ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯

যে ১০ কারণে শেষ হাসি হাসতে পারল না ভারত


সকালের-সময় স্পোর্টস ডেস্ক ১১ জুলাই, ২০১৯ ১২:০৮ : পূর্বাহ্ণ

জায়ান্ট স্ক্রিনে জ্বলে উঠল ‘আউট’। আর তার সঙ্গেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল ১৩৫ কোটি ভারতবাসীর। ধোনি-জাদেজার পার্টনারশিপে একসময় যে অসম্ভবকেও সম্ভব মনে হচ্ছিল, তা আর হলো না। কাছে গিয়েও অনেক দূরে থেকে গেল ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন।

৯২ রানে ৬ উইকেট হারানো ভারত সপ্তম উইকেটে পেল ১১৬ রানের অসাধারণ জুটি। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুলদের ব্যর্থ হওয়ার দিনে রবীন্দ্র জাদেজা খেললেন অনবদ্য এক ইনিংস। তাকে সঙ্গ দিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। তারপরও শেষ হাসি হাসতে পারল না ভারত। জাদেজার ঝড় থামিয়ে, ধোনিকে বিদায় করে ফাইনালের টিকিট পেল নিউজিল্যান্ড।
ভারতকে হারিয়ে পরপর ২ বার ফাইনালে উঠল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু ঠিক কোন কোন জায়গায় ম্যাচ হারল ভারত।

দেখে নিন এরকমই সম্ভাব্য ১০টি ভুল:-

১. মাত্র ৫ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট পড়ে যায় ভারতের। চলতি বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে সবথেকে ভালো ফর্মে থাকা রোহিত, বিরাট ও রাহুল আউট হতেই ৫০ শতাংশ খেলা তখনই হেরে যায় ভারত। এই ধাক্কাটা আর সামলাতে পারেনি মিডল ও লোয়ার অর্ডার। ফলে অনেক চেষ্টা করেও জয় আসেনি।

২. রোহিত-বিরাট আউট হওয়ার পরে দায়িত্ব নিতে হতো লোকেশ রাহুলকে। আগের ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছেন। ফর্মে থাকাকালীন তাঁর সুযোগ ছিল হিরো হয়ে ওঠার। কিন্তু ম্যাট হেনরির বাইরের দিকে যাওয়া বলে খোঁচা মারলেন রাহুল। এই দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ের খেসারত দিতে হলো ভারতকে।

৩. তিন উইকেট পড়ার পর তরুণ ঋষভ পন্থের সঙ্গে ব্যাট করতে এসেছিলেন কার্তিক। সেই সময় অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একটা পার্টনারশিপ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু ম্যাট হেনরির বলে জিমি নিশামের অসাধারণ ক্যাচে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় কার্তিককে। ফলে আরও চাপে পড়ে যায় ভারতীয় দল।

৪. ভারতীয় দলের মিডল অর্ডারের সবথেকে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের নাম মহেন্দ্র সিং ধোনি। দল যখন চাপে তখন তাঁর উচিত ছিল ব্যাট করতে নামা। ২০১১ বিশ্বকাপে সেই কাজটা করেই দলকে জিতিয়েছিলেন ধোনি। কিন্তু এ দিন দেখা গেল ৭ নম্বরে ব্যাট করতে নামছেন তিনি। এই সিদ্ধান্ত ভারতের কাছে ব্যুমেরাং হয়ে দাঁড়ায়।

৫. চার উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তরুণ ঋষভ পন্থ ও হার্দিক পান্ড্যর কাছে সুযোগ ছিল নায়ক হওয়ার। ধরে খেলছিলেনও তাঁরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধৈর্য্য রাখতে পারলেন না। স্যান্টনারকে বড় শট মারতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এলেন দু’জনেই। তাঁরা আর একটু থাকলে ম্যাচ জিততেই পারত ভারত।

৬. নিশ্চিত হারের মুখ থেকে খেলা ঘুরিয়ে এনেছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং চাপে ফেলে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে। কিন্তু মোক্ষম সময়ে ট্রেন্ট বোল্টের স্লো বল বুঝতে না পেরে মিস হিট করলেন জাদেজা। সেই সময় তিনি আউট না হলে হয়তো ম্যাচ জিতত ভারত।

৭. জাদেজা আউট হোওয়ার পর সব দায়িত্ব ছিল ধোনির হাতে। ৪৯ তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কাও হাঁকিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেই দু’রান নিতে গিয়ে গাপটিলের ডাইরেক্ট থ্রোতে রান আউট হলেন ধোনি। রিপ্লেতে দেখা যায়, ডাইভ দিলে হয়তো ঢুকে যেতেন ক্রিজে। ধোনি হয়তো ভাবেনওনি, অতদূর থেকে ডাইরেক্ট উইকেটে লাগবে। এই রানআউটই সব আশা শেষ করে দেয়।

৮. ভারতের যখন উইকেট পড়ছে, সেই সময় রানের গতি অনেকটা কমে যায়। একসময়ে ৬ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়েছিলেন স্যান্টনার। মাঝের ওভারে স্ট্রাইক রোটেট করতে না পারায় আস্কিং রেট বাড়ছিল। ফলে শেষদিকে বেশি চাপে পড়ে যায় দল।

৯. আগের দিন প্রচুর বৃষ্টি হওয়াতে বুধবার প্রথম থেকেই আউটফিল্ড যথেষ্ট স্লো ছিল। ফলে বেশ কিছু শট চারের বাউন্ডারির কাছে গিয়ে ধরেন নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডাররা। এই স্লো আউটফিল্ডের জন্য বেশ কয়েক রান হারায় ভারত।

১০. এ দিনের হারের সবথেকে কারণ হিসেবে বলা যায়, নকআউট ম্যাচের চাপ সামলাতে না পারা। দু’বছর আগে এই ইংল্যান্ডেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে চাপের মধ্যে ম্যাচ হেরেছিল ভারত। এ দিনও তাই হলো। নকআউট ম্যাচের প্রেসারে ভারতের টপ অর্ডার আউট হয়ে গেল। সেই ধাক্কা থেকে আর ফেরা গেল না। গ্রুপ লিগে ভালো খেলেও নকআউটে উঠে এই চাপ সামলাতে না পারার রোগ গেল না টিম ইন্ডিয়ার।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page