পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে অসাধু কর্মকর্তার কারসাজি!


নিজস্ব প্রতিবেদক ৪ মে, ২০২৩ ২:১৮ : পূর্বাহ্ণ

প্রায় পৌনে দুই মাস আগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র বিক্রি করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানা এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। বিজ্ঞপ্তির পর সেখানে প্রায় ৯টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান।

বাকি ৬টি প্রতিষ্ঠানকে কৌশল করে দরপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ দেয়নি ইস্টার্ন রিফাইনারীর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা। সম্প্রতি ভুক্তভোগী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অনিয়মের একটি অভিযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনসহ (বিপিসি) সরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থার দফতরে।

অভিযোগে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা জমা করেও শেষ দিন দুপুর ১২টায় সংশ্লিষ্ট অফিসের দরজায় গিয়েও দরপত্র জমা করতে পারেনি। দরপত্র জমা গ্রহণ না করতে কৌশলে সময় নষ্ট করতে এমন অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে— এমন দাবি ভুক্তভোগী একাধিক প্রতিষ্ঠানের।

অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, পছন্দের ব্যক্তিকে দরপত্রের কাজ পাইয়ে দিতে কৌশলে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক রায়হান আহমাদসহ কয়েকজন কর্মকর্তা। এতে অনেক ঠিকাদার নিয়ম অনুযায়ী পে-অর্ডার করে ব্যাংক টাকা জমা দিয়েও শেষ মুহূর্তে অফিসে দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।

পরে সময় শেষ হলে অফিসের ভেতরে থেকে বের হয়ে এসে বলা হয়— এখন সময় শেষ, আর দরপত্র গ্রহণ করা যাবে না। পরে অফিসের দরজা থেকে সবাইকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

গত ৪ এপ্রিল ৫ লাখ টাকার পে-অর্ডার করেও দরপত্র জমা দিতে না পেরে ভুক্তভোগী এক ঠিকাদার অভিযোগ দিয়েছেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে।

অভিযোগ বিবরণে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ২ এপ্রিল দুই ধাপে পে-অর্ডারের মাধ্যমে দরপত্রের ৫ লাখ টাকা জমা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খাজা এন্টারপ্রাইজ। পরদিন বেলা সাড়ে ১১টায় পে-অর্ডারসহ দরপত্রের শর্ত অনুসারে সব কাগজপত্র নিয়ে ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেডের গেইটে উপস্থিত ছিলেন খাজা এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি মো. আকরাম। কিন্তু তাকে গেইট পাস দেওয়া হয় ১১টা ৪৩ মিনিটে।

পরবর্তীতে ১২টা বাজার আগেই ইস্টার্ণ রিফাইনারীর ভেতরে প্রবেশ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কক্ষের সামনে যান। কিন্তু বারবার বলার পরও অফিসের ভেতর থেকে কেউ সাড়া দেননি। ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১২টা ১ মিনিটে যেতেই দরজা খুলে বের হয়ে আসেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এসেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে বলা হয়, সময় শেষ। দরপত্র আর নেওয়া হবে না।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১৮ মার্চ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দুটি দরপত্র আহবান করে ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেড। এগুলো হচ্ছে— ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেডের (ইআরএল) এর ফার্নেস অয়েল (এফও) স্টোরেজ ট্যাংক নম্বর ৬১১৯ পরিস্কার এবং পেট্রোলিয়াম স্লাব বিক্রয় কাজ এবং ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেডের (ইআরএল) রিডিউসড ক্রুড অয়েল (আরসিও) স্টোরেজ ট্যাংক নম্বর ৬১৩২ পরিস্কার ও পেট্রোলিয়াম স্লাব বিক্রয়। দরপত্র ক্রয়ের শেষ সময় ছিল ২০২৩ সালের ২ এপ্রিল। দরপত্র জমা করার শেষ সময় ও খোলার তারিখ ছিল ২০২৩ সালের ৩ এপ্রিল।

এদিকে দরপত্র ক্রয় করেও জমা করতে পারেনি কয়েকজন ঠিকাদার। জানতে চাইলে ভূক্তভোগী ঠিকাদাররা জানায়, ইস্টার্ণ রিফাইনারীর কয়েকজন কর্মকর্তা নিজেরা লাভবান হতে এমন দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। তাই কৌশল করে তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে কাজটি পাইয়ে দিতে এমন কারসাজি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের পাতানো দরপত্রের কাজ বাতিল করে নতুন করে আবারও দরপত্র আহবান করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেন্ডারের বিষয়ে রায়হান আহমাদকে ফোন করার পরামর্শ দেন।

ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশান এন্ড প্ল্যানিং ও ডেভেলপয়েন্ট এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল) রায়হান আহমাদ বলেন, শাহ আমানত ইন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের কিছু কথা কাটাকাটি হয়েছিল। তারা অভিযোগ করেনি, কিন্তু খাজা এন্টারপ্রাইজ কেনো অভিযোগ দিয়েছে জানিনা।

নিদিষ্ট ব্যক্তি টেন্ডার দিতে কোনো কৌশল করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এখানে ইস্টার্ন রিফাইনারির কয়েকজন কর্মকর্তা ছাড়াও বাইরে তিনজনেরই প্রতিনিধি টেন্ডার কমিটিতে রয়েছে। নিয়মের বাইরে কোনো কিছু হচ্ছে না।

সূত্র—সিপি

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page