চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এখন অপরাধের স্বর্গরাজ্য। এই এলাকায় অনেকটা প্রকাশ্যেই বিক্রি হয় ইয়াবা। মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল, জুয়া খেলা, পতিতাবৃত্তি থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড এখানে অবাধে পরিচালিত হয়। ফেনসিডিলকে পিছনে ঠেলে বাংলাদেশের নেশার জগতে এক ভয়াবহ উন্মাদনা এনেছে ইয়াবা। মাদক সেবনের মূল ভূমিকায় সচ্ছল ঘরের শিক্ষার্থী, তরুণ, যুবক ও মধ্যবয়সীরা জড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা নেশায়।
মোবাইল ফোন ভিত্তিক সুলভ বাজারজাতকরণ, হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা, নারী ও শিশু শ্রম কেন্দ্রিক বিতরণ ব্যবস্থায় ইয়াবার আগ্রাসন যেন বাকলিয়ার সর্বত্র। ছিনতাইও যেন নিত্য ঘটনা। জুয়ার আসরসহ চলে নানা অপরাধ। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের কিছু সদস্যের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এ এলাকায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে অপরাধী চক্রগুলো। তাই স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করলেও কার্যত থামানো যাচ্ছে না অপরাধী চক্রের সদস্যদের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাকলিয়াজুড়ে অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ করে ডন রুবেল ও ওবায়েদ, নিয়ন্ত্রণ করছে মাদক সিন্ডিকেট এবং তাদের রয়েছে বড় সন্ত্রাসী গ্রুপ, তাদের এনেহ কর্মকাণ্ডে অতিষ্ট বাকলিয়াবাসী। কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে বাকলিয়ার মাদক সিন্ডিকেটের প্রধান সৈয়দ আহমেদ রুবেল ওরফে ডন (রুবেল) ও সহযোগী এসএম ওবায়দুল ওরফে ওবায়েদ।
তাদের নেতৃত্বে বাকলিয়া এলাকায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মরণঘাতী ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। গ্রেফতার হলেও সুকৌশলে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো জড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা ব্যবসায়। বাকলিয়ার সকল ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ডন রুবেল ও সহযোগী ওবায়েদ।
ইয়াবা ব্যবসা করতে গিয়ে তারা একাধিকবার পুলিশের কাছে ধরা পড়লেও জামিনে বের হয়ে এসে আবারও বিভিন্ন কায়দায় এই ব্যবসা শুরু করে। ইতোমধ্যে বাকলিয়া থেকে যে কজন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে তারা প্রত্যেকেই স্বীকার করেছে যে, ডন রুবেল ও ওবায়েদ তাদের একমাত্র ইয়াবা যোগান দাতা।
এ ব্যাপারে বাকলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন সকালের-সময়কে বলেন বলেন, রুবেল ও ওবায়েদের ব্যাপারে বাকলিয়া থানায় মামলা রয়েছে এবং তা বিচারাধীন, তবে তারা কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছে, চেষ্টা করছি আবারো তাদের গ্রেফতার করতে। এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমি কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি এবং প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। ডন রুবেল ও ওবায়েদ-কে গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, গত ৩১ আগস্ট কালামিয়া বাজার থেকে নুরুল ইসলাম মুন্না (২২) নামে এক যুবককে ইয়াবাসহ আটক করে বাকলিয়া থানার পুলিশ। আটককৃত এই যুবক ডন রুবেলের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করে। এ ঘটনায় এসআই মাসুদুর রহমান খান বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন।
এছাড়াও গত ১৫ জুন আরও একটি ইয়াবা পাচার সংক্রান্ত ঘটনায় এসআই অলি উল্লাহ বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। এই ডন রুবেল ও ওবায়েদ ইয়াবা ব্যবসা ছাড়াও ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত। সম্প্রতি একটি ছিনতাই মামলায় সে গ্রেফতার হয় এবং হাজতবাস করে। পরবর্তীতে সে জামিনে বেরিয়ে এসে এলাকায় ইয়াবা ব্যবসাসহ নানা অসামাজিক কর্মকা- চালিয়ে আসছে বলে জানান এলাকাবাসী।