রেলওয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা! 

ফেঁসে গেলেন শাহাবুদ্দিন শামীম, ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ


নিজস্ব প্রতিবেদক ৩ অক্টোবর, ২০২৩ ১২:৪৮ : অপরাহ্ণ

দি রেলওয়ে মেন্স স্টোর লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ও চট্টগ্রাম মোহামেডানের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীমের বিরুদ্ধে ২৩৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে রেলওয়ে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপককে নির্দেশ দিয়েছেন মহাপরিচালক।

রেলের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী মেন্স স্টোরের শেয়ারহোল্ডার। নির্বাচিত বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হয় কোম্পানিটি। রেলের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা চেয়ারম্যান হিসাবে মনোনয়ন পান। বোর্ডের বাকি সদস্যরা নির্বাচিত।

অভিযোগ রয়েছে, শাহাবুদ্দিন শামীম বেতনভুক্ত কর্মকর্তা হলেও কোম্পানির পরিচালনা বোর্ড তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোম্পানির সম্পদ বিনষ্ট ও আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছেন তিনি। রেলওয়ে কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।

জানা গেছে, মেন্স স্টোর লিমিটেডের নামে নগরীর কদমতলী এলাকায় একটি জায়গা বরাদ্দ নেওয়া হয়। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বাণিজ্যিক ভবন। বহুতল ভবনের দোকান বরাদ্দ দিয়ে বিপুল টাকা আয় হয়। এ ছাড়া দোকানগুলোর হস্তান্তর ফি ও বার্ষিক ফি আদায় করা হয়। নিয়মিত টাকা আদায় হলেও কোম্পানির ফান্ডে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। মামলাসহ বিভিন্ন খাতে টাকা তুলে নিয়েছেন প্রধান নির্বাহী শাহাবুদ্দিন।

দোকান বরাদ্দের নামে ৪৫ লাখ টাকা নিয়ে হস্তান্তর না করায় শাহাবুদ্দিন শামীমের বিরুদ্ধে রেলের মহাপরিচালক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন আব্দুল কাদের বিপ্লব। একই অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘আদালত কর্তৃক সাজা ও অর্থদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আয়কর আত্মসাৎকারী দুর্নীতিবাজ, প্রতারক, জালিয়াতকারী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভুয়া রেলওয়ে কর্মকর্তা, সরকারের রেলওয়ের ভূমিদস্যু ও রেলওয়ের ভূমির কোটি কোটি টাকার খাজনা আত্মসাৎকারী।

সাধারণ নিরীহ মানুষের নিকট দোকান বরাদ্দ প্রদানের নামে দলিল হস্তান্তর করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দোকান বুঝিয়ে না দিয়ে পুনরায় চাঁদা দাবি করে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বিহারি সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম। ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি প্রদর্শন করে ২৪২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করে।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় দুই দফা চিঠি দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাতে রেলের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন। মহাপরিচালক রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএমকে দুই দফা চিঠি দিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানায়। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাতে পারেনি পূর্বাঞ্চলের জিএম দপ্তর।

গত ২৯ আগস্ট রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আইন ও ভূমি বিভাগের ভূমি শাখার সহকারী সচিব ওয়াহিদুর রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠি দেওয়া হয় রেলের মহাপরিচালককে। সেখানে অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ওই চিঠি পরিপ্রেক্ষিতে রেলের মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পূর্বাঞ্চলের জিএম মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে ‘অভিযোগের বিষয়ে ইতিপূর্বে দুবার চিঠি প্রেরণ করা হলেও গৃহীত ব্যবস্থাদি সম্পর্কে অদ্যাবধি অত্র দপ্তরকে অবহিত করা হয়নি।

এ অবস্থায় অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে মহাপরিচালকের দপ্তরকে অবহিত করার অনুরোধ করা হয়েছে। ওই চিঠির পর রেলের ভূমি শাখার বকেয়া পাওনা ৭ কোটি টাকার মধ্যে সাড়ে তিন কোটি টাকা আদায়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, অভিযোগটি দুদক তদন্ত করছে। এরই মধ্যে তাদের চাহিত তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকেও তদন্ত করা হবে।

অভিযোগের বিষয়ে শাহাবুদ্দিন শামীমের মুঠোফোনে কল দেয়া হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

সূত্র—এএস/সকালের-সময়/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page