শ্রীলংকায় হামলায় জড়িত ভারতের হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা: শ্রীলংকান প্রতিমন্ত্রী


২৭ এপ্রিল, ২০১৯ ১০:১৩ : অপরাহ্ণ

সকালেরসময় রিপোর্ট:: সত্য হোক আর না হোক, বিভিন্ন ধর্মের কথিত জঙ্গি সংগঠন ও সেগুলোর কর্মকাণ্ড নিয়ে সরকারসহ ভারতপন্থী কিছু বিশেষ মহলের মাথাব্যথার শেষ নেই। অন্যদিকে প্রমাণিত হচ্ছে, বাংলাদেশে নয়, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের ব্যাপক বিস্তার ঘটছে আসলে ভারতে। ভারত কেবলই হিন্দুদের রাষ্ট্র এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী স্লোগানমুখে সারা ভারত জুড়ে ভয়ঙ্কর তৎপরতা চালাচ্ছে তারা।

কিন্তু ভারতের হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি-সন্ত্রাসী সংগঠন এবং তাদের নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষ মহলকে কোনো উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় না। মনে হয় যেন ভারতে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নেই, যেন শান্তির শ্বেত-শুভ্র চাদরের নিচে শান্ত বালকের মতো ঘুমিয়ে আছে হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা! অন্যদিকে বাংলাদেশের ব্যাপারে দু’ দেশের মহলগুলো কিন্তু পড়ি কি মরি করে পাড়া মাতিয়ে তোলে। শুধু দেশের ভেতরে নয়, সারা দুনিয়ায় কোনো সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হলে কথিত ইসলামী জঙ্গিদের দিকেই আঙুল তোলা হয়।

যেমন ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বাইয়ের দুটি হোটেলে হামলা চালানোর জন্যও বাংলাদেশের ইসলামী জঙ্গিদের দায়ী করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে এমন এক অসম্ভবকেই প্রতিষ্ঠা দেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে যেন সন্ত্রাস শুধু মুসলমানরাই করেন, হিন্দুরা নয় যেন হিন্দুরা ‘দুধে ধোয়া তুলসি পাতা’! হাতে-নাতে ধরা পড়লেও তাদের জঙ্গি-সন্ত্রাসী বলা যাবে না। আর জঙ্গি শব্দটি তো শুধু মুসলমানদের জন্যই নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে!

কিন্তু অন্তরালে সুচিন্তিত পরিকল্পনা থাকলেও ‘সত্যের ঢোল’ আপনা-আপনি বেজে উঠতে শুরু করেছে। খোদ ভারতেরই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এখন জঙ্গি-সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রতিষ্ঠা, বিস্তার ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। এশিয়ান ট্রিবিউন, গ্লোবাল শিখ নিউজের মতো পত্রপত্রিকার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মিলিটারি জার্নালে প্রকাশিত অনুসন্ধানী নিবন্ধে জানা যাচ্ছে, সন্ত্রাসী সংগঠন শুধু গড়েই ওঠেনি, কোনো কোনো সংগঠন কয়েক দশক ধরেও তৎপরতা চালিয়ে আসছে।

আশঙ্কার বিষয় হলো, কিছু রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এসব সংগঠনের সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনীও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের অনেকে জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্বও দিচ্ছেন। তাদের লক্ষ্য ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানো। সবকিছুর পেছনে রয়েছে শিব সেনা, বজরঙ্গ দল, আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা ভিএসপির মতো কয়েকটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল। দলগুলো বহু বছর ধরেই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের অফিসার ও সৈনিকদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে ভেড়াচ্ছে।

উদাহরণ হিসেবে সম্প্রতি বিশেষভাবে ‘মহারাষ্ট্র মিলিটারি ফাউন্ডেশন’ ও ‘আত্মঘাতক ফটক’ বা এজিপির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বাইয়ের দুটি হোটেলে পরিচালিত সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে এ দুটি সংগঠনের সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। শিব সেনার প্রয়াত প্রধান নেতা বাল ঠাকরের অনুসারী এবং সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল প্রেমনাথ হূন মিলিটারি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা। এটা শিব সেনার সামরিক শাখা। চাকরিতে থাকাকালেই জেনারেল প্রেমনাথ শিব সেনার সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন।

ওদিকে আত্মঘাতী দল এজিপি গঠন করেছেন ওই জেনারেলের বিশ্বস্ত শিষ্য কর্নেল জয়ন্ত রাও চাইতেল। জেনারেল প্রেমনাথ এবং কর্নেল চাইতেল বহু বছর মিলিটারি সিলেকশন সেন্টার এবং ‘র’-এর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা অন্য অনেককেও সন্ত্রাসী সংগঠনে টেনে এনেছেন। জেনারেল প্রেমনাথ হূন এবং কর্নেল চাইতেল মিলে একটি হিন্দু সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করেছেন। মুম্বাই থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে শিল্পনগরী আম্বেরনাথে রিক্রুটদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

প্রতি ১৫ দিনে ৩০ জন করে সন্ত্রাসীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে জেনারেল প্রেমনাথ ও কর্নেল চাইতেল বলেছেন, আত্মঘাতী সংগঠনের সদস্যরা পাকিস্তান ও শ্রীলংকার অভ্যন্তরে ঢুকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পুলিশ অনেক উপলক্ষেই প্রমাণ পেয়েছে যে, ভারতের ভেতরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অপরাধের সঙ্গে হূন-চাইতেলদের সংগঠন জড়িত রয়েছে। সে সুবাদেই শ্রীলংকায় হামলা। কিন্তু প্রতিবারই অদৃশ্য হস্তক্ষেপে পুলিশের তদন্ত মাঝপথে থামিয়ে দিতে হয়েছে ভয়ের কারণে।

২০০২ সালের এক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছিল, চাইতেলের সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনী ও হিন্দু সন্ত্রাসীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু চাইতেলকে গ্রেফতার করার ঠিক প্রাক্কালে অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াড বা এটিএসকে থামতে হয়েছে। কারণ, নির্দেশ এসেছে ‘র’-এর কাছ থেকে। এ প্রসঙ্গে অন্য একটি তথ্যও জানানো হয়েছে সব প্রধানমন্ত্রীর আমলেই ‘র’ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেছে। এজন্যই মুসলমান, খ্রিস্টান, শিখ ও দলিতসহ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের অপরাধের ব্যাপারে ‘র’ সব সময় চোখ বুঁজে থেকেছে।

বাবরী মসজিদ ধ্বংস করা, গোধরায় ট্রেনে অগ্নিসংযোগ, গুজরাট গণহত্যা, খ্রিস্টানদের হত্যাকাণ্ড, মালেগাঁওয়ের বোমা বিস্ফোরণ, সমঝোতা এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগ এবং সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর সব অপরাধেই হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ‘র’তে চাকরিরত কর্নেল শিংকর পুরোহিতকে গ্রেফতার করার পর তিনি মালেগাঁও বোমা বিস্ফোরণ ও সমঝোতা এক্সপ্রেসে আরডিএক্স দিয়ে অগ্নি সংযোগের কথা স্বীকার করেছেন। এসব খবর যখন ভারতীয় পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছিল তখনই হঠাৎ সংঘটিত হয়েছে মুম্বাই নাটক।

সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী খবর হচ্ছে, ঘটনা শুরুর মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াড বা এটিএসের প্রধান হেমন্ত কারকারে নিহত হয়েছেন। একে একই সাথে অস্বাভাবিক ও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হেমন্ত কারকারেকে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরাই হত্যা করেছে। হত্যা করার কারণ, ২০০৭ সালে সংঘটিত মালেগাঁওয়ের বোমা বিস্ফোরণ ও সমঝোতা এক্সপ্রেসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা দুটির তদন্ত কাজে কারকারে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তদন্তকালে অন্য অনেকের সঙ্গে কর্নেল শিংকর পুরোহিতের জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।

এই কর্নেল আবার জেনারেল প্রেমনাথ হূনের আত্মঘাতী সংগঠনের সদস্য। কর্নেল পুরোহিতের সঙ্গে রমেশ উপাধ্যায় নামের একজন মেজরও অভিযুক্ত হয়েছিলেন। এটিএস জানিয়েছিল, চাকরিরত অন্য দু’জন কর্নেলও মালেগাঁও ও সমঝোতা এক্সেপ্রেসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এটিএস আরো জানিয়েছিল, অচিরেই হিন্দু সন্ত্রাসীদের পুরো নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করা হবে। ঠিক এ সময়েই ঘটে মুম্বাই নাটক। এর প্রাক্কালে হঠাৎ এটিএসকে সরকারি সমর্থন-সহযোগিতা দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। কারকারেকে প্রতিদিন হত্যার হুমকি দেয়া হতে থাকে। এমনভাবেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয় যাতে পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপানো যায়। কারকারেকে হত্যা করার দায়িত্ব দেয়া হয় বাল ঠাকরের আত্মঘাতক ফটক বা এজিপিকে। ওই ঘটনাপ্রবাহে কর্নেল পুরোহিতের পাশাপাশি পাঞ্চমারিতে অবস্থানরত প্যারাস্যুট রেজিমেন্টের কর্নেল বাপাদিত্য ধরের নামও প্রকাশিত হয়েছিল।

সম্প্রতি গত রোববার ইস্টার সানডে প্রার্থনার সময় একযোগে বিস্ফোরণে মূল ভূমিকা রাখা জাহরান হাশেম দীর্ঘদিন ধরে ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের সাথে অবস্থান করেছিলেন। আত্মঘাতী হামলার প্রশিক্ষণসহ ২০১৪ সালে ভারতে বসে পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানা গেছে। শ্রীলংকায় ঘটে যাওয়া স্মরণকালের বর্বরোচিত হামলার সঙ্গে ভারতীয় সম্পৃক্ততার কথা ওঠে এসেছে। গত মঙ্গলবার শ্রীলংকার প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান জয়াবর্ধনেও সংসদে বলেছেন, তদন্তে দেখা গেছে স্থানীয় (এনটিজে) এ ঘটনার পেছনে ছিল। এর সঙ্গে ভারতের হিন্দু জঙ্গি গোষ্ঠীর সংযোগ রয়েছে।

সংসদে জয়াবর্ধনে বলেন, এই হামলার সঙ্গে ভারতীয় জঙ্গি গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, এখানে উল্লেখ করা যায় জামায়াত-উল-মুজাহিদীন ভারত নামে পরিচিত এ গোষ্ঠীটি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানায়, আত্মঘাতী জাহরান হাশেম দীর্ঘদিন দক্ষিণ ভারতে ছিলেন। এ সময় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। এরপর ২০১৪ সালে কাট্টানকুডিতে জাতীয় তাওহিদ জামাত গঠন করেন তিনি। চরমপন্থী এ সংগঠনটি পরিচালনার ক্ষেত্রে ভারত থেকেই যাবতীয় প্রশিক্ষন সহায়তা পেতেন জাহরান হাশেম।

ইস্টার সানডের প্রার্থনার সময় শ্রীলংকার গির্জা ও হোটেলে হামলার মূলহোতা জাহরান হাশেমের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে বহু বছর ধরে অভিযোগ করে আসছিলেন শ্রীলংকার মুসলমানরা। শ্রীলংকা বাট্টিকোলা অঞ্চলে ৪০ বছর বয়সী এই আত্মঘাতী মোহাম্মদ জাহরান ও মৌলভী হাশেম নামে পরিচিত। গড়পড়তার এক মধ্যবিত্ত মুসলমান পরিবারে জন্ম নিয়েছেন তিনি। দেশটির মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাট্টানকুডিতে একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করলেও পরবর্তীতে ঝরে পড়েন। পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।

স্থানীয় মুসলমানরা তাকে আপদ হিসেবেই জানতেন। স্থানীয় মসজিদে নানা সমস্যার মূল কারণ ছিলেন এই জাহরান। সাধারণ মুসল্লিদের সঙ্গে তার বিতর্ক লেগেই থাকত। একদিন এক মুসল্লিকে হত্যা করতে তলোয়ার উঁচিয়ে তেড়ে গিয়েছিলেন। শ্রীলংকার মুসলিম কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিলমি আহামেদ বলেন, তিন বছর আগেই হাশেম সম্পর্কে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিলেন তিনি।

গত মঙ্গলবার প্রকাশ করা এক ভিডিওতে হামলার দায় নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এতে হাশেমের সেই পরিচিত উগ্রমুখটি দেখা গেছে। ফুটেজে আইএস নেতা আবুবকর আল বাগদাদির আনুগত্য প্রকাশ করে আটজনকে শপথ নিতে দেখা গেছে। যাদের মধ্যে কেবল হাশেমের গোলাকার মুখটিই খোলা ছিল। বাকিরা মুখ ঢেকে আনুগত্যের শপথ নেন বলে জানান দিলেও তাহলে হাশেম কেন মুখ বন্ধ করেনি তা নিয়ে গণমাধ্যমের বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আসলে এই ছবিটি কি এডিট করা! এমন প্রশ্নেরও জম্ম দিয়েছে সকলের মাঝে।

মাথা কালো কাপড়ে ঢাকা রাইফেল বহনকারী হাশেম অন্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। বাকিরাও তার মতো কালো পোশাক পরলেও তাদের মুখমণ্ডল ছিল সম্পূর্ণ ঢাকা। এদিকে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপলা সিরিসেনা শুক্রবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হোটেলে হামলার সময়ই মূল অভিযুক্ত জাহরান হাশেম নিহত হয়েছেন।

সূত্র: দ্য হিন্দু ও ডন

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ