সৌম্যর সেঞ্চুরি ও ইমরুল কায়েসের পূর্ণ শতকে জয় বাংলাদেশের


২৭ অক্টোবর, ২০১৮ ২:০১ : পূর্বাহ্ণ

সকালেরসময় স্পোর্টস ডেস্ক:: দলে ফিরেই সেঞ্চুরি পেলেন সৌম্য সরকার, অন্যদিকে ফর্ম ধরে রেখে ইমরুল কায়েস পূর্ণ করলেন শতক। তাই জিম্বাবুয়ের করা ২৮৬ রানের পথটা হয়ে গেল সহজ। মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৭ বল আগেই জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। ৭ উইকেটের এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০তে জিতে সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করলো টাইগাররা।

চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বড় সংগ্রহ দাঁড় করে জিম্বাবুয়ে। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শন উইলিয়ামসের হার না নামা ১২৯ রানের সঙ্গে ব্রেন্ডন টেলরের ৭৫ রানে ভর দিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে সফরকারীরা ৫ উইকেটে করে ২৮৬ রান। কঠিন এই লক্ষ্য সৌম্যর ১১৭ ও ইমরুলের ১১৫ রানের ঝলমলে দুটো ইনিংসে সহজেই পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

ইনিংসের প্রথম বলে লিটন দাস রানের খাতা খোলার আগে আউট হলেও সৌম্য-ইমরুলের ব্যাটে লড়াইয়ে ফেরে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় উইকেটে তারা গড়েন ২২০ রানের জুটি। তাদের আউটের পর মুশফিকুর রহিম (২৮*) ও মোহাম্মদ মিঠুন (৭*) নিশ্চিত করেন দলের জয়। ঝড়ো সেঞ্চুরিতে দলের জয়ে অবদান রাখায় সৌম্যর হাতে উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার। আর সিরিজসেরা? ব্যাট হাতে রানের বৃষ্টি ঝরানো ইমরুল জিতেছেন পুরস্কারটি।

আরেকটি সেঞ্চুরি ইমরুলের

সৌম্য সরকারের পর সেঞ্চুরির উৎসবে মাতলেন ইমরুল কায়েস। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ছন্দে থাকার ফায়দা তুলে নিয়ে এক ম্যাচ বিরতি দিয়ে পেলেন দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা। প্রথম ওয়ানডে খেলেছিলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ১৪৪ রানের ইনিংস। চট্টগ্রামে পরের ম্যাচেও সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েছিলন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ফিরতে হয় ৯০ রানে। তবে সিরিজের শেষ ম্যাচে ভুল করেননি ইমরুল। চমৎকার ব্যাটিংয়ে তুলে নিয়েছেন ৫০ ওভারের ম্যাচের চতুর্থ সেঞ্চুরি। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে আউট হওয়ার আগে এই ওপেনার ১১২ বলে করেন ১১৫ রান। চমৎকার ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছেন ১০ চার ও ২ ছক্কায়।

দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পর সৌম্যর বিদায়

অসাধারণ এক ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন সৌম্য সরকার। জিম্বাবুয়ের বোলারদের ওপর ঝড় বইয়ে তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংস। শেষ পর্যন্ত ১১৭ রানে থেমেছেন তিনি হ্যামিল্টন মাসাকাদজার বলে। মাসাকাদজার বলে লং অনে বিগ শট খেলতে চেয়েছিলেন সৌম্য, কিন্তু তার ব্যাটের নিচের দিকে লেগে বল উঠে যায় উপরে। ভাসতে থাকা কঠিন ক্যাচটি সীমানার একটু আগে থেকে তালুবন্দি করেন ডোনাল্ড তিরিপানো। যাতে ভাঙে সৌম্যর সঙ্গে ইমরুল কায়েসের গড়া ২২০ রানের জুটি। তার আগেই অবশ্য দেশের মাটিতে যেকোনও উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ার রেকর্ড গড়ে ফেলেন তারা।

ফিরেই সৌম্যর সেঞ্চুরি

ওয়ানডে দলে ফেরাটা সেঞ্চুরিতে রাঙিয়ে নিলেন সৌম্য সরকার। প্রথম দুই ওয়ানডেতে উপেক্ষিত থাকার জবাবটা দিলেন তিনি দারুণভাবে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূরণ করার উৎসবটা তাই একটু আলাদাই ছিল তার। হাফসেঞ্চুরির পর আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন সৌম্য। প্রথম ফিফটি করতে যেখানে খেলেছেন ৫৪ বল, সেখানে পরের ফিফটি করতে লেগেছে তার মাত্র ২৭ বল। ৮১ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেছেন তিনি ৮ চার ও ৪ ছক্কায়।

সৌম্যও পেলেন হাফসেঞ্চুরি

প্রথম দুই ওয়ানডের দলে ছিলেন না সৌম্য সরকার। চট্টগ্রামের তৃতীয় ওয়ানডের দলে ফিরে একাদশে নেমেই নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ইমরুল কায়েসের পর চমৎকার ব্যাটিংয়ে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেছেন তিনিও। জাতীয় ক্রিকেট লিগে (এনসিএল) অলরাউন্ডার সৌম্যকে পাওয়া গেছে তৃতীয় ও চতুর্থ রাউন্ডের খেলায়।

এর মাঝে আবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে করেছিলেন অপরাজিত সেঞ্চুরি। রানের মধ্যে থাকা সৌম্যের তাই সুযোগ মিলে যায় তৃতীয় ওয়ানডের দলে। চমৎকার ব্যাটিংয়ে সুযোগটা কাজে লাগালেন তিনি। ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বরে নেমে পেয়েছেন হাফসেঞ্চুরির দেখা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফসেঞ্চুরি পূরণ করতে খেলেছেন তিনি ৫৪ বল।

ইমরুলের ঝড়ো হাফসেঞ্চুরি

ব্যাটে বসন্ত চলছে ইমরুল কায়েসের। আগের দুই ওয়ানডের পারফরম্যান্স ধরে রেখে চট্টগ্রামের তৃতীয় ওয়ানতেও তার ব্যাটে চলছে রান উৎসব। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৭তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন এই ওপেনার। প্রথম বলে লিটন দাস আউট হলে গেলেও গতি থামেনি বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের। ইমরুল ও সৌম্য সরকার দুজনই ব্যাট হাতে শাসন করেছেন জিম্বাবুইয়েন বোলারদের। বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন ইমরুল। ফর্মের তুঙ্গে থাকা এই ওপেনার মাত্র ৪১ বলে পূরণ করেন হাফসেঞ্চুরি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৭তম হাফসেঞ্চুরি করতে মেরেছেন তিনি ৮ বাউন্ডারি।

প্রথম বলেই লিটন আউট

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৮৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বলেই এলবিডাব্লিউ হয়ে ফিরে গেছেন লিটন দাস। স্কোরবোর্ডে রান যোগ হওয়ার আগেই স্বাগতিকরা হারায় প্রথম উইকেট। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইনিংস বিরতি শেষে দর্শকরা ঠিকঠাক বসারও সুযোগ পেল না, তার আগেই কাইল জার্ভিসের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন লিটন।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের এলবিডাব্লিউয়ের আবেদনে আম্পায়ার আউট দিলেও এই ওপেনার বেঁচে গিয়েছিলেন রিভিউ নিয়ে। এবারও রিভিউ নিলেন তিনি, তাতে অবশ্য শেষ রক্ষা হলো না। এলবিডাব্লিউয়ের শিকার হয়ে তাকে ফিরতে হলো শূন্য রানে।

বাংলাদেশকে করতে হবে ২৮৭

চট্টগ্রামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে কঠিন লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শন উইলিয়ামসের সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে জিম্বাবুয়ে ৫ উইকেটে করেছে ২৮৬ রান। অসাধারণ এক ইনিংস খেললেন শন উইলিয়ামস। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে খেলেছেন ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। সময় উপযোগী ব্যাটিংয়ে তিনি অপরাজিত ছিলেন ১২৯ রানে। ১৪৩ বলের ইনিংসটি উইলিয়ামস সাজিয়েছেন ১০ চার ও ১ ছক্কায়। তার সঙ্গে শেষ দিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন পিটার মুর, ২১ বলে ২ ছক্কায় তিনি করে যান ২৮ রান।

এর আগে ব্রেন্ডন টেলর জ্বলে উঠেছিলেন ব্যাট হাতে। চলতি সিরিজে প্রথমবার স্বরূপে ফিরে খেলেছেন ৭৫ রানের কার্যকরী ইনিংস। সঙ্গে সিকান্দার রাজার ৪০ রানে ভর দিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে জিম্বাবুয়ে করেছে ২৮৬ রান। বল হাতে খুব একটা ভালো দিন কাটেনি বাংলাদেশের। সর্বোচ্চ ২ উইকেট শিকার নাজমুল ইসলামের। তবে আবু হায়দার ও মাহমুদউল্লাহ ছিলেন মিতব্যয়ী। আবু হায়দার ৯ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে পেয়েছেন ১ উইকেট। আর ১০ ওভারে মাহমুদউল্লাহর খরচ ৪০ রান।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page