যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির পরিবর্তে বহুল আলোচিত চট্টগ্রামের সেই মিনু আক্তারের কারাভোগ ও পরবর্তীতে কারামুক্তির পর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দুটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১ সেপ্টেম্বর ওই দুই মামলার নথিসহ (সিডি) তাদের হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ওইদিন পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ আদেশ দেন। চট্টগ্রামের একটি হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীর পরিবর্তে নিরীহ মিনুর কারাগারে বন্দি থাকাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট মামলায় এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। অপরপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ড. মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী ও অ্যাডভোকেট সগির হোসেন লিওন।
এ দিকে মিনুর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
এর আগে গত ২৮ জুন হাইকোর্ট দেশের সব কারাগারে প্রকৃত আসামি শনাক্তে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও আইরিশ স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক ডাটা পদ্ধতি চালু করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব (লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ) ও কারা মহাপরিদর্শককে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামে পোশাক কারখানার কর্মী কোহিনুর বেগম হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীর পরিবর্তে ২০১৮ সালের ১২ জুন চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন মিনু। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রায় তিন বছর পর বিষয়টি গত ১৮ মার্চ চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। ২২ মার্চ কারাগার থেকে মিনুকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়।
মিনু হাজির হয়ে পুরো ঘটনা আদালতকে জানান। এরপর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য একটি নথি গত ২৩ মার্চ চট্টগ্রাম আদালত থেকে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এ অবস্থায় গত ৩১ মার্চ বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
এ আবেদনে গত ৭ জুন মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশে ১৬ জুন কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু। কিন্তু এর কয়েকদিন পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় মিনু মারা যান। এ ঘটনায় ২৯ জুন একটি অপমৃত্যু মামলা হয় চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানায়। এই মামলা তদন্ত করছেন উপপরিদর্শক (এসআই) খোরশেদ আলম।
ওদিকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি কুলসুমী আক্তার, তার সহযোগী মর্জিনা আক্তার ও কাওয়ালকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। নিজের পরিবর্তে মিনুকে কারাগারে পাঠানো, আদালতের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে কুলসুমীসহ অপরাপর আসামির বিরুদ্ধে পুলিশ পৃথক একটি মামলা করে। এই মামলা তদন্ত করছেন এসআই মো. জুবায়ের মৃধা।
এ অবস্থায় ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া মামলা সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রামের তিন আইনজীবী ও একজন সহকারীকে ওইদিন আদালতে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এসএস
