নগর যুবলীগ নেতা টিনু যার নেই কোনো পদ পদবি। কিন্তু দাপিয়ে বেড়ান যুবলীগ নেতা পরিচয়ে। তাঁর রয়েছে নিজস্ব গ্রুপ ও কিশোর গ্যাং। চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ, চকবাজার, বাকলিয়া ও কালুরঘাট এলাকায় রয়েছে তার আধিপত্য। এই আধিপত্যকে কেন্দ্র করে টিনু এখন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার, গত রোববার রাতে নগরের কাপাসগোলার বাসায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, গুলিসহ টিনুকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। অভিযানে একটি পিস্তল ও শটগান এবং ৭২টি গুলি উদ্ধার হয়। গ্রেপ্তার করা হয় তাঁর সহযোগী জসিম উদ্দিনকেও। এ ঘটনায় র্যাব মামলা করেছে। টিনুর গ্রেপ্তারে চকবাজার, বাকলিয়া এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসে বলে জানা যায়।
র্যাবের দাবি, তাঁর ‘নিয়ন্ত্রণাধীন’ এলাকার ফুটপাত, কোচিং সেন্টার, শপিং মল ও টমটম (গাড়ি) থেকে সহযোগীদের মাধ্যমে মাসে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
এই চাঁদা কারা আদায় করেন চলুন জানা যাক…
১..নুর মোস্তফা ওরফে টিনু (৩৬), পিতা-মৃত নুর নবী, সাং-এ্যালিগেন্স এপার্টমেন্ট (নিচ তলা), চৌধুরী বাড়ী, নজরুল ইসলাম লেইন, নবাব হোটেলের পাশের গলি, কাপাসগোলা, চকবাজার ওয়ার্ড, থানা-পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম।
টিনুর মামলা সমূহ… মামলা নং-৪৪ (৪) ০৩, এসটি নং-টিআইবি, ২৬৪ (০৩), থানা কোতোয়ালী, জেলা-চট্টগ্রাম। চাঞ্চল্যকর একে ২২ রাইফেল অস্ত্র মামলা, ধারা অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) চ। মামলা নং-১৪ (০২) ১২, থানা-পাঁচলাইশ, জেলা-চট্টগ্রাম। ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইন এর ৩ (এ), মামলা নং-৩ (৪) ১৬, থানা-চকবাজার, জেলা-চট্টগ্রাম। চাঁদাবাজী ভাঙচুর ও হত্যা চেষ্টা মামলা, ধারা-৩০৭/৩৮৫ ও ৫০৬, মামলা নং-৫ (৮) ১৬, থানা চকবাজার, জেলা-চট্টগ্রাম, হত্যার চেষ্টা মামলা। থানা-৩০৭/৩২৬, তালিকাভুক্ত দুধর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনী টিনু গ্রুপের প্রধান। এবং র্যাবের একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে..
২..নুরুল আলম ওরফে শিপু (৩৪) টিনুর আপন ছোট ভাই, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, ডাকাতি ও নাশকতাসহ একাধিক মামলার আসামী এবং ক্রাইম সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রক। নুরুল আলম শিপু চকবাজার থানা ছাত্রদলের সভাপতি। ফলে বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ যারাই ক্ষমতাই আসুক, তিনি সবসময় নিরাপদ থাকেন। সে একাধিক মামলার আসামী হলেও কেবল টিনুর কারণেই তিনি প্রকাশ্যে চলাফেরা করেন।
৩..সাইফুল ইসলাম (৩০), সাং-খালপাড়, থানা-বাকলিয়া, জেলা-চট্টগ্রাম। সম্প্রতি বাকলিয়ায় পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়।
৪..কায়সার হামিদ (৩০), পিতা-শফি চৌধুরী, সাং-বাদশা সওদাগরের বাড়ী, বহদ্দার হাট, বাড়াই পাড়া, থানা-চাঁন্দগাও, চট্টগ্রাম। অস্ত্রধারী ছিনতাই ও চাঁদাবাজীতে সক্রিয় তার নামেও একাদিক মামলা রয়েছে থানায়।
৫..সাদ্দাম হোসেন ওরফে ইভান (২৬), পিতা-জাকির হোসেন, সাং-১১ ভাইয়ের গলি, কাপাসগোলা, থানা-চকবাজার, চট্টগ্রাম। অস্ত্রধারী ছিনতাই ও চাঁদাবাজীতে সক্রিয়।
৬..মোঃ নাছির ওরফে লম্বা নাছির (৩০), পিতা-আব্দুল মালেক, সাং-চাঁদার কলোনী, কালারপোল, থানা-পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ছিনতাই ও চাঁদাবাজীতে সক্রিয়।
৭..সৌরব উদ্দিন ওরফে বাপ্পা (২৫), সাং-কাপাসগোলা, থানা-চকবাজার, চট্টগ্রাম। অস্ত্রধারী ছিনতাই ও চাঁদাবাজীতে সক্রিয়।
৮..রবিউল ইসলাম রাজু (২৭) কুদ্দুস মিয়া, সাং-গুয়াছি বাগান, মেডিকেল রোড, থানা-চকবাজার, জেলা-চট্টগ্রাম। অস্ত্রধারী ছিনতাই ও চাঁদাবাজীতে সক্রিয়। গোয়াছি বাগান, দেব পাহাড়, মেডিকেল স্টাফ কোয়াটারে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি করে বেড়ায়।
৯..শাহাদাত হোসেন ওরফে লেংড়া রিফাত (২৬), পিতা-মোঃ মনছুর আলী, ফ্রুড বিক্রেতা, সাং-আমেনা ম্যানশন (৩য় তলা), বহদ্দার হাট, কাঁচা বাজার, থানা-চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম। বহদ্দারহাট কাচাবাজারে ছিনতাই ও অস্ত্রধারীতে চাঁদাবাজীতে সক্রিয়।
১০..জসিম উদ্দিনি (২৬), পিতা-মৃত নাছির উদ্দিন, সাং-লাকী ফার্মেসী সংলগ্ন, মুন্সি পুকুরের উত্তর পাড়, থানা-পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম। অস্ত্রধারী ছিনতাই ও চাঁদাবাজীতে সক্রিয়।
১১..অনিন্য বৈদ্য ওরফে সানি (২৮), পিতা-সঞ্জিত বৈদ্য, সাং-পুরান চার তলা, থানা-বাকলিয়া, চট্টগ্রাম। অস্ত্রধারী ছিনতাই ও চাঁদাবাজীতে সক্রিয়।
১২..আমির হোসেন (২৭), সাং-মুন্সি পুকুর পাড়, থানা-পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম। অস্ত্রধারী ছিনতাই ও চাঁদাবাজীতে সক্রিয়।
১৩..অভিক দাশ গুপ্ত (২৯), পিতা-চয়ন দাশ গুপ্ত, সাং-কাপাসগোলা, থানা-চকবাজার, চট্টগ্রাম। অস্ত্রধারী ছিনতাই, চাঁদাবাজী ও মাদক ব্যবসায় সক্রিয়।
১৪..নিজাম উদ্দিন ওরফে আহাদ (২৮), সাং-ডিসি রোড, থানা-বাকলিয়া, চট্টগ্রাম। অস্ত্রধারী ছিনতাই, চাঁদাবাজী ও মাদক ব্যবসায় সক্রিয়।
১৫..নাহিদুল ইসলাম ওরফে জাবেদ (৩২), পিতা-আবু তাহের বুলু, সাং-সিদ্দিক ভবনের পাশে, টুপি ওয়ালা পাড়া, কাপাসগোলা, থানা-পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম। অস্ত্রধারী ছিনতাই, চাঁদাবাজী ও মাদক ব্যবসায় সক্রিয়।
১৬.. বিপ্লব দে ওরফে এলজি বিপ্লব (৩৫), সাং-নবাব হোটেলে পাশের গলির শেষে (ভাড়া বাসা)। পাঁচলাইশ থানার অস্ত্র মামলায় ১২ বছরের সাজা প্রাপ্ত, অস্ত্রধারী ছিনতাই, চাঁদাবাজী ও মাদক ব্যবসায় সক্রিয়।
১৭..জুলকাস (২৫), সাং-কাপাসগোলা, থানা-চকবাজার, চট্টগ্রাম। অস্ত্রধারী ছিনতাই, চাঁদাবাজী ও মাদক ব্যবসায় সক্রিয়।
১৮.. ইমন রশিদ সাঈদ (২৪), পিতা-সিদ্দিক আহমদ, সাং-টুপি ওয়ালা পাড়া রোড, কবরস্থানের সামনে, থানা-পাঁচলাইশ, জেলা-চট্টগ্রাম। অস্ত্রধারী ছিনতাই, চাঁদাবাজী ও মাদক ব্যবসায় সক্রিয়।
১৯..নরুন্নবী, চকবাজার এলাকার সকল গার্মেন্টস থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে থাকেন।
এবিষয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, টিনু তাঁর গ্যাং নিয়ে এলকায় চাঁদাবাজি করার বিষয়টি আমি শুনেছি, কিন্তু কেউও এ বিষয়ে অভিযোগ না করায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারিনি।
এই বিষয়ে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) মিমতানুর রহমান বলেন, এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক, গার্মেন্টস ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ছিনতাই, অস্ত্র ব্যবসা ও কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছেন টিনু। কিন্তু তার ভয়ে ভুক্তভোগীরা কেউ মামলা করেন না থানায়।
বি:দ্র: উপরোক্ত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা আছে। খোজ নিলেই তথ্য পাওয়া যাবে।