চট্টগ্রামে গ্যাসের হাহাকার–দুর্ভোগ চরমে


নিজস্ব প্রতিবেদক ১৫ মে, ২০২৩ ৪:৩৪ : অপরাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। শনিবার ভোর থেকে চট্টগ্রামের বাসাবাড়িগুলোতে রান্নার চুলায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাসের জন্য ঘরে ঘরে শুরু হয় হাহাকার, রান্না বন্ধ হয়ে যায়। হোটেলেও খাবারের জন্য ছিল দীর্ঘ লাইন। অনেক হোটেলে খাবারের সংকট দেখা দেয়।

গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কারখানায় গ্যাসের অভাবে উৎপাদন মুখ থুবড়ে পড়ে। গ্যাস জুটছে না সিএনজি টেক্সিসহ যানবাহনে। এতে করে সিএনজি টেক্সি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। যানবাহনের সংখ্যাও নেমে আসে অর্ধেকে। পরিবহন ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

কেরোসিনের দাম বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে স্টোভ, ইন্ডাকশন চুলার দাম। রাইস কুকার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বাজারে। শুধুমাত্র গ্যাসের অভাবে চট্টগ্রামে ঘরে–বাইরে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। চট্টগ্রামে রেশনিং করে হলেও দ্রুত গ্যাস সরবরাহ শুরু করার জন্য দাবি জানানো হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গত শুক্রবার রাতে মহেশখালীর দুটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ করে দেয়া হয়। টার্মিনাল দুটি বন্ধ থাকায় জাতীয় গ্রিডে দৈনিক গড়ে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শনিবার সকাল থেকেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হতে শুরু করে। গতকাল রোববার গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান- কেজিডিসিএল’র অধীন এলাকায় গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে গতকাল সরবরাহ করা হয় মাত্র ৬২ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে চট্টগ্রামজুড়ে গ্যাসের জন্য হাহাকার তৈরি হয়। রাউজান, শিকলবাহা, বাড়বকুণ্ড এলাকায় অবস্থিত গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় কাফকো এবং সিইউএফএল’র কার্যক্রমও।

সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন কেজিডিসিএল’র অধীন আবাসিকের প্রায় ৬ লাখ গ্রাহক। বাসা-বাড়িতে গ্যাস না থাকায় রান্না হয়নি অনেকের বাসায়। কেউ কেউ এলপিজি সিলিন্ডারসহ বিকল্প ব্যবস্থায় রান্না করলেও সেখানে গুণতে হয়েছে বাড়তি টাকা। হোটেলে ভিড় করেও খাবার না পেয়ে অনেকে বিস্কুট, পাউরুটি, কেকসহ শুকনো খাবার কিনে খান।

চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকায় স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন সরকারি চাকরিজীবী ফেরদৌসী আক্তার। প্রতিদিন সকালে রান্না সেরে কর্মস্থল যান তিনি। কিন্তু আজ সকালে রান্নাঘরে গিয়ে চুলা জ্বালাতে পারেননি। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর অনলাইনে খাবার আনিয়ে নেন। দুপুরের খাবারও রেস্তোরাঁ থেকে কিনে এনেছেন।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, গ্যাসের অভাবে চট্টগ্রামে মানুষের দুর্ভোগ অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। যদি ন্যাশনাল গ্রিড থেকে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসও চট্টগ্রামে দেয়া হতো তাহলে বাণিজ্যিক রাজধানীতে বসবাসকারী ৬০ লাখ মানুষের শেষ রক্ষা হতো।

বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি এই সিস্টেমের প্রতিবাদ করে বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়েছে। এটি হতে পারে। এই নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। কিন্তু ন্যাশনাল গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে একটুও গ্যাস আসবে না, এটি হতে পারে না। রেশনিং করে হলেও চট্টগ্রামে কিছু গ্যাস সরবরাহ করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশন) রইস উদ্দিন আহমেদ জানান, চট্টগ্রামে গ্যাসের মোট দৈনিক চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ করা হয় এলএনজি টার্মিনাল থেকে। জাতীয় গ্রিড থেকে কোনো গ্যাস চট্টগ্রামে সরবারাহ করা হয় না।’

নগরে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে বলে দাবি করেছেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের এমডি প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, গ্যাস সংকটের বিষয়ে চট্টগ্রামবাসীর জন্য সুখবর আছে। ইতিমধ্যে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। নগরের কিছু কিছু এলাকায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। আগামী ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page