্প্রতি রেললাইনে পূর্ব পাশে কারখানার স্ক্র্যাপ ডিপোতে যাতায়াতের জন্য রেলের জায়গায় রাস্তা নির্মাণ শুরু করে। গত বুধবার নিয়মিত টহলে গিয়ে বিষয়টি দেখতে পান ডিআরএম।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিআরএম আবিদুর রহমান বলেন, গত বুধবার পরিদর্শনে গিয়ে দেখি, রেললাইন ঘেঁষে রাস্তা নির্মাণ করছে কিছু শ্রমিক। রাস্তাটি কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড (কেএসআরএম) নির্মাণ করছে বলে জানায় তারা। এ সময় জায়গার দলিলপত্র দেখতে চাইলে তারা কিছুই দেখাতে পারেনি। তাই তাৎক্ষণিক নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। রাস্তার জন্য রাখা মাটি সরিয়ে নিতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল লাইন ও কক্সবাজারের সঙ্গে রেল যোগাযোগ শুরু হলে ওই জায়গায় রেললাইন নির্মাণ করতে হবে। এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কেএসআরএম গ্রুপ অনুমতি ছাড়া রাস্তা নির্মাণ করছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম জানান, জায়গা পরিমাপের জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। রেলের জায়গায় রাস্তা নির্মাণ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পরিদর্শক মো. রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ডিআরএম স্যারের নির্দেশে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকায় টহল দল কাজ করছে। গত বৃহস্পতিবার রাস্তা নির্মাণের কাজ বন্ধ ছিল। রেলের জায়গায় রাস্তার কাজ করতে কেউ এলেই আটক করা হবে।

এদিকে রেলওয়ের বিভাগীয় ভূমি শাখার মাঠকর্মীদের অবহেলার কারণেই বাববার কেএসআরএম রেলের জায়গা দখল করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে আমিন ও কানুনগোর যোগসাজশে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। নিয়মিত পরিদর্শন করলে জায়গা দখলের মতো ঘটনা ঘটত না।

রেলের জায়গায় রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে জানতে কেএসআরএম গ্রুপের ভূমি বিভাগের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কামাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে প্রতিবেদকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

রেল কর্মকর্তারা বলছেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন চালু, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে হাইস্পিড ট্রেন চালুর পরিকল্পনা করছে সরকার। এতে আরও একাধিক লাইন নির্মাণ হবে। ফলে রেললাইনের আশপাশের জায়গা দখলমুক্ত রাখতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

রেলের প্রয়োজনে কৃষি ও বাণিজ্যিক লিজ দিয়েছিল। লিজের শর্ত ভঙ্গ করলে তা বাতিলের বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে বর্তমানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো ছাড় দিচ্ছে না। কেবল কেএসআরএম গ্রুপের বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে। এর আগেও দখলে নেওয়া জায়গা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েও তা স্থগিত করেছিল।

সূত্র—এএস/এসএস/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page