শ্রেষ্ঠত্বের আসরে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে টাইগাররা


২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ২:১৭ : পূর্বাহ্ণ

সকালেরসময় স্পোর্টস ডেস্ক:: পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ। বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ২৩৯ রান করেও টাইগাররা পেয়েছে ৩৭ রানের জয়। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান করতে পারে ২০২ রান। তাতে টানা দ্বিতীয়বার প্রতিযোগিতাটির ফাইনালে ওঠার আনন্দে মাতে মাশরাফিরা।

সবশেষ ২০১৬ সালের আসরেও ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। তবে টুর্নামেন্টটা ছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। সব মিলিয়ে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসরে তৃতীয়বার ফাইনালে উঠলো টাইগাররা। ২০১২ সালের ফাইনালে খেলেছিল ওয়ানডে ফরম্যাটে। ঘরের মাঠে সেবার যাদের বিপক্ষে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল সাকিব-মুশফিকদের, সেই পাকিস্তানকে হারিয়েই এবার শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে উঠলো তারা। শুক্রবারের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত।

ব্যাটিংয়ে সংগ্রহটা বড় করতে না পারায় বোলিংয়ে শুরুটা ভালো হওয়া দরকার ছিল বাংলাদেশের। মোস্তাফিজুর রহমানের সৌজন্যে সেটা পেয়ে যায় তারা। এই পেসারের জোড়া উইকেটের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজের আঘাতে ১৮ রানে পাকিস্তান হারায় ৩ উইকেট। ওই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল ইমাম-উল-হক ও শোয়েব মালিক। তবে দিনটা ছিল বাংলাদেশের। তাই ফর্মে থাকা মালিক (৩০) বেশিদূর যেতে পারেননি। ইমাম চমৎকার ইনিংস খেললেও অন্যপ্রান্তে উইকেট উৎসব করেছে বাংলাদেশ। যে উৎসবটা সবচেয়ে বেশি করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসার শুরুতে ধস নামনোর পর ৪৩ রানে পেয়েছেন ৪ উইকেট। দুটি উইকেট শিকার মিরাজের।

ইমামের বিদায়ে বাংলাদেশের স্বস্তি…

দারুণ প্রতিরোধ গড়েছিলেন ইমাম-উল-হক। সতীর্থদের ব্যর্থতার দিনে ঠাণ্ডা মাথায় ইনিংস গড়েছেন এই ওপেনার। তবে দলকে জেতাতে পারেননি তিনি। তার বিদায়ে পাকিস্তান হারায় ৭ উইকেট। একপ্রান্ত আগলে রেখে পাকিস্তানকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন ইমাম। ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে অস্বস্তিতে রেখেছিলেন এই ওপেনার। মাহমুদউল্লাহ বলে দূর হয় সেই অস্বস্তি। এই স্পিনারের বল ক্রিজ ছেড়ে এসে মারতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি। আউট হওয়ার আগে খেলে যান ৮৩ রানের চমৎকার ইনিংস। ১০৫ বলের কার্যকরী ইনিংসটি তিনি সাজান ২ চার ও ১ ছক্কায়।

আসিফকে ফেরালেন মিরাজ…

লিটন দাস ক্যাচটা নিতে পারলে আগেই শেষ হয়ে যেত আসিফ আলীর ইনিংসটি। সেই ভুলটাই শুধরে নিলেন এই উইকেটরক্ষক। চমৎকার স্টাম্পিংয়ে আসিফকে ফিরিয়েছেন লিটন। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে আউট হয়ে যান আসিফ। তার আগে ৪৭ বলে খেলেন কার্যকরী ৩১ রানের ইনিংস।

৫ উইকেট নেই পাকিস্তানের…

আবার এলোমেলো পাকিস্তান। বাংলাদেশি বোলারদের সামনে কঠিন পরীক্ষা দিতে হচ্ছে তাদের ব্যাটসম্যানদের। চমৎকার বোলিংয়ে বাংলাদেশ তুলে নিয়েছে পাকিস্তানের ৫ উইকেট। শোয়েব মালিকের বিদায়ে বড় ধাক্কা খায় পাকিস্তান। সেই ধাক্কাটা আরও জোরে লাগে খানিক পর শাদাব খান প্যাভিলিয়নের পথ ধরলে। সৌম্য সরকারের বলে মাত্র ৪ রান করে আউট হয়ে গেছেন তিনি। ব্যাট হাতে একেবারেই ব্যর্থ হওয়া সৌম্য বোলিংয়ে পেয়েছেন সাফল্য। তার বাউন্সার পুল করতে গিয়ে শাদাব ধরা পড়েন বদলি উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্ল্যাভসে।

মাশরাফির দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরলেন মালিক…

বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে তালুবন্দি করলেন বল, এরপর দাঁড়িয়ে উদযাপন করলেন উইকেট। মাশরাফির দাম্ভিক উদযাপনটা সত্যিই মানায়, উইকেটটা যে শোয়েব মালিকের। এর ওপর আবার ফর্মে থাকা পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানের ক্যাচটা নিলেন তিনি যেভাবে।
ইমাম-উল-হক ও মালিকের জুটিতে প্রতিরোধটা ভালোই গড়েছিল পাকিস্তান। রুবেল হোসেনের বলে ভাঙল সেই প্রতিরোধ। এই পেসারের বল মিড উইকেট দিয়ে খেলতে গিয়ে মালিক ধরা পড়েন মাশরাফির হাতে। সুপারম্যানের মতো উড়ে বল তালুবন্দি করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে মালিক ৫১ বলে করেন ৩০ রান।

মোস্তাফিজের জোড়া ধাক্কা…

বোলিংয়ে দারুণ শুরু হলো বাংলাদেশের। মোস্তাফিজুর রহমান তার টানা দুই ওভারে দুটি উইকেট নিয়েছেন। এশিয়া কাপ সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে মাত্র ১৮ রানে পাকিস্তানের ৩ উইকেট নেই। প্রথম ওভারেই পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশি স্পিনার তার পঞ্চম বলে মিড অনে ফখর জামানকে (১) রুবেল হোসেনের ক্যাচ বানান। পরের ওভারে মোস্তাফিজ তার দ্বিতীয় বলে বাবর আজমকে (১) এলবিডাব্লিউ করেন। বাঁহাতি এই পেসার তার দ্বিতীয় ওভারে অফ কাটারে সরফরাজ আহমেদকে ১০ রানে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানান।

পাকিস্তানের লক্ষ্য ২৪০…

বাংলাদেশকে উদ্ধার করলেও আক্ষেপ থেকে গেল মুশফিকুর রহিমের। মাত্র ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি হলো না তার। সপ্তম সেঞ্চুরি থেকে হাতছোঁয়া দূরত্বে বিদায় নিলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই করার মতো স্কোর এনে দিয়েছেন তিনি। এশিয়া কাপ ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সাবেক চ্যাম্পিয়নদের ২৪০ রানের টার্গেট দিয়েছে বাংলাদেশ।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ১২ রানে ৩ উইকেট হারালে মুশফিকের সঙ্গে মোহাম্মদ মিঠুনের একশ ছাড়ানো জুটিতে ২৩৯ রান করে বাংলাদেশ। মুশফিকের ৯৯ ও মিঠুনের ৬০ রানের ইনিংসই এই স্কোরের ভিত গড়ে দেয়। ৪৮.৫ ওভারে সব উইকেট হারায় বাংলাদেশ। জুনাইদ খান ৪ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সবচেয়ে সফল বোলার। দুটি করে নেন শাহীন শাহ আফ্রিদি ও হাসান আলী।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page