জশনে জুলুসে লাখো মানুষের ঢল


নিজস্ব প্রতিবেদক ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:৫৫ : অপরাহ্ণ

লাখো মানুষের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস। ৫১তম এ জুলুসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের হুজুর কেবলা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মজিআ)।

সঙ্গে আছেন সাজ্জাদানশিন পীর আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মজিআ) ও শাহজাদা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ (মজিআ)। তাকবির, হামদ, নাতে রাসুল, গজল, জিকিরে মুখরিত হয়ে ওঠেছে চট্টগ্রাম।

বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে জুলুস শুরুর আগে ষোলশহর আলমগীর খানকাহ-এ কাদেরিয়া সৈয়দিয়া তৈয়বিয়ায় সাংবাদিকদের ব্রিফিং করা হয়। এ সময় দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি, কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

মাদরাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ-এ কাদেরিয়া সৈয়দিয়া তৈয়বিয়া থেকে শুরু হওয়া জুলুস বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জাপুল, কাতালগঞ্জ, চকবাজার অলিখাঁ মসজিদ, প্যারেড মাঠের পশ্চিম পাশ হয়ে, চট্টগ্রাম কলেজ, গণিবেকারি, খাস্তগীর স্কুল, আসকার দীঘি, কাজীর দেউড়ি, আলমাস, ওয়াসা, জিইসি, দুই নম্বর গেট হয়ে জামেয়া মাদ্রাসা মাঠে শেষ হবে। এরপর মাহফিল ও জোহর নামাজের পর দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, জশনে জুলুস এখন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। মানুষ চায় জুলুস বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্থান পাবে। এটি গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে স্থান পেলে চট্টগ্রামকেও সম্মানিত করবে।

এদিকে, জুলুস উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে চট্টগ্রাম। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে তোরণ। সাঁটানো হয়েছে ব্যানার-ফ্যাস্টুন। সড়কের দুপাশে বিশেষ পতাকাও পুঁতে দেয়া হয়েছে। বসেছে খাবারসহ বিভিন্ন আইটেমের অস্থায়ী দোকানও। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে স্বেচ্ছাসেবীরা বিতরণ করছেন শরবত। পুরো এলাকায় বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। একই সঙ্গে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন।

জশনে জুলুস উপলক্ষে সড়কে যানচলাচলে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত নগরের বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জারপুল, পাঁচলাইশ থানার মোড়, মেডিকেল হতে অলিখাঁ মসজিদের মুখ, তেলিপট্টি মোড়, চকবাজার থানা রোডের মুখ, সিজিএস স্কুল মোড়, প্যারেড কর্নার, গণি বেকারী মোড়, জামালখান মোড়, চেরাগী পাহাড় মোড়, সার্সন রোডের মুখ, নেভাল এভিনিউ, স্টেডিয়াম গোল চত্বর, আলমাস সিনেমা মোড়, চট্টেশ্বরী মোড়, এসএইচ খান ফিলিং স্টেশন (ওয়াসা), জিইসি মোড়, ষোলশহর ২নং গেইট, মুরাদপুর রোডের মুখে রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন প্রদান করা হচ্ছে।

আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি মো. শামসুদ্দিন বলেন, ১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল বাংলাদেশে প্রথম জুলুসের সূচনা হয় গাউসে জামান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (র.) এর দিকনির্দেশনায়। চট্টগ্রামের বলুয়ার দীঘির পাড় খানকাহ শরিফ থেকে আনজুমানের তৎকালীন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নূর মোহাম্মদ আলকাদেরির নেতৃত্বে জুলুসটি বের হয়েছিল।

আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (র.) চট্টগ্রামে জুলুসের নেতৃত্ব দেন ১৯৭৬ সালে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি জুলুসে নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি আর বাংলাদেশে আসেননি। তখন থেকে জুলুসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হুজুর কেবলা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মজিআ)। এটি তাঁর নেতৃত্বে ৩৫তম জুলুস।

গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার বাংলানিউজকে বলেন, বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বাইরে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক জুলুসে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। এটি বিশ্বের বড় জুলুসে পরিণত হয়েছে।

জুলুসে হুজুর কেবলাকে বহনকারী বিশেষ গাড়ির চারপাশে, খানকাহ শরীফে, জামেয়া মাঠসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বিশেষ দায়িত্ব পালন করেছেন আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্স (এএসএফ)। এ ফোর্সের প্রধান সাদেক হোসেন পাপ্পু বাংলানিউজকে জানান, এএসএফের পোশাক পরা তিনশ’ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page