চট্টগ্রাম বন্দরের এস্টেট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়!


নিজস্ব প্রতিবেদক ৬ এপ্রিল, ২০২৪ ৩:২২ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) মুহাম্মদ শিহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত ২০ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের এক কর্মচারী।

অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক এবং বন্দরের এনএসআইয়ের উপপরিচালক বরাবর।

অভিযোগে বন্দর কর্মচারী উল্লেখ করেন, গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে সিহাব উদ্দিন চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে ২০১৮ সালের ৭ মার্চ সহকারী ব্যবস্থাপক (ভূমি) পদে চট্টগ্রাম বন্দরের চাকরিতে যোগ দেন তিনি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ড ভাটিয়ারি এলাকায় সমুদ্রঘেঁষা হাজার হাজার একর জায়গা রয়েছে দেশের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি বসুন্ধরা গ্রুপের। সেখানে দুই কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বসুন্ধরা গ্রুপ জেটি করতে আবেদন করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বরাবর। কিন্তু এই কাজটির ফাইল প্রসেসিংয়ের কাজের দায়িত্ব পড়ে ডেপুটি এস্টেট অফিসার শিহাব উদ্দিনের ওপর। নানা টালবাহানা ও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ভাটিয়ারীর সমুদ্র তীরে বসুন্ধরা গ্রুপের জেটি করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্তত ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করেন তিনি।

এছাড়া ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝির দিকে চট্টগ্রাম বোয়ালখালী উপজেলায় এসএ সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের জেটি এবং স্লিপ ওয়্যার ভাড়া কমানোর জন্য ফাইল প্রসেস করতে দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষকে। এই ফাইলটিও প্রসেসের দায়িত্ব পড়ে শিহাব উদ্দিনের কাছে। সেখানে ওই কোম্পানি থেকে অন্তত ১০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে কাজ করে দেন বলে গুঞ্জন উঠেছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগে বন্দর কর্মচারী আরও বলেন, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী পশ্চিম গোমদন্ডী বোয়ালখালী মেসার্স কনফিডেন্স সল্ট লিমিটেডের জেটি অনুমোদনের ফাইল প্রসেসিংয়ের জন্য যায় বন্দর এস্টেট বিভাগে। সেটির কাজ বাস্তবায়নে প্রধান দায়িত্বে ছিলেন বন্দরের ডেপুটি এস্টেট অফিসার শিহাব উদ্দিন। বর্তমানে জেটির অনুমোদন এখনও আসেনি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে। কাজটি করতে শিহাব উদ্দিন ঘুষ নিয়েছিল ১০ লাখ টাকা। এসব ঘুষের লেনদেন করেন তিনি তার ছোট ভাইকে দিয়ে।

এদিকে গত অর্থ বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে এমইবি ইন্ডাস্ট্রিজ কমপ্লেক্স লিমিটেড ও ইলিয়াস ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড নামের এই দুটি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিন ধরে ফাইল নবায়নের কাজ আটকে ছিল। কিন্তু ডেপুটি এস্টেট অফিসার শিহাব উদ্দিন এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই কোম্পানির কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ফাইল নবায়নের কাজ করে দেন। এই দুই প্রতিষ্ঠানই ইলিয়াস ব্রাদার্স লিমিটেডের।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি সমুদ্র ঘেঁষে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দেয়। সেই মোতাবেক কাজ না করে বড় অংকের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে পতেঙ্গা নেভালে সমুদ্র তীরে অবস্থিত বে-ওয়ান ক্রুজের মালিক প্রকৌশলী আবদুর রশিদের জাহাজটি সরানোর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না ডেপুটি এস্টেট অফিসার শিহাব উদ্দিন। বন্দর কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাত দেখিয়ে জাহাজটি দীর্ঘদিন ধরে সেখানেই রাখা আছে।

জানা গেছে, শিহাবের হয়ে মোটা অংকের ঘুষের টাকার লেনদেন করেন তার আপন ছোট ভাই। তার ছোট ভাইকে চট্টগ্রাম বন্দরে হাফেজ নামে চেনেন সবাই। অবৈধ লেনদেন ও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে শিহাব গ্রামে গড়েছেন আলিশান ভবন। কিনেছেন জায়গা-জমি, আছে ফ্ল্যাট, নামে-বেনামে আছে বিপুল সম্পদ।

অনিয়ম-দুর্নীতির ও অভিযোগের বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) মুহাম্মদ শিহাব উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন, এবং দুদকে পড়া অভিযোগটি মিথ্যা দাবী করেন।

মুঠোফোনে সিহাব উদ্দিনের অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে জানতে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকালের-সময়কে বলেন, সিহাব উদ্দিনের ব্যাপারে বেনামি চিঠি পেয়েছি, তবে কেউ যদি সরাসরি বন্দর কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ দেয় বা প্রতিকার চায় তাহলে বন্দর কর্তৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবে।

উল্লেখ্য—এভাবে সিহাব বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির ফাইল প্রসেস (এনওসি) ও কোম্পানির এস্টেট বিভাগের অনুমোদন বিষয়ে সমস্যা সমাধানের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অল্প সময়েই গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারায় করেছেন বাড়ি। এছাড়া নামে-বেনামে রয়েছে আরও বিভিন্ন সম্পদ। আছে ফ্ল্যাট, করেন বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য, তবে এসব অবৈধ কাজের সহযোগী হিসেবে লেনদেন করে তার আপন ছোট ভাই হাফেজকে দিয়ে।

সূত্র—সিপি/এসএস/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ