বিশেষ বাহিনীর ‘ভূয়া’ ডিও দেখিয়ে সরকারি চাল লুট


মোহাম্মদ ফোরকান ১৮ মে, ২০২৩ ১২:০৬ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে সরকারের একটি বিশেষ বাহিনীর ‘ভূয়া’ ডিও দেখিয়ে সরকারি চাল লুটের হিরিক পড়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ চোরাই চাল হাতেনাতে আটক করলেও পরে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় কথিত ডিওর পত্র দেখে। তবে অভিযোগ রয়েছে, এসব চাল পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূক কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দকৃত।

যা সংঘবব্ধ সিন্ডিকেট বিক্রি করে দিচ্ছে কালোবাজারে। আর এসব চাল সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে সরাসরি কালোবাজারে নিয়ে যেতে ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারের এই বিশেষ বাহিনীর রেশন বা সংশ্লিষ্ট বরাদ্দের বরাদ্দপত্র।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট ও হালিশহওে অবস্থিত সেন্ট্রাল স্টোরেজ ডিপো-(সিএসডি) থেকে সরকারি চাল বের হওয়ার পর মাঝপথেই চুরি হয়ে যাচ্ছে ডিও’র (ডেলিভারি অর্ডার) আড়ালে। বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ভুয়া ডিও ব্যবহার করে একটি সিন্ডিকেট বেপরোয়াভাবে সরকারি চাল আত্মসাৎ করছে দীর্ঘদিন ধরে। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ভুয়া ডিও’র ফটোকপি দেখিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করে সরকারি গুদামের চাল পাচার করছে তারা।

আবার সিএসডির কর্মকর্তাদের অন্ধকারে রেখে চক্রটি কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ম্যানেজ করে সরকারি চাল লুটপাট করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে মাঝপথে সিএসডি থেকে দেওয়া ভি-ইনভয়েস (চালান) হয়ে যাচ্ছে ডিও’র কাগজ। এসব লুটপাটে বিভিন্ন উপজেলার খাদ্য গুদামের (এলএসডি) কতিপয় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা। হালিশহর সিএসডি থেকে চট্টমেট্রো-ট ০২-০৫৮২ নম্বরের একটি ট্রাক বের হয়। কিছুক্ষণ পর বের হয় ঢাকা মেট্রো-ট ১৬-৩০৮০ নম্বরের চালবাহী ট্রাকটি। খানিক পর বের হয় আরেকটি চালবাহী ট্রাক। যার নম্বর চট্টমেট্রো-ট ১১-০৯৮১। এ ছাড়াও বের হয় চালবাহী ট্রাক কুষ্টিয়া ট-১১-০৫৫৩ ও ঢাকামেট্রো-ট ১৪-৯৬২৪।

এই প্রতিবেদকের কাছে তথ্য ছিল সিএসডি থেকে নিয়মানুযায়ী চালের ট্রাকগুলো বের হওয়ার পর নির্দিষ্ট গন্তব্যে বা সরকারি লোকাল স্টোরেজ ডিপোতে যাবে না। পুরো চালানই আত্মসাৎ বা অন্যত্র পাচার করবে চক্রটি। রাত সাড়ে ৯টার পর ঢাকা মেট্রো-ট ১৬-৩০৮০ ও চট্টমেট্রো-ট ০২-৫৮২ ট্রাক দুটিকে অনুসরণ করেন প্রতিবেদক।

ট্রাক দুটি হালিশহর থেকে বের হয়ে সোজা চাল নিয়ে চলতে থাকে পোর্ট কানেক্টিং রোড হয়ে সিটি গেটের দিকে। সিটি গেট পার হয়ে আকবর শাহ থানার পাক্কা রাস্তা মাথা এলাকায় পৌঁছার পর রাস্তার বাম পাশে দাঁড়ায়। মাঝ বয়সি একজন লোক ট্রাক দুটির চালকের কাছ থেকে সিএসডি থেকে দেওয়া ভি-ইনভয়েসগুলো (চালান) নিয়ে নিতে দেখা যায়। ট্রাক চালক দুজনকে একটি করে কাগজের ফাইল দিতে দেখা যায়।

এরপর ট্রাক দুটি আবার চলতে শুরু করে। বায়েজিদ লিঙ্ক রোডের মাথায় যাওয়ার পর ডানে মোড় নেয়। আবার নগরীর দিকে আসতে শুরু করে। রাত ১১টা ২৭ মিনিটে কর্ণফুলী ব্রিজ পার হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবজার মহাসড়ক ধরে পটিয়ার দিকে যেতে থাকে। পরে পটিয়া থানা পুলিশ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাত ১২টার দিকে কচুয়াই ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আটক করে। পটিয়া থানার এসআই জয়ন্তের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঢাকা-ট-১৬-৩০৮০ ট্রাকটি জব্দ করে।

ট্রাকের চালক কলিম উল্লাহ বলেন, সরকারি চালগুলো খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে যাওয়ার কথা থাকলেও ওখানে যাবে না। কারণ এ চাল ফারুক নামে এক চাল ব্যবসায়ী লোহাগাড়ার পদুয়ার এক চাল ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ওখানে যাবে চালগুলো। রাত ৩টায় পটিয়া থানায় চালবাহী ট্রাক ছাড়াতে আসেন ওমর ফারুক নামে পাহাড়তলী বাজারের চাল ব্যবসায়ী। তিনি ভুয়া ডিও’র কাগজ দেখিয়ে ট্রাকটি ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে অদৃশ্য কারণে বুধবার সকালে পটিয়া থানা পুলিশ ট্রাকটি ছেড়ে দেয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে পটিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার বলেন, ‘ডিও’র কাগজ দেখে ট্রাকটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন বলেন, সরকারি ডিও ব্যবহার করে লোকাল সিএসডির চাল পাচার বা আত্মসাৎ করা হচ্ছে এ বিষয়ে তিনি অবগত নন। কেউ এ ধরনের অনিয়মে জড়িত থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সকালের-সময় ডটকম

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page