চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে দুর্নীতিবাজ চক্র। হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে।
একাধিক আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন আমদানি পণ্যের নমুনা পরীক্ষার নামে পদে পদে তাদের হয়রানী করা হচ্ছে। তারা এই প্রতিবেদককে জানায়, প্রতিদিন আমদানি পণ্য চালানের শতাধিক নমুনা এই ল্যাবে জমা হয়।
যা পরীক্ষায় লোকবল থাকার কথা ৪০ জনের মতো। বাস্তবে আছে মাত্র কয়েকজন। এই সংকটকে পুঁজি করেই স্বেচ্ছাচারিতা আর অনিয়মের পাহাড় গড়েছেন ল্যাব প্রধান আব্দুল হান্নান। তার ইচ্ছামাফিক চলে পণ্যের নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম।
কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আমদানি রপ্তানি সংক্রান্ত একটি ফাইল ভালোভাবে দেখতে একজন কর্মকর্তার অন্তত ২০ মিনিট সময়ের প্রয়োজন। জনবল সংকটের কারণে একটি ফাইলে ১০ মিনিটের বেশি সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে কাজের মান কমে যাচ্ছে।
তাছাড়া কাস্টমসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে জনবল সংকটের কারণে রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে ১৫ দিনেরও বেশি অপেক্ষা করতে হয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে যেসব আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা ল্যাব প্রদানের অনৈতিক কাজের সাথে লিপ্ত তাদের পণ্য চালানের নমুনা পরীক্ষা একদিনের মধ্যে দ্রুত সরবরাহ করা হয়। বাকিদের লাগে ১৫-২০ দিন থেকে ১ মাস।
তাছাড়া সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব খুইয়ে ল্যাব প্রধান হান্নান তার বিশেষ বিশেষ আমদানিকারককে নিজেই শুল্ক ফাঁকির কৌশল শিখিয়ে দেন। আর তথাকথিত এ কনসাল্টেন্সি’র নামে হাতিয়ে নেন বিপুল অর্থ। পরে আবার তার মনোনিত সিঅ্যান্ডএফকে কাজ দিতেও বাধ্য করেন। আর এভাবে ফুলে-ফেঁপে বড় হচ্ছেন ল্যাব প্রদান।
জানা যায়, বর্তমান ল্যাব প্রধান বিভিন্ন আমদানি-রপ্তানি ও সিএন্ডএফ ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত আছেন। ডজনখানেক ব্যবসায়ীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে প্রতি মাসে এক থেকে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এই ল্যাব প্রধান।
এর ফলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সৎ ও নিষ্ঠাবান আমদানি-রপ্তানি কাজে নিয়োজিত আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা প্রতারিত এবং হয়েরানির শিকার হচ্ছেন।
সৎ ও দায়িত্ববান ব্যবসায়ীদের আমদানি পণ্যের নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে জমা দিলে যেখানে এক/দুই দিনেই নমুনা পরীক্ষা কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব সেখানে ১৫ থেকে ২০ দিন কোন কোন ক্ষেত্রে এক মাস পর নমুনা পরীক্ষা প্রতিবেদন দেয়। যার ফলে ওইসব ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে হয়রানির শিকার হন।
আরো জানা যায়, নমুনা পরীক্ষায় নেয়া হয় জালিয়াতির আশ্রয়। ল্যাব প্রধানের একান্ত কাছের প্রতিষ্ঠানের নমুনা পরীক্ষায় দেখানো হয় কম শুল্ক আর একই ধরনের পণ্য অন্য প্রতিষ্ঠানের নমুনা পরীক্ষায় দেখানো হয় উচ্চ শুল্ক।
একাধিক ব্যবসায়ীরা বললেন, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারের ল্যাব প্রধানের কাছে শত শত ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে আছে। এই ল্যাব প্রধান বিশেষ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পথ বাতলে দিয়ে বিনিময়ে লাখ লাখ টাকা নিয়ে থাকেন।
তারা আরো বলেন, এই ল্যাব প্রধানের অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয় উচ্চ মহলে একাধিক চিঠি দিয়েও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ল্যাব প্রদানের অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়টা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ওপেন সিক্রেট।
সূত্রে জানা যায়, এই ল্যাব প্রধান অবৈধ উপার্জনের বিপুল অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছেন। ঢাকা, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ নিজ এলাকায় বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর আসকার দিঘির পাড়ে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
এসব অনিয়ম আর দুর্নীতির বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারের ল্যাব প্রধান আব্দুল হান্নানের কাছে প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এর আগেও গণমাধ্যমে নিউজ হয়েছে।
এসব ঘটনা তদন্তে কমিটিও হয়েছে শুনেছি। চাকরিতে আঘাত আসেনি। এরপরও বলবো আমার চাকরির মেয়াদ আর বেশিদিন নেই। নিউজ করলে কিছুটা সম্মান হানি হবে।
তিনি নিউজ না করার অনুরোধ জানান। তবে নিউজ প্রকাশ করলে মামলা করার হুমকিও দেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারের ল্যাব প্রধান আব্দুল হান্নান।
সকালের-সময়/এমএফ