ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ , পারমাণবিক হামলার আশঙ্কা


২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১২:৫৮ : অপরাহ্ণ

সকালেরসময় রিপোর্ট:: বালাকোটে চালানো হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত আর পাকিস্তান যেন পুরোপুরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তৎপর হয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও চীনের পক্ষ থেকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে দুটি দেশের উদ্দেশ্যে।

কিন্তু ভারত আর পাকিস্তান – পারমাণবিক শক্তিধর এই দুটি দেশের মধ্যকার এ উত্তেজনা কতো দূর গড়াতে পারে ? বালাকোটে হামলার জের ধরে দুটো দেশের সামরিক বাহিনী কি এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে?
হামলার পর পরই ভারতীয় মুখপাত্র বলেছেন, এটা একটা নন-মিলিটারি আক্রমণ – অর্থাৎ এই হামলা পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু এই কথাটির অর্থ কী? এর মধ্য দিয়ে ভারত কী বোঝাতে চাইছে?

কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ মাহমুদ আলী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এতে বোঝা যাচ্ছে যে ভারত সরকার এখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে যেতে আগ্রহী নয়। ভারত শাসিত কাশ্মীরে ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর ওপর জইশ ই মোহাম্মদ নামের যে সন্ত্রাসী গ্রুপটি হামলা চালিয়েছে ভারত তার জবাব হিসেবে এই আক্রমণ চালিয়েছে। এটা ঠিক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের হামলা নয় বলে ভারত বোঝাতে চাইছে।

কিন্তু পাকিস্তানিরা কি এই হামলাকে সেভাবেই দেখবেন?

আলী বলেন, পাকিস্তানিরা একে জইশ ই মোহাম্মদের ওপর হামলা হিসেবে দেখবেন না। তারা এটিকে দেখবেন ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর পাকিস্তানি সীমানা অতিক্রম করে পাকিস্তানের ভূকেন্দ্রে চালানো হামলা হিসেবে। কাজেই তারা এটিকে আগ্রাসন হিসেবে দেখবে এবং এর জবাব দেওয়ার কথা বলবে।

কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুটো দেশের উত্তেজনা কতো দূর ছড়াতে পারে এই প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, অতীতের কিছু ঘটনা ব্যাখ্যা করে এ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে। একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। আপনি একটা ঘটনা ঘটালেন এবং আমি তার পাল্টা জবাব দিলাম। আপনি আবার তার বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দিলেন। এভাবে ঘটনা ক্রমশই জটিল থেকে জটিলতর হতে পারে।

তিনি বলেন, দুটি দেশেরই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। মূলত পাকিস্তানের পারমাণবিক সমরাস্ত্র ভারতের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার কাজে নিয়োজিত। ভারতের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ঠিক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়, মূলত চীনের বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রয়োজন হলে তারা এটা পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করতে প্রস্তুত থাকবেন।

তিনি বলেন, দুটো দেশ কখনও একথা বলেনি যে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না। ফলে এই উত্তেজনা আরো বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। তিনি জানান, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও বলেছিলেন উপমহাদেশ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভীতিকর এলাকা যেখানে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে।

কিন্তু এখনই তাদের কি এ ধরণের কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে?

নিরাপত্তা বিশ্লেষক সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আগ্রহ কোনো পক্ষেরই নেই।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দুজনই বারবার বলেছেন যে তাদের দেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেষ্টাই হল তাদের মূল উদ্দেশ্য।

কিন্তু ঘটনাচক্রে জইশ ই মোহাম্মদের হামলা এবং তার আগে বেলুচিস্তানে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর সমর্থনে পাকিস্তানের ওপর হামলা- পরস্পরের বিরুদ্ধে এই যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলে এসেছে এবং দুপক্ষের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে যে বৈরি ভাব ও যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে, সে কারণে কোনো একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে, বিশেষ করে ভারতীয় নির্বাচনের আগে কোনো পক্ষই নিজেকে দুর্বল প্রমাণ করতে চাইবেন না।

তিনি বলেন, সেটা দেখানোর একমাত্র উপায় হলো সামরিক পদক্ষেপ নেয়া। ভারত নিয়েছে। পাকিস্তানকে এখন একটা পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। এভাবে ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থেকে যায়। তিনি মনে করেন, বালাকোটের এই হামলার পর সেই আশঙ্কা কিছুটা ঘনীভূত হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page