প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষা 

পটিয়ায় কৃষি জমি ধ্বংস করে নির্মাণ হচ্ছে বেড়িবাঁধ!


নিজস্ব প্রতিবেদক ৪ মে, ২০২৩ ১১:৩৫ : পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মেনে পটিয়া জলাবদ্ধতা প্রকল্পে সাড়ে ১১ শ কোটি টাকার মধ্যে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ধরা হয় প্রায় ৮১ কোটি টাকা। প্রতি কিলোমিটারের জন্য তিন কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মূলত ফসলি জমি সুরক্ষায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাঁধ নির্মাণে। তারপরও বাঁধ সংলগ্ন কৃষি জমি ধ্বংস করে নির্মাণ করা হচ্ছে বেড়িবাঁধ।

খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে কৃষি জমি সুরক্ষার নির্দেশনা দিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, তিন ফসলি জমি ধ্বংস করা যাবে না। এ ধরনের জমিতে কোনো প্রকল্প নেয়া যাবে না। এ জমিগুলো রক্ষা করতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না পটিয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণে। বাঁধ সংলগ্ন ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে বেড়িবাঁধ।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, কৃষি জমি সুরক্ষার কথা চিন্তাভাবনা করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প সমীক্ষা ও নকশা প্রণয়নে বাঁধের মাটির জন্য বড় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। প্রকল্প এলাকার ফসলি জমি না কেটে অন্য স্থান থেকে থেকে মাটি সংগ্রহ ও পরিবহন খরচ ধরেই বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খ ম জুলফিকার তারেক বলেন, নদী ও খালের তীরবর্তী এলাকার জমিতে তেমন ফসল হয় না। দেখবেন ৪-৫ বছরের মধ্যে এসব জমি আবার ভরাট হয়ে যাবে। আমাদের টার্গেট বাঁধ নির্মাণ করা। মাটি সংকুলানের বিষয়টি ঠিকাদারের দায়িত্ব।

২০২১ সালের ৪ এপ্রিল ‘পটিয়া উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প’ একনেক সভায় অনুমোদন হয়। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ১১ শ ৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পে ২৫ দশমিক ৫১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৮০ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। কিলোমিটার প্রতি ব্যয় ধরা হয় তিন কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শিকলবাহা-চান্দখালী ও বোয়ালখালী খালের ডান তীরে ২২ দশমিক ২০ কিলোমিটার, চান্দখালী খালের বামতীরে তিন দশমিক ৩১ কিলোমিটার নতুন বাঁধ নির্মাণ করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-১) শওকত ইবনে শাহীদ বলেন, ১০ শতাংশ কম দরে দরপত্র দিয়েছেন ঠিকাদাররা। সেই দরে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাঁধে উচ্চতা ও চওড়া হবে ১৪ ফুট করে।

সম্প্রতি পটিয়ার প্রকল্প এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ধানি ও ফসলি জমি কেটে বাঁধের জন্য মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে। রোপা ধান, নানা ধরনের সবজির জমি কাটা পড়ছে বাঁধ নির্মাণে। গতকাল আশিয়া এলাকায় দেখা যায়, জমি কেটে মাটি নেওয়ার কারণে বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। থরে থরে একাধিক গর্ত করে মাটি নেওয়ার কারণে জমিগুলো পুকুর-ডোবায় পরিণত হয়েছে।

কিছু এলাকায় রোপা ধানের চারা কেটে মাটি নেওয়া হয়েছে। কোলাগাঁও ও বোয়ালখালীর চরখিজিরপুর এলাকায় নানা ধরনের সবজি ক্ষেত কেটে মাটি নেওয়া হচ্ছে বাঁধের জন্য। ওই অংশে দেখা যায়, বাঁধের কাছ থেকেই মাটি কাটা হচ্ছে। এতে বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিভিন্ন স্থানে কাটা জমিগুলো কেটে ছোটখাটো পুকুর- ডোবায় পরিণত করা হয়েছে।

জমিগুলো অনুপোযোগী হয়ে পড়বে বলে জানান স্থানীয়রা। নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীদ বলেন, বাঁধের ১৮ ফুট দূর থেকে মাটি কাটার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ৬ ফুট পর্যন্ত গভীরতার মধ্যে কাটতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট এলাকার রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে মাটি কাটা হচ্ছে। জমির মালিকদের চাপ সৃষ্টি করে মাটি কাটা হচ্ছে। ঠিকাদাররা জানান, ফসলের ক্ষতিপূরণ দিয়ে মাটি কিনে নেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক জুলফিকার তারেক বলেন, জমি কাটার বিষয়টি জমির মালিক ও ঠিকাদারের বিষয়। জমির মালিকদের কাছ থেকে মাটি কিনে নেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ না থাকলে জমির দাম থাকবে না। বাঁধ নির্মাণ করা হলে দেখবেন ভালো ফসল হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক উপ-সহকারী প্রকৌশলী বলেন, ফসলি জমি ধ্বংস করার জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়নি। জমি সুরক্ষা ও ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ জন্য বরাদ্দও বেশি রাখা হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক তদবিরে কাজ পাওয়া ঠিকাদার নিজেদের মতো করে কাজ করছেন। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অনেকটা অসহায়ের মতো দেখভাল করতে হচ্ছে।

সূত্র—পিকে/এসএস/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page