বদলির পরও পূর্ব রেল ছাড়ছে না ১৮ বুকিং সহকারী!


নিজস্ব প্রতিবেদক ৩০ আগস্ট, ২০২২ ২:২৭ : পূর্বাহ্ণ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে টিকেট কালোবাজারির অভিযোগে ১৮ জন বুকিং সহকারীকে একসঙ্গে বদলি করা হয়েছিল। গত ৪ আগস্ট বিভাগীয় সংস্থাপন কর্মকর্তা মীর মুহাম্মদ আলীর দফতারাদেশে এই বদলি করা হয়। কিন্তু বদলির আদেশ অমান্য করে সেই ১৮ জন এখনও চট্টগ্রামে বহাল-তবিয়তে রয়েছেন। কিন্তু তাদের কেউ চট্টগ্রাম ছাড়তে রাজি নন। বরং চট্টগ্রামে থাকতে তারা ওপর মহলে তদবির শুরু করেছেন। খোদ এমন তথ্য জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কয়েকজন কর্মকর্তা।

তাদের অভিযোগ–চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে বুকিং সহকারীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি সংঘবদ্ধ চক্র সারা বছর টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। তবে চলতি বছর ঈদুল আজহার সময় টিকেট কালোবাজারির বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে। এরপর রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে একাধিক টিকেট কালোবাজারি আটক হয়।

গত ৩ জুলাই র‌্যাবের হাতে টিকেট কালোবাজারির সময় হাতেনাতে খোদ আরএনবির (রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী) দুই সদস্য আটক হয়। এরপর রেলস্টেশন থেকে টিকেট কালোবাজারিতে বুকিং সহকারীদের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। কেননা বুকিং সহকারীরা টিকেট বাইরে না দিলে কখনও কালোবাজারি সম্ভব নয়।

এ ছাড়া টিকেট কালোবাজারিতে স্টেশন ম্যানেজার, স্টেশন মাস্টার, আরএনবিসহ রেলওয়ে পুলিশের নামও উঠে আসে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকেট কালোবাজারির বিরুদ্ধে আন্দোলন, সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে টিকেট কালোবাজারি রোধে বুকিং সহকারীদের বদলি করা হয়েছে।

বদলির আদেশ মতে, মো. হাসিবুর রহমান নামে এক বুকিং সহকারীকে বদলির পরও চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ছেড়ে যাননি। তিনি বদলি ঠেকাতে তদবির করছেন। মো. জসিম উদ্দিনকে চট্টগ্রাম থেকে হাটহাজারীর চারিয়া মাদ্রাসা, মো. সাদিকুর রহমানকে চারিয়া মাদ্রাসা থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে। মো. জমির উদ্দিনকে নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে বদলি করা হয়েছে।

প্রেষণে কুমিল্লায় থাকা মো. জাহাঙ্গীর আলমকে স্থায়ী করা হয়েছে। সঞ্জয় কুমার কীর্তনিয়াকে কুমিল্লা থেকে ফেনী, মো. মনির হোসেনকে চট্টগ্রাম থেকে লাকসামে বদলি করা হয়েছে। মো. মিজানুর রহমান চৌধুরীকে চট্টগ্রাম থেকে খানমোহনে বদলি করা হয়েছে। তমাল বড়ুয়াকে খানমোহন থেকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে বদলি করা হয়েছে।

মো. ওমর ফারুককে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী, মো. নাজিম উদ্দিনকে ফেনী থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে। মো. জাকির হোসেনকে চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম, মো. শাকিলকে লাকসাম থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে। আবু ওবায়েদ হিরুকে চট্টগ্রাম থেকে বেঙ্গুরা, আরাফাত ইকবালকে বেঙ্গুরা থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে।

আরাফাত ইকবালকে বেঙ্গুরা থেকে চট্টগ্রাম, গোপীনাথ মজুমদারকে খানহাট থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে। অন্যদিকে মো. রাশেদুল আনোয়ারকে চৌমুহনী থেকে প্রেষণে কসবা, রহিম বাদশাকে সোনাইমুড়ী থেকে প্রেষণে কসবা বদলি করা হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি বুকিং সহকারী বদলি করা হয়েছে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে। চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে বদলি হওয়া ৮ জনের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে টিকেট কালোবাজারির অভিযোগ। এর মধ্যে জসিম উদ্দিন চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। তাকে একাধিকবার বিভিন্ন স্টেশনে বদলি করা হলেও তিনি ঘুরেফিরে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে চলে আসেন।

মো. হাসিবুর রহমানকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে নোয়াখালী বদলি করা হলেও তিনি এখনও চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে আছেন বহাল-তবিয়তে। তার ভাষ্য, চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ছেড়ে তিনি কোথাও যাবেন না। বদলি ঠেকাতে তিনি তদবির করছেন। তার বিরুদ্ধে টিকেট কালোবাজারিসহ হেড বুকিং ক্লার্ক দেলোয়ার হোসেনের চাঁদা সংগ্রহকারী বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়া মো. মনির হোসেন, মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবু ওবায়েদ হিরু, মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধেও রয়েছে টিকেট কালোবাজারির অভিযোগ।

এবিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকালের-সময়কে জানান, রেলের কাজের স্বার্থে তাদেরকে বদলি করা হয়েছে। এখানে তদবির করলে তাদের কোন লাভ হবে না। তারা যদি নিদিষ্ট সময়ে বদলিকৃত স্থানে যোগ না দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সকালের-সময়/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ