পাউবোর জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ ধীরগতি!


নিজস্ব প্রতিবেদক ১৬ মার্চ, ২০২৪ ৩:০১ : অপরাহ্ণ

২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একনেকে অনুমোদন পায় পাউবোর ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প। এই প্রকল্পটি তিন কারণে ধীরগতিতে এগুচ্ছে বলে জানা যায়, কারণগুলো হচ্ছে অর্থ সংকট, ভূমি অধিগ্রহণ ও ডিজাইন–ড্রইং পেতে বিলম্ব হওয়া।

এরপর কেটে গেছে পাঁচ বছর। এ সময়ে প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ। শুরুতে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় পরবর্তীতে দুই দফা বাড়ানো হয় মেয়াদ। আগামী জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আছে।

প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি অনুমোদন পায় এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকায়। অথচ এ পর্যন্ত প্রকল্পের বিপরীতে ছাড় হয়েছে মাত্র ২৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থ সংকটই প্রকল্পটির অগ্রতিতে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে আছে। এছাড়া প্রকল্পভুক্ত তিনটি খালের ৫ কিলোমিটার অংশ উন্নয়নে প্রয়োজন ভূমি অধিগ্রহণ। যা এখনো সম্পন্ন হয়নি।

ডিপিপির তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন খালের মুখে ২৩টি রেগুলেটর নির্মাণ করা হবে। ৬৯টি পাম্প থাকবে এসব রেগুলেটরে। রেগুলেটর নির্মাণ করা হবে এমন খালের মধ্যে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত আছে ১৪টি এবং হালদা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত আছে ৯টি।

এছাড়া নেভাল একাডেমী থেকে ১৫ নম্বর ঘাট খাল পর্যন্ত ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার এলাকায় রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ করা হবে ১৮ দশমিক ৯৬৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৫ নম্বর ঘাট থেকে কর্ণফুলী শাহ ব্রিজ পর্যন্ত ১২ দশমিক ৪৬৫ কিলোমিটার এবং কালুরঘাট সেতু থেকে মদুনাঘাট সেতু পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার অংশ রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় এক কিলোমিটার অংশে তীর প্রতিরক্ষার কাজ করা হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে চারটি খালে রেগুলেটর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। খালগুলো হচ্ছে– চট্টগ্রাম বোট ক্লাব খাল, ১৭ নম্বর ঘাট খাল, ১৪ নম্বর ঘাট খাল ও লালদয়িার চর ১ নম্বর খাল। এছাড়া কালুরঘাট, মোহরা, সদরঘাট এলাকায় ১০টি খালের রেগুলেটর নির্মাণ কাজ চলমান আছে। এছাড়া পতেঙ্গায় বিমানবন্দরের সামনে প্রকল্পের আওতায় একটা ওয়াল নির্মাণ কাজ চলমান আছে। যার উচ্চতা ৬ দশমিক ৬ মিটার।

জানা গেছে, পাউবোর গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ বিষয়ে ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর সেনাবাহিনী ও পাউবোর মধ্যে সমাঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছে। প্রকল্পের কর্মকর্তা সেনাবাহিনীর মেজর সুজা উদ্দিন পাঠান বলেন, বাজেট, ভূমি অধিগ্রহণ ও ড্রইং–ডিজাইন প্রকল্পের অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধক। বাজেট তো কম পেয়েছি।

এছাড়া তিনটি খালে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয় আছে। ডিজাইন–ড্রইং পেতেও দেরি হয় অনেক সময়। এ কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৮ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২০ শতাংশ। যদি ঠিকভাবে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় তাহলে নদীর পাশে বন্যা প্রতিরোধক দেয়াল এবং রেগুলেটর নির্মাণ দ্রুত করা সম্ভব হবে।

ডিপিপির তথ্য আরও বলছে–চট্টগ্রাম শহরকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করা, শহর এলাকা বন্যা বা জলাবদ্ধতা মুক্ত করার জন্য পাম্প হাউস স্থাপনের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রকল্পটির উদ্দেশ্য। এছাড়া জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য খাল খনন, ড্রেজিং ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি করাও এ প্রকল্প গ্রহণের উদ্দেশ্য। স্লুইচ গেইট নির্মাণের মাধ্যমে শহর এলাকায় লবণাক্ত পানি অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ এবং কর্ণফুলী নদীর ডান তীরে প্রতিরোধ দেয়ালের মাধ্যম জোয়ার বা ঝড় থেকে শহরকে রক্ষা করা প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ একবছর ফিজিবিলিট স্টাডি শেষে ২০১৬ সালের ২৬ আগস্ট প্রকল্পটির ডিপিপি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। ওই সময় প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৯৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। একই বছরের ৩০ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয় এবং যাচাই–বাছাই ও প্রকল্প ব্যয় সংযোজন–বিয়োজন করতে বলা হয়।

পরবর্তীতে ৪ দফা সংশোধন করে প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। এটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর ও হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট ও তৎসংলগ্ন জনগণ পত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে লাভবান হবেন।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ