প্রধান প্রকৌশলীর হাতেই চলছে চসিকের ‘নৈরাজ্য’


নিজস্ব প্রতিবেদক ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১০:৪৯ : পূর্বাহ্ণ

ভক্ষকদের অনিয়-দুর্নীতির মহাযজ্ঞে যেমনি অনেকেই ভূক্তভোগী, তেমনি গণমাধ্যমে অহরহ অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি ও উন্নয়ন কাজে বেসামাল দুর্নীতিবাজদের সংবাদ অনেক সময় শিরোনাম হয়ে আসছে। তারপরও দুর্নীতিবাজদের মধ্যে অনেকই অধরা, জবাবদিহীতা ও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকাতে এ নিয়ে জনমনে রয়েছে আলোচনা, সমালোচনা, সন্দেহ ও প্রতিক্রিয়া।

বলছি–চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের কথা, তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি অনিয়ম-দুর্নীতির ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) উঠা অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে এবার মাঠে নামছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এই প্রকৌশলীর দুর্নীতির হদিস খুঁজতেই তদন্ত কমিটির সভাপতি দুই দিনের সরেজমিন তদন্তে চট্টগ্রামে আসছেন। মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিদর্শন-১ এর পরিচালক মো মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির সভাপতি নুমেরী জামান আগামী ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সম্মেলন কক্ষে সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে তদন্ত কার্যক্রম চালাবেন। তদন্তকালে সংশ্লিষ্ট সকলকে তথ্যপ্রমাণসহ উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চসিকের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকে) অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করেন মো. জামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি করেন স্থানীয় সরকার বিভাগ।

অভিযোগে আরও জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের ছেলে আদনান রফিকের রয়েছে মেসার্স মিয়াজি কনস্ট্রাকশন নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ৬ বছরে সিটি করপোরেশনের প্রায় ১৯ কোটি টাকার কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এভাবে সরকারি চাকরিজীবী বাবার প্রতিষ্ঠানে ছেলের ঠিকাদারি করার বিষয়টিকে বিধি ভঙ্গ ও স্বার্থের সংঘাত হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তারা জানান, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯-এর ১৭ (৩) ধারা মোতাবেক কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে তাহার পরিবারের কোনো সদস্যকে তাহার এখতিয়ারাধীন এলাকায় কোনো ব্যবসায় জড়িত হওয়ার অনুমতি দিতে পারিবেন না। তাহলে রফিকুল ইসলাম কিভাবে তার ছেলেকে এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ দিয়েছেন তা জনমনে প্রশ্ন জেগেছে।

জানা যায়, আদনান রফিকের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ঠিকাদারি করছে। নথিপত্র অনুযায়ী, আদনান রফিকের বর্তমান বয়স প্রায় ২৭ বছর। অর্থাৎ ২১ বছর বয়স থেকে ঠিকাদারি ব্যবসা করছেন তিনি।

২০১৯ সালে তৎকালীন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী) রফিকুল ইসলাম মেসার্স মিয়াজি কনস্ট্রাকশনকে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। এতে বলা হয়, মেসার্স মিয়াজি কনস্ট্রাকশন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অধীনে ৬টি উন্নয়নকাজ সন্তোষজনকভাবে শেষ করেছে। এতে ব্যয় হয়েছে ১৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

ওই প্রত্যয়নপত্র অনুযায়ী, মেসার্স মিয়াজি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ১০ নম্বর ওয়ার্ডের আমানত উল্লাহ শাহ পাড়া সড়কের উন্নয়নকাজ করে। এরপর ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকায় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রেলওয়ে আকবর শাহ সোসাইটি রোড, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ খুলশীর আবাসিক এলাকার বাই লেনের উন্নয়নে ৪ কোটি ৭ লাখ টাকার কাজ করেন।

এবং ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের লাল মিঞা ছড়ার প্রতিরোধ দেয়ালের নির্মাণকাজ, ৭৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী আবাসিক এলাকায় নালার কাজ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ইগল স্টার সড়কের উন্নয়নে সাড়ে ৪ কোটি টাকার কাজ করে।

এ বিষয়ে জানার জন্য চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেনি।

উল্লেখ্য–চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের ছেলে আদনান রফিকের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিয়াজি কনস্ট্রাকশন ছাড়াও এর আগে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের বিদ্যুৎ শাখার এক প্রকৌশলীর স্ত্রীর ঠিকাদারি ব্যবসা করার অভিযোগ উঠেছিল।

পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্ত করে বিধি ভঙ্গের অভিযোগে ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া সম্প্রতি একই শাখার আরেক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।

সকালের-সময়/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ