এবার রেল কর্মচারীর বিরুদ্ধে টেন্ডার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ


মোহাম্মদ ফোরকান  ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১:৫০ : পূর্বাহ্ণ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তার (এফএঅ্যান্ডসিএও) দপ্তরে ভুয়া বিল ভাউচারে কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এবার টেন্ডার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে খোদ এই দপ্তরের হিসাব রক্ষক শেখ জামাল আহমেদ ও তার সিণ্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একাধিক ঠিকাদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মো: সাইদুর রহমান সরকার বরাবর ১২ ফেব্রুয়ারী সোমবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: এস এ কর্পোরেশন, আর এস কর্পোরেশন, মেসার্স কারাবি কর্পোরেশন ও মেসার্স মডার্ণ ট্রেডার্স।

অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সিআরবি (এফএএন্ডসিএও’র) আহ্বানকৃত দরপত্র নং RC/Outsourcing/2023-24/SR-2(Re) ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ আউটসোর্সিংয়ে টেন্ডার দাখিল করার নিয়মিত সময় ছিল সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি)।

ঠিকাদাররা এই কাজের টেন্ডারের কাগজপত্র দাখিল করতে গেলে এসময় রেলওয়ের অর্থ ও ক্রয় (এফএঅ্যান্ডসিএও) হিসাব রক্ষক শেখ জামাল আহমেদের লোকজনের রোষানলে পড়েন, এবং টেন্ডার দাখিলকারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কাগজপত্রসহ জামানতের টাকা ছিনিয়ে নেন, তখন তারা আর টেন্ডার ড্রপ করতে না পারায় পরবর্তী টেন্ডার আহ্বান করেন।

সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে ভেটিং বা আর্থিক সম্মতির জন্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন বিভাগের বেশকিছু প্রকল্পের টেন্ডার প্রধান হিসাব কর্মকর্তা ও আর্থিক উপদেষ্টার দপ্তরে পড়ে আছে অনেকদিন ধরে। সংশ্লিষ্ট টেন্ডার কমিটির প্রধানরা ভেটিং দিয়ে দ্রুত ফাইল ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ দিলেও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা ও তার অফিসের হিসাব রক্ষক জামালের আধিপত্যর কারণে তা ভেস্তে যায় বলে জানা যায়।

ঠিকাদাররা আরও বলেন, ভেটিংয়ের নামে ঠিকাদারদের জিম্মি করে ফেলেছেন প্রধান হিসাব কর্মকর্তা ও এই অফিসের হিসাব রক্ষক শেখ জামাল আহমেদ। এদিকে শেখ জামাল বিভিন্ন অপরাধের সাথেও জড়িত। তিনি সরকারি কোয়ার্টারে টাইলসে্র গোডাউন করে ব্যক্তিগত ব্যবসা করেন, আবার সরকারি ঘর ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এবং গোপন কারসাজির মাধ্যমে টি এ ব্রাঞ্চ কেন্টিন নিজ নামে দখল করে নিয়েছেন। দরপত্র কারসাজি করেন, এবং রেলওয়ে মেন্স স্টোরের পরিচালক হয়েও দীর্ঘদিন হিসাব না দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

এছাড়া ক্ষিপ্ত হয়ে এক ঠিকাদার বলেন, শেখ জামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমঝোতা না করলে কোনো ফাইল তিনি ছাড়তে দেন না। এর ফলে রেলের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু করতে যেমন বিলম্ব হচ্ছে, তেমনই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। এজন্য ঠিকাদারসহ রেল কর্মকর্তাদের দিন-দিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

শুধু টেন্ডার ফাইলই নয়, বিভিন্ন বিল ছাড়করণেও সমস্যা তৈরি করেন এই শেখ জামাল আহমেদ। কাজ শেষে বিলের জন্য প্রধান হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে ফাইল গেলে সেই ফাইল সহজে নড়ে না। বিশেষ করে কর্মচারীদের বেতন ছাড়করণেও জামালদের টাকা না দিলে বিল ছাড় করেন না। এতে কম বেতনের ছোট কর্মচারীরাও বিপাকে পড়ছেন অনেকবার।

ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা আরও বলেন, রেলওয়ের হিসাব কর্মকর্তা ও আর্থিক উপদেষ্টারা পিপিআর বিধিমালা অনুযায়ী ক্রয়কার্যে ভেটিং প্রদানের ক্ষমতা রাখেন না। কিন্তু তারা ভেটিংয়ের নামে ফাইল আটকে ঠিকাদারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা আদায় করছেন বছরের পর বছর।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্ব রেলের আর্থিক উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা (এফএঅ্যান্ডসিএওর) কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

টেন্ডার ছিনিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের (এফএঅ্যান্ডসিএও) এর হিসাব রক্ষক শেখ জামাল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকালের-সময়কে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ঠিকাদাররা যে অভিযোগ দিয়েছে তা মিথ্যা ও কাল্পনিক। আমি এসময় অফিসে ছিলাম না। সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। অভিযোগকারীদের মধ্যে এস এ কর্পোরেশন ছাড়া বাকি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁর অপরিচিত বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, তার বড় ভাইয়ের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন সুবিদাভোগী কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সোমবার ছিল টেন্ডার খোলা ও দাখিলের সময়। টেন্ডার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সিআরবিতে একপ্রকার অস্থিরতা বিরাজ করছে দীর্ঘদিন। টেন্ডার দাখিল করতে না পারা ঠিকাদাররা ফের টেন্ডারের আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য— ইজিপি টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে ভেটিং বা আর্থিক সম্মতির প্রয়োজন হয় প্রধান হিসাব কর্মকর্তার। কিন্তু এবিষয়ে কোনো ঠিকাদার দেখা করে সমঝোতা না করলে (এফএঅ্যান্ডসিএও) এবং এই অফিসের হিসাব রক্ষক শেখ জামাল ও তার সিন্ডিকেট কোনো ফাইল ছাড়তে দেন না বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

সকালের-সময় ডটকম

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ