নিউমার্কেট এলাকায় পুলিশ-হকার সংঘর্ষে রণক্ষেত্র


নিজস্ব প্রতিবেদক ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১:০৬ : পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও হকারদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় নগরীর স্টেশন রোড থেকে নিউমার্কেট মোড় পর্যন্ত পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য, হকার, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কয়েকজন কর্মকর্তাসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে।

সিএমপি (দক্ষিণ) এডিসি নোবেল চাকমা বলেন, বিনা উস্কানিতে হকাররা পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা করে। এতে তাদের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। তবে সন্ধ্যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকেছে চট্টগ্রাম ফুটপাথ হকার সমিতি।

সমিতির সভাপতি নুরুল আলম লেদু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে এভাবে হকারদের উচ্ছেদ করে তাদের জীবিকায় আঘাত করার ঠিক হয়নি।

তবে চসিক বলছে, ৭০ লাখ নগরবাসী ও ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ফুটপাথ দখল মুক্ত করার। কেবল নিউমার্কেট, স্টেশন রোড বা ফলমন্ডি নয়; পুরো শহরেই পর‌্যায়ক্রমে ফুটপাথের অবৈধ স্থাপনা ও দখল উচ্ছেদ করা হবে। নাগরিকদের চলাচল নির্বিঘ্ন করা হবে। উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

প্রথম দফায় গত বৃহস্পতিবার নিউমার্কেট, ফলমন্ডি ও স্টেশন রোড এলাকায় ফুটপাতে অভিযান চালিয়ে ৬ হাজার হকার উচ্ছেদ করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বড় ধরনের এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু শনিবার থেকে উচ্ছেদ হওয়া হকাররা আবারও ফুটপাথে বসতে শুরু করে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ঘোষণা দিয়ে সোমবার আবার উচ্ছেদে নামে।

উচ্ছেদ অভিযানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন চৈতি সর্ববিদ্যা, শাহরিন ফেরদৌসী ও আরাফাত রহমান সানি। এ ছাড়া শতাধিক পুলিশ সদস্য, আনসার ও চসিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উচ্ছেদে অংশ নেন।

বেলা আড়াইটার দিকে ফলমন্ডি এলাকা থেকে অভিযান শুরু হয়। ফলমন্ডির ফুটপাথ থেকে অবৈধ স্থাপনা ও হকার উচ্ছেদ করতে করতে অভিযান টিম নিউমার্কেট মোড়ের কাছাকাছি চলে আসে। এ সময় কয়েকশ হকার জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে অভিযান দলের মুখোমুখি হয়। একপর‌্যায়ে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।

হকাররা মারমুখী হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠি চার্জের পাশাপাশি ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। হকাররাও পুলিশকে লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় পুলিশের গাড়ি ও চসিকের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে হকাররা। সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য, চসিক কর্মকর্তা ও হকারসহ দশজনের মতো আহত হয়েছেন।

একজন হকার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি করেছেন হকার সমিতির নেতারা। তবে আহতদের কারও নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেন নি সংশ্লিষ্টরা।

সংঘর্ষ চলাকালে নগরীর অত্যন্ত ব্যস্ততম এলাকা নিউমার্কেট মোড় থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। টাইগারপাস, নিউমার্কেট, সিটি কলেজ ও কোতোয়ালী-নিউমার্কেট রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুরো এলাকা যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রী ও পথচারীরা আতঙ্কে এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করেন।

কাজী আরমান মাহমুদ নামে ডাক বিভাগের এক কর্মচারী বলেন, চলতি পথে তিনি পুলিশ ও হকারদের সংঘর্ষের মাঝামাঝিতে পড়ে যান। তবে শেষপর্যন্ত বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন।

বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হকাররা মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার‌্যালয় দারুল ফজল মার্কেটের সামনে সড়কে বসে পড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে তারা সড়ক ছেড়ে দেন। বিশৃঙ্খলা এড়াতে দামপাড়া থেকে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

হকারদের দাবি, পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। একজন হকার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলেও দাবি করেন তারা। তবে গুলিবিদ্ধ হকারের নাম জানাতে পারেননি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ব্যস্ততম নিউমার্কেটসহ আশপাশের বড় বড় বাণিজ্য কেন্দ্রের সামনের ফুটপাথ দখল করে দীর্ঘদিন ধরে হকাররা ব্যবসা করে আসছিল। কেবল ফুটপাথ নয়; ফুটপাথ ছেড়ে সড়কগুলো দখল করে নেয় তারা। এ কারণে পথচারীদের মধ্যে যেমন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় তেমনি যান চলাচলও বাধাগ্রস্ত হতে থাকে। অতীতে বর্তমান মেয়রের আগেও বেশ কয়েকবার সিটি করপোরেশন এসব অবৈধ হকারদের উচ্ছেদ করে।

সর্বশেষ হকারদের রুটি-রুজির কথা চিন্তা করে বেলা ২টা থেকে ফুটপাথে ব্যবসার অনুমতি দেওয়া হয়। হকারদের ডাটাবেজ তৈরিরও একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হকারদের অসহযোগিতার কারণে সেসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি। হকাররা সকাল থেকেই ফুটপাথ ও সড়ক দখল করে ব্যবসা শুরু করে; যা একেবারেই অবৈধ।

হকারদের কারণে বিভিন্ন মার্কেটের বৈধ ব্যবসায়ী যারা কোটি কোটি টাকা সরকারকে ট্যাক্স দেয় তারাও ব্যবসা করতে পারছিল না। নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি হকার উচ্ছেদ করে সড়ক ও ফুটপাথে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার। শেষ পর্যন্ত বর্তমান মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নগরীর সড়ক ও ফুটপাথ হকারমুক্ত করার উদ্যোগ নেন।

এসএস/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ