চট্টগ্রামে লোডশেডিং ও পানির সংকটে বিপর্যস্ত জনজীবন


নিজস্ব প্রতিবেদক ১১ মে, ২০২৩ ৯:০৭ : পূর্বাহ্ণ

চলমান ভয়াবহ তাপদাহে অস্থির হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের মানুষ। গত চার-পাঁচ দিন ধরে মানুষের পাশাপাশি হাঁসফাঁস করছে পশু-পাখিরাও। এর মধ্যে চলছে তীব্র লোডশেডিং ও ওয়াসার পানির সংকট। ভোগান্তি বেড়েছে চলমান এসএসসি ও আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের। অসুস্থ হয়ে পড়ছে বয়স্ক ও শিশুরা।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ‘মোখা’র প্রভাবে এই গরম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, গরম আরও আগামী তিন দিন থাকবে। কারণ এ সময়ে আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। অর্থাৎ ৩৬ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।

ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, গত মঙ্গলবার বিকালে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেতে পারে ওই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র। প্রথমদিকে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হলেও ১২ মে ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে বাঁক নিয়ে উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে।

খরতাপে দিশাহারা মানুষ

তীব্র তাপদাহে চট্টগ্রামের রাস্তায় হাঁটাচলা কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে মানুষের আনাগোনা কমেছে। গাছের নিচে বা ভবনের নিচে বসলেও মানুষ শুধুই ঘামছে আর ঘামছে। সড়কে কুকুরগুলোকেও দেখা যায় পানির সন্ধান করতে। বনের পশু-পাখিরাও পানির সন্ধানে লোকালয়ে ছুটছে।

তৃষ্ণার্ত পাখিরা ধরা দিচ্ছে দালানের ব্যালকনিতে। রাস্তাঘাটে দিনমজুর শ্রমিকরা ধুঁকছে। গরমের পাশাপাশি শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা রকম রোগ-বালাইও। প্রায় অনেকের মধ্যে জ্বর-সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক নূর নাহার বলেন, বিশেষ করে টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-বি ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বুধবার সকাল থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুধু ডায়রিয়া রোগীই ভর্তি হয়েছে প্রায় ১১০ জন। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ রোগী ভর্তি হচ্ছেন।

লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ মানুষ

অসহ্য গরমের মধ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। কাহিল হয়ে পড়ছে এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও।

চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের এসএসসি পরীক্ষার্থী সোহেল আকবর জানায়, লোডশেডিংয়ের কারণে পরীক্ষার হলের বৈদ্যুতিক পাখা বন্ধ থাকে। এ সময় গায়ের ঘামে পরীক্ষার খাতা ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি সঠিকভাবে উত্তর লেখাও সম্ভব হয় না। গরমে মাথা ঘোরা শুরু হয়।

আরেক পরীক্ষার্থীর মা শর্মিলা দে বলেন, একদিকে তীব্র গরম, অন্যদিকে লোডশেডিং ঘরে-বাইরে কোথাও টেকা যাচ্ছে না। ছেলেমেয়েরা কেন্দ্রে যেমন ঘামে, বাসায়ও তেমন ঘামে। পড়ালেখা ঠিকমতো করতে পারছে না। তাই অনেকের পরীক্ষা ভালো হচ্ছে না।

লোডশেডিং অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে সবখানে। দুই ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবার লোডশেডিংয়ে কমপক্ষে এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকে না। এমনকি গভীর রাতেও লোডশেডিং হচ্ছে। তবে গ্যাস সংকটের সুরাহা এবং ভারী বৃষ্টি না হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।

পিডিবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রামে ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু তার তুলনায় ২৫০-৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য সূচি মেনে লোডশেডিং করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বৃষ্টির অভাবে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ। জ্বালানি সংকটের কারণে অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতেও চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। বৃষ্টি হলে চাহিদাও কিছুটা কমবে। তখন লোডশেডিং পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানান তিনি।

চলছে পানির জন্য হাহাকার

দাবদাহ এবং লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি নগরবাসীকে পানির জন্যও হাহাকার করতে হচ্ছে। পানি উৎপাদন কমে যাওয়ায় নগরবাসী প্রয়োজনীয় পানি পান না। লবণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওয়াসাও পানি উৎপাদন বহুলাংশে কমিয়ে দিয়েছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান একে এম ফজলুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রামে দৈনিক ১৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কমেছে। ভারী বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। কাপ্তাই লেক থেকে পানিপ্রবাহ না বাড়লে লবণের তীব্রতা কমবে না। এমতাবস্থায় পানির উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে না। তবে ওয়াসা ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page