অবশেষে গাজী ওয়্যারসে্র দুই প্রকল্প পরিচালক বরখাস্ত


নিজস্ব প্রতিবেদক ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ২:৩৩ : অপরাহ্ণ

রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান গাজী ওয়্যারস লিমিটেডকে (গাওলি) শক্তিশালী ও আধুনিকীকরণ শীর্ষক ৬৮ কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রকল্পের পরিচালক ও উপপরিচালককে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) প্রধান ব্যক্তি প্রশাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সারওয়ার জাহান স্বাক্ষরিত আদেশে বরখাস্তের তথ্য জানা গেছে।

বরখাস্ত হওয়া প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) নাম মো. আক্তার হোসেন। তিনি বর্তমানে অতিরিক্ত প্রকৌশলী, সচিব বিভাগ (বিএসইসি), সংযুক্তিতে গাজীপুরে অবস্থিত এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেডে কর্মরত আছেন। অন্যজন হলেন উপপ্রকল্প পরিচালক (বর্তমানে জিইএম কোম্পানি লিমিটেডের সহকারী প্রধান হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা) তাজুল ইসলাম। গত দেড় বছরে প্রকল্পে দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে সকালের-সময় ডটকমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

গাজী ওয়্যারস লিমিটেড (গাওলি) সূত্রে জানা যায়, সরকার ২০১৭ সালে গাজী ওয়্যারস লিমিটেডকে আধুনিকীকরণ ও শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর ৬৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক সভায় (একনেক) অনুমোদন পায়। এর আওতায় একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ, অন্যান্য নির্মাণকাজ ও ৯টি ভারী মেশিনারিজ ক্রয় করার কথা। ভারী মেশিনারিজ কেনার ক্ষেত্রেই বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে দরপত্র পাওয়া যায়। কারিগরি সাব-মূল্যায়ন কমিটির ২য় সভায় ইতালির ‘মেসার্স সিকমে ইটালিয়া ইমপিয়ান্টি ভায়া টরিনো’ ও জাপানের ‘মেসার্স ডায়মন্ড প্রজেক্ট কো. লিমিটেডের’ দরপত্র কারিগরি বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হয়।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির ৩য় সভায় কারিগরি মূল্যায়নে গ্রহণযোগ্য ও সর্বনিু দরদাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের মেসার্স ডায়মন্ড প্রজেক্ট কোম্পানি লিমিটেড (ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানি মেসার্স পুরুকুয়া বুশন কোম্পানি লিমিটেড) এবং জাপানের হোকোয়েটসু ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেডকে ক্রয়াদেশ প্রদানের সুপারিশ করা হয়। ২৬-১২-২০১৯ সালের মাধ্যমে মেসার্স ডায়মন্ড প্রজেক্ট কো. লিমিটেডকে এই ক্রয়াদেশ প্রদান করা হয়।

প্রকল্পের আওতায় ৬৮ কোটি টাকার ছয়টি মেশিন কেনা হয়। সেই মেশিনগুলো কোন দেশের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে তা শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয় গঠিত কারিগরি কমিটি। প্রকল্পের আওতায় সম্পন্ন হওয়া পুরকৌশল কাজসহ অনেক বিষয়ে কারিগরি কমিটি কোনো ধরনের মতামত দিতে পারেনি।

যদিও কারখানা পরিচালনা, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ১১টি সুপারিশ দিয়েছিল এই কমিটি। একইভাবে দুদক প্রকল্পটির দুর্নীতির ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরুর আগে শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি সংস্থা বিএসইসি থেকে তদন্ত কমিটির মতামত ও সুপারিশ চায়।

বিএসইসির সচিব গাওলির ৬৮ কোটি টাকার প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি করেন। প্রতিটি তদন্ত কমিটির মতামত ও সুপারিশের ভিত্তিতে দুদকে অভিযোগটি জমা দেওয়া হয়। তিনটি তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত হিসাবে প্রকল্পের পিডি আক্তার হোসেন ও ডিপিডি তাজুল ইসলামসহ আরও কয়েকজনের নাম ছিল।

দুদক চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়া আবেদনে আরও বলা হয়, মূল্যায়ন কমিটির কার্যবিবরণীতে এবং গাওলির বোর্ডের ১৯৪তম সভার কার্যবিবরণীতে ক্রয়াধীন মেশিনসমূহে ‘কান্ট্রি অব অরজিন’ বা (কোন দেশে উৎপাদিত) উল্লেখ না করা এবং কোম্পানি বোর্ডের ১৯৪তম সভায় ক্রয়াধীন ৬টি মেশিন জাপানি নির্মাতা তাইওয়ানস্থ ফ্যাক্টরিতে তৈরি হবে এবং তাইওয়ান থেকে আনয়ন করা হবে-মর্মে সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনার জন্য উপস্থাপন না করায় ক্রয় প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়নি।

মূল্যায়ন কমিটির কার্যবিবরণীতে ও গাওলি’র কোম্পানি বোর্ডের ১৯৪তম সভায় ‘কান্ট্রি অব অরিজিন’ উল্লেখ না করার জন্য উপপ্রধান হিসাবরক্ষক ও কোম্পানি বোর্ডের সচিব অলক প্রিয় বড়–য়া দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে সভায় উপস্থাপিত কার্যপত্রে প্রকল্পের আওতায় ক্রয়াধীন যন্ত্রপাতিসমূহের ‘কান্ট্রি অব অরিজিন’ উল্লেখ না করার দায় সম্পূর্ণরূপে প্রকল্প পরিচালক মো. আক্তার হোসেনের।

তৃতীয় তদন্ত কমিটির মতামত ও সুপারিশের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য গাওলি বোর্ড অব ডাইরেক্টরস থেকে ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন গ্রহণ করা হলেও বিএসইসির বোর্ড অব ডাইরেক্টরস ও শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন গ্রহণ করা হয়নি। আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, তিনটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত প্রতিষ্ঠানসংক্রান্ত দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

বিএসইসির প্রধান ব্যক্তি প্রশাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সারওয়ার জাহান বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, গাজী ওয়্যাস লিমিটেডের একটি প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার দুজনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।

এসএস/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page