আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সহায়তা করতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চীন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চায় বলে জানিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের সদস্য জেনারেল লি জুচেং।
বেইজিংয়ে এক বৈঠকে চীন সফররত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে তিনি একথা জানিয়েছেন বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি মিয়ানমারের উন্নয়নের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ বলে জেনারেল হ্লাইংকে জানিয়েছেন জেনারেল জুচেং।
জুচেং বলেছেন, “জটিল ও পরিবর্তনশীল আঞ্চলিক নিরাপত্তার এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে কৌশলগত যোগাযোগ বজার রাখতে চায় চীন।”
চীনের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন দেশটির সশস্ত্র বাহিনীগুলোকে পরিচালনা করে।
দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে আরও বেশি যোগাযোগ, নিবিড় প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত বিনিময় চায় চীন এবং সীমান্ত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজেদের যৌথ সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চায় বলেও জানিয়েছেন জুচেং।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারের চীনা সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলোতে স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াইরত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর বিদ্রোহীদের সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর লড়াই নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে আছে চীন; কারণ ওই লড়াইয় চলাকালে ওই এলাকার হাজার হাজার গ্রামবাসী চীনে পালিয়ে গেছে।
মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর শাসনের সময় দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিল পশ্চিমা দেশগুলো। ওই সময় চীন মিয়ানমারের জেনারেলদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মিত্রতা গড়ে তোলে।
অতি সম্প্রতি তাদের মিত্রতা তেল ও গ্যাস খাতেও সম্প্রসারিত হয়েছে এবং বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তোলন করা প্রাকৃতিক গ্যাস চীনে সরবরাহ শুরু করেছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের ভিতর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুনানে নির্মিত একটি তেলশোধনাগার পর্যন্ত নতুন তেল পাইপলাইন বসানো হয়েছে যা চলতি বছর চালু হয়েছে। এই পাইপলাইনে করে মধ্যপ্রাচ্যের তেল মিয়ানমারের বন্দর হয়ে চীনে পৌঁছে যাবে।
মালাক্কা প্রণালী ও সিঙ্গাপুরের জলপথ এড়াতে তেল সরবরাহের নতুন এই সরবরাহ রুটটি চালু করেছে চীন।
অনেক বছর ধরেই চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান।
কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ তেল ও গ্যাস খাতকে কেন্দ্র করে এই সম্পর্ক আরো জোরদার হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নির্মূলে মিয়ানমারের নিষ্ঠুর অভিযানের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া সত্বেও দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিবেশী দেশটিকে সমর্থন দিয়ে আসছে চীন।
অগাস্টে নতুন করে সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।