চসিকের ২ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের অভিযোগ ও ক্ষোভ


নিজস্ব প্রতিবেদক ২৯ আগস্ট, ২০২২ ৭:০০ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহরের কোনো সড়ক ওয়াসা ও অন্য কোনো সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি বা অন্য কোনো কারণে নষ্ট হলে প্রাথমিকভাবে প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে সংস্কার করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এক্ষেত্রে নিজস্ব তিনটি অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টে উৎপাদিত মিক্সার (ইট, বালি, বিটুমিনের মিশ্রণ) দিয়ে সংস্কার করা হয়। ওয়ার্ড পর্যায়ে স্থানীয় কাউন্সিলরগণ অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টের তত্ত্বাবধায়কের কাছে চাহিদা দেন। তবে গত কয়েক মাস ধরে চাহিদা দিলেও প্ল্যান্ট নষ্ট অজুহাতে মিক্সার সরবরাহ না করার অভিযোগ উঠেছে প্ল্যান্টের তত্ত্বাবধায়ক ও চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী জয় সেন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে।

এদিকে গতকাল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বর্তমান পর্ষদের ১৯তম সাধারণ সভায় মেয়র নির্দেশ দেয়ার পর চসিকের এক প্রকৌশলীকে শো’কজ করা হয়েছে। ঝুলন কুমার দাশ নামে ওই প্রকৌশলী সংস্থাটির বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে কর্মরত।

সাধারণ সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কোনো অবস্থাতেই প্ল্যান্ট নষ্ট অজুহাতে সড়কের সংস্কার কাজ বন্ধ রাখা যাবে না। প্রয়োজনে একটি প্ল্যান্ট বন্ধ রেখে বাকি দুটো চালু রাখতে হবে। অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টের বিভিন্ন মালামাল ছয় মাসের জন্য স্টক থাকতে হবে।

সভায় উপস্থিত একাধিক কাউন্সিলর জানান, লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, আমরা চাহিদা দিলে অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টের যিনি দায়িত্বে আছেন তিনি প্রায় নষ্ট বলে অজুহাত দেখান, যার কারণে বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসা যে সড়ক কাটছে সেগুলো সংস্কার করা যাচ্ছে না। বিষয়টি সাধারণ সভায় মেয়র মহোদয়ের দৃষ্টিতে এনেছি। পরবর্তীতে অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলছেন, বন্ধ ছিল না। তিন-চার দিন সমস্যা ছিল। তখন সব কাউন্সিলর এর প্রতিবাদ জানান। কাউন্সিলরগণও বলেছেন, অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টের কারণে এলাকায় নষ্ট সড়ক সংস্কার করা যাচ্ছে না।

এদিকে সাধারণ সভায় মেয়র চসিকের অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরীকে সতর্ক করেন বলেও জানান একাধিক কর্মকর্তা। ওয়ার্ড সুপারভাইজারের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এদিকে মোহরা সিঅ্যান্ডবি এফআইডিসি রোড এলাকায় ফুটপাত দখল করে ওয়াসার পাম্প হাউজ নির্মাণ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেয়র। তিনি দ্রুত তা সরিয়ে নিতে ওয়াসার প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে গতকালের সাধারণ সভায় বিনা অনুমতি বা মেয়াদোত্তীর্ণ অনুমতিপত্রের মাধ্যমে রাস্তা কর্তন করা হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ও ওয়াসার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন মেয়র।

প্রকৌশলীকে শো’কজ

সাধারণ সভায় মেয়র নির্দেশ দেয়ার পর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) এক প্রকৌশলীকে শো’কজ করা হয়েছে। ঝুলন কুমার দাশ নামে ওই প্রকৌশলী সংস্থাটির বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে কর্মরত। জানা গেছে, গতকাল সাধারণ সভায় পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলী অভিযোগ করেন, গত ১৯ মাসে মূল রাস্তায় সড়কবাতি লাগানো হলেও কোনো শাখা সড়কে ‘শেড লাইট’ স্থাপন করা হয়নি। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে (বিদ্যুৎ) বলা হলেও তিনি কোনো রেসপন্স করেন না।

এছাড়া পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে সড়ক বাতি আছে এক হাজার ৩০০টি। এসব সড়কবাতি এলইডিতে রূপান্তরের চাহিদা দেয়া হয়। বিপরীতে মাত্র ৪০০ বাতি এলইডি করা হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে নষ্ট হওয়া বাতি পাল্টে দেয়ার জন্য বলা হলেও চাহিদা অনুযায়ী পাল্টে দেয়া হয় না। ৭০টি নষ্ট বাতি পাঠানো হলেও মাত্র ৪০টি পাল্টে দেয়া হয়েছে। এর ফলে অনেক জায়গা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে। মানুষজন সিটি কর্পোরেশনকে দোষারোপ করছেন।

অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০ কিলোমিটার করে এলইডি বাতি স্থাপনে গৃহীত একটি প্রকল্প গত কয়েক বছরেও বস্তবায়িত হয়নি। ঝুলন কুমার দাশের অদক্ষতা ও অযোগ্যতার কারণে প্রকল্পটিতে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। এ সময় অন্যান্য কাউন্সিলরগণও বিষয়টি সমর্থন করেন।

পরে প্যানেল মেয়র-২ মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ঝুলন কুমার দাশের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান। গতকালের সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন না এ প্রকৌশলী। বিষয়টি তুলে ধরে বিস্ময় প্রকাশ করেন বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, সাধারণ সভা হচ্ছে মিনি পার্লামেন্টের মতো। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সভায় বিনা অনুমতিতে একজন বিভাগীয় প্রধানের অনুপস্থিতি মেনে নেয়া যায় না। যেন তার কোনো জবাবদিহিতা নাই।

এ কাউন্সিলর আরো অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির যে সভা হয় সেখানে আমন্ত্রণ জানানোর প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করেন না তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশল (বিদ্যুৎ)। হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ পাঠান, যা সবসময় খেয়াল না-ও করা হতে পারে। অনেক সময় একদিন আগে সভার কথা বলেন। কাউন্সিলরগণ যেহেতু নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকেন তাই তিন-চার দিন আগে জানানো উচিত।

সব শেষে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বিরক্ত প্রকাশ করেন ঝুলন কুমার দাশের ওপর। মেয়র চসিক সচিব খালেদ মাহমুদকে নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ঝুলন কুমার দাশকে শো’কজ করুন। যদি যথাযথ জবাব দিতে না পারে তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাধারণ সভার পরপর ঝুলন কুমার দাশকে শো’কজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সচিব খালেদ মাহমুদ। তিনি বলেন, যেহেতু মেয়র মহোদয়ের নির্দেশ তাই শো’কজ করেছি। তিনি প্রায় বিনা অনুমতিতে সাধারণ সভায় অনুপস্থিত থাকেন। ফলে তার বিভাগ সম্পর্কে কাউন্সিলরদের প্রশ্নের জবাব দেয়া যাচ্ছে না। এতে কাউন্সিলরগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এবিষয়ে জানার জন্য চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী জয় সেন বড়ুয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

সূত্র–ডিএ/এসএস/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ