জিম্মি ২৩ নাবিক

সোমালিয়ান জলদস্যুদের দখলে বাংলাদেশী জাহাজ


আন্তর্জাতিক ডেস্ক  ১২ মার্চ, ২০২৪ ৭:২০ : অপরাহ্ণ

ভারত মহাসাগরে এমভি আবদুল্লাহ নামের একটি বাংলাদেশি জাহাজকে দখলে নিয়েছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাহাজটিতে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ছিলেন। সূত্রের দাবি, জিম্মি অবস্থায় থাকলেও বাংলাদেশি নাবিকরা সুস্থ আছেন।

কেএসআরএমের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহরিয়ার জাহান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বেলা ১টার দিকে তারা বিষয়টি জানতে পেরেছেন। জাহাজের বাংলাদেশী ক্রুরা সবাই ভালো আছেন বলেও জানান শাহরিয়ার জাহান।

ঘটনাটি জানার পর নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানান ওই শীর্ষ কর্মকর্তা। তবে যোগাযোগ না করেই কীভাবে নাবিকদের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।

প্রসঙ্গত, ‘গোল্ডেন হক’ নামের জাহাজটি কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পরে এর নাম হয় ‘এম ভি আবদুল্লাহ’। ২০১৬ সালে তৈরি ১৯০ মিটার লম্বা এই জাহাজটি গত বছর কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হয়। এরপর সাধারণ পণ্য পরিবহন করে আসছিল জাহাজটি।

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী কেএসআরএম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং ২০০৪ সালে তাদের প্রথম জাহাজ কেনে। এমভি ফাতেমা জাহান’ ছিল তাদের প্রথম জাহাজ। দেশে এখন নিবন্ধিত সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ৫২। এগুলোর মধ্যে ২৩টি কেএসআরএম গ্রুপের। আর এক দশকেই সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে জাহাজ পরিচালনা ব্যবসায় নেতৃত্ব দিচ্ছে গ্রুপটি।

এরআগে ২০১০ সালেও বাংলাদেশি জাহাজ এমভি জাহান মনি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। দীর্ঘ ৩ মাস পর ২৬ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত হয়।

এদিকে গত ৩০ জানুয়ারি ভারতের রণতরী আইএনএস সুমিত্রা সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে আটক ১৯ পাকিস্তানি নাবিককে উদ্ধার করে। এর তিনদিন আগে সোমালিয়ার পূর্ব উপকূলে পাকিস্তানি নাবিক ও তাদের মাছ ধরার জাহাজটিকে অপহরণ করেছিল জলদস্যুরা। ভারতের নৌবাহিনী জানিয়েছে, গত ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে জলদস্যুদের বিরুদ্ধে এটি দ্বিতীয় অভিযান।

জানা গেছে, ১১ জন সশস্ত্র জলদস্যু ইরানের পতাকাবাহী মাছ ধরার জাহাজ এফভি আল নাঈমির ডেকে চড়ে বসেন এবং জাহাজের ১৯ ক্রুকে জিম্মি করেন। ক্রুদের সবাই পাকিস্তানি নাগরিক। ভারতের নৌবাহিনীর রণতরীটি এই মাছধরার জাহাজের গতিপথ রুদ্ধ করে দেয় এবং জিম্মিদের মুক্তি দিতে জলদস্যুদের বাধ্য করে। পরবর্তীতে নৌবাহিনীর সদস্যরা জাহাজ পরিদর্শন করেন এবং ক্রুদের খোঁজখবর নেন।

এক দিন আগেই রণতরী আইএনএস সুমিত্রা ইরানের পতাকাবাহী অপর একটি মাছ ধরার জাহাজের সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিয়েছিল। এফভি ইমান নামের জাহাজটিকেও সোমালি জলদস্যুরা অপহরণ করে। পরবর্তীতে ১৭ জন ইরানি ক্রুকে উদ্ধার করা হয়।

নৌবাহিনীর আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৩৬ ঘণ্টার ব্যবধানে আইএনএস সুমিত্রা দ্রুত, অবিচল ও নিরলস উদ্যোগের মাধ্যমে দুইটি অপহরণকৃত মাছ ধরার জাহাজ ও জাহাজের ৩৬ ক্রু (১৭ ইরানি ও ১৯ পাকিস্তানি) উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। কোচি থেকে প্রায় ৮৫০ নটিক্যাল মাইল পশ্চিমে, দক্ষিণ আরব সাগরে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যাতে এই মাছধরার জাহাজগুলোকে পরবর্তীতে অপর কোনো বাণিজ্যিক নৌযানের বিরুদ্ধে জলদস্যুতায় ‘মাদার শিপ’ হিসেবে ব্যবহার করা না যায়’।

আইএনএস সুমিত্রা হচ্ছে ভারতের নৌবাহিণীর উপকূল প্রতিরক্ষা জাহাজ। এর মূল দায়িত্ব হচ্ছে সোমালিয়ার পূর্বাঞ্চল ও এডেন উপসাগরে জলদস্যুতা প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা অভিযান পরিচালনা করা।

অন্যদিকে ভারত মহাসাগরে গত কয়েক দশকে বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। এ কারণে এ জলপথ ব্যবহার করে পরিচালিত পণ্য পরিবহন ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে। তবে জলদস্যুদের কাছে বিষয়টি যতটা না ছিনতাই, তার চেয়ে বড় ধরনের ব্যবসা হিসেবে বিষয়টিকে দেখছে তারা। অনেক সময় দস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া নাবিকেরা এমনটাই জানিয়েছে।

এসএস/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ