ভুয়া বিল ভাউচারে কোটি টাকা আত্মসাতের দায় কে নেবে?


নিজস্ব প্রতিবেদক ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১:৫০ : অপরাহ্ণ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ভুয়া বিল-ভাউচারে ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি)। কিন্তু সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টা পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি কমিটি। কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে, সেটিও জানাননি তদন্ত কমিটির প্রধান এবং রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। এমনকি কারা টাকা আত্মসাৎ করেছে, তাদের চিহ্নিত করতে পারেননি তারা।

সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জয়শ্রী মজুমদার রশ্মি গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে আমি কোনও কথা বলতে পারবো না।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাবরক্ষক ও তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব মো. আব্দুল্লাহ আল আসিফ বলেন, তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। আরও সময় লাগবে। এরপর প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

অর্থ আত্মসাতে জড়িত কাউকে শনাক্ত করা গেছে কিনা জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মো. সাইদুর রহমান সরকার বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলমান আছে। প্রতিবেদন পেলে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা যাবে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে আইনি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কসমোপলিটনের নামে ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়। রেলওয়েকে কোনও পণ্য না দিয়ে এত টাকা নিয়ে যাওয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় তখন। আলোচনা-সমালোচনার মুখে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে রেলওয়ে।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মো. সাইদুর রহমান সরকার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ৭ ফেব্রুয়ারি বাজেট ও খরচের হিসাব সমন্বয়কালে দেখা যায়, গত ২৮ ডিসেম্বর মেসার্স দি কসমোপলিটন করপোরেশনের নামে চারটি বিলের অতিরিক্ত ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি সন্দেহজনক বিল পরিশোধ করা হয়েছে। যা গুরুতর আর্থিক অনিয়মের পর্যায়ভুক্ত। ওই বিল পাস ও চেকের মাধ্যমে পরিশোধের সঙ্গে নিম্নবর্ণিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

বরখাস্ত হওয়া সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী হলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাবরক্ষক মামুন হোসেন, মো. আবু নাছের, শিমুল বেগম, সৈয়দ সাইফুর রহমান, অডিটর পবন কুমার পালিত, জুনিয়র অডিটর ইকবাল মো. রেজাউল করিম ও অফিস সহায়ক মাকসুদুর রহমান।

পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে ৮ ফেব্রুয়ারি চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জয়শ্রী মজুমদার রশ্মিকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। এছাড়া হিসাবরক্ষক আব্দুল্লাহ আল আসিফকে সদস্যসচিব, সুগ্রীব চাকমা ও মো. জহিরুল ইসলামকে সদস্য করা হয়। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।

একইসঙ্গে কমিটিকে বলা হয়েছিল, কসমোপলিটন করপোরেশনকে পরিশোধ করা বিলটি জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করা প্রয়োজন। কীভাবে বিলটি পাস ও পরিশোধ করা হলো যাচাই-বাছাই করে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে হবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে সুপারিশ করতে হবে।

কোন কাজে বিল নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কসমোপলিটন করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী নাবিল আহসান বলেন, মালামাল সরবরাহ বাবদ প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্য টাকা গত ২৮ ডিসেম্বর চারটি চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

তবে ভুয়া বিল-ভাউচারে পাঁচ নম্বর চেকটি অর্থাৎ ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়। এই চেক কসমোপলিটন করপোরেশনের পক্ষে কেউ গ্রহণ করেননি। ওই চেকের টাকা রেলওেয়ের অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এখানে আমাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।

এসএস/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ