দুলালদের দাপটে রীতিমত অসহায় ওয়াসা!


মোহাম্মদ ফোরকান  ১১ এপ্রিল, ২০২৩ ৫:১৬ : পূর্বাহ্ণ

সরকারি সেবা সংস্থা চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরীতে পানি বিতরণের দায়িত্ব পালন করলেও এই সংস্থার গুটি কয়েক কর্মচারী সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে ওয়াসার জায়গা দখল করে অবৈধভাবে দোকান ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যবসায় প্রতিমাসে তাদের অবৈধ আয় লক্ষ লক্ষ টাকা। বছরের পর বছর ধরে এ ব্যবসা চলে আসলেও অসাধু কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নিতে পারছে না কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা। অসাধু কর্মচারীদের আইন না মানার দাপটের কাছে কর্তৃপক্ষ রীতিমত অসহায় বলে জানা গেছে।

সিবিএ ও নন সিবিএ সংগঠনের বাইরে চট্টগ্রাম ওয়াসায় আরো একটি সংগঠন রয়েছে। এটির নাম ‘দি ওয়াসা এমপ্লয়িজ কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’। এটির রেজিস্টেশন নং-৩১৮। এ সংগঠনে রিজুয়ান হোসেন দুলাল সভাপতি ও মোহাম্মদ জাকারিয়া সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে।

সংগঠনের নামে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন কর্মচারী ওয়াসার জায়গা দখল করে অবৈধভাবে দোকান তৈরি করছে। এর মধ্যে গত প্রায় দুইমাস ধরে চান্দগাঁও থানাধীন খাজা রোডের খালাসী পুকুর পাড় এলাকায় ওয়াসার ১৬নং পাম্পহাউজের জায়গা দখল করে তৈরি করছে পাকা দোকান ঘর। ইতোমধ্যে সেখানে ৭টি দোকান ঘর তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

রবিবার সরেজমিন দেখা যায়, কয়েকজন রাজমিস্ত্রি এসব দোকান তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন। ৭টি দোকানের কাজ শেষ করে ভাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, এসব অবৈধ দোকান নির্মাণ বন্ধের জন্য ওয়াসার এস্টেট শাখা থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরও আইন না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওয়াসার এস্টেট অফিসার মো. বাবুল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয়ের নির্দেশনায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি অনুমতি ব্যতীত কোন দোকান বা ঘর নির্মাণ না করার জন্য ‘দি ওয়াসা এমপ্লয়িজ কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে’র সভাপতি রিজুয়ান হোসেন দুলাল এর কাছে একটি চিঠি প্রেরণ করেছি। এরমধ্যে গত প্রায় ১৫ দিন আগে এ ব্যাপারে প্রায়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ওয়াসার মড-৩ নির্বাহী প্রকৌশলী রানা চৌধুরীর কাছে আরো একটি চিঠি দিয়েছি।

এদিকে দোকান নির্মাণের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে ‘দি ওয়াসা এমপ্লয়িজ কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে’র সভাপতি রিজুয়ান হোসেন দুলালের মোবাইলে ফোন দিলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

অভিযোগে জানা গেছে, ‘দি ওয়াসা এমপ্লয়িজ কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে’র ব্যানারে রিজুয়ান হোসেন দুলাল, মোহাম্মদ জাকারিয়া, মো. রুহুল আমিন, মোহাম্মদ এসকান্দর, জমির খান মিয়াজীসহ আরো বেশ কয়েকজন কর্মচারী ওয়াসার ১৬নং পাম্পহাউজ ছাড়াও নগরীর বায়েজিদ সড়কের নাছিরাবাদ এলাকার ওয়াসার স্টাফ কলোনির সামনে সাম্প্রতিক সময়ে আরো তিনটি দোকান তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন।

একই এলাকায় আরো ১৬টি দোকান নির্মাণ করে ভাড়া চলছে। ওয়াসার সিবিএ নেতা ও বহিষ্কৃত কর্মচারী নুরুল ইসলাম এসব দোকানের দেখভাল করেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে ‘দি ওয়াসা এমপ্লয়িজ কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে’র বর্তমান নেতৃত্বের সাথে আগের নেতৃত্বের দফায় দফায় সংঘাত হয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ওয়াসার সাথে লিখিত চুক্তির পর ৮০ এর দশকে এসব দোকান তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তবে ওয়াসাকে ভাড়া দিতে চাইলে কর্তৃপক্ষ ভাড়ার টাকা গ্রহণ করেনি। ফলে বাধ্য হয়ে আদালতে ভাড়া জমা দিচ্ছি। বর্তমানে এসব দোকানের ভাড়া আমরাই নিয়ে থাকি। তবে সম্প্রতি স্টাফ কলোনির পাশে তিনটি পাকা দোকান তৈরি করেছে মো. রুহুল আমিন, রিজুয়ান হোসেন দুলাল, মোহাম্মদ জাকারিয়াসহ আরো কয়েকজন। বর্তমানে এগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

এদিকে নগরীর মনসুরাবাদ এলাকায় ঢাকা ট্রাঙ্ক রোডের পাশে ওয়াসার পাম্প হাউজের সামনেও ৫টি পাকা দোকান তৈরি করা হয়েছে। এগুলো থেকেও ভাড়া তুলছে ওয়াসার গুটি কয়েক কর্মচারী। বছরের পর বছর ধরে গুটি কয়েক কর্মচারী শ্রমিক সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে ওয়াসার বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া আদায় করলেও কর্তৃপক্ষ কোন প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উল্টো তাদের চাকরির প্রমোশন ও পরিবারের স্বজনদের চাকরি প্রদান এবং নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পুনর্বাসন করেছেন। এ কারণে অনেকটা স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেছেন দুর্নীতিবাজ এসব কর্মচারী।

অভিযোগে আরো জানা গেছে, ওয়াসার কতিপয় কর্মচারী অবৈধ আয়ের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাটের মালিক বনে গেছেন। জোর তদন্ত করলে এসব বিষয়ে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।

এদিকে খাজা রোডে ওয়াসার ১৬ নং পাম্পহাউজে ভূমি প্রদানকারীর নাতি স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আজিম অভিযোগ করে বলেন, ১৯৬৫ সালে আমার দাদা আলী আহমদ পাম্পহাউজ নির্মাণের জন্য ওয়াসাকে ২৪ শতক জমি দেন। কিন্তু বর্তমানে পাম্প হাউজের আড়ালে সেখানে পাকা দোকান তৈরি করা হচ্ছে। তাই এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন এখন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন। যে কোন সময় সেখানে অপ্রীতিকর ঘটনার শঙ্কা রয়েছে।

উল্লেখ্য–ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ দোকান বন্ধের নির্দেশ দিয়ে একটি অফিস আদেশও দেন। কিন্তু কর্মচারীরা ওই আদেশ অমান্য করে গত শুক্রবার থেকে রবিবার (গতকাল) পর্যন্ত নির্মাণ শ্রমিক দিয়ে দোকান নির্মাণের কাজ চালিয়ে যেতে দেখা যায়।

সূত্র—ডিপি/এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page