ইসরায়েলের নারকীয় তাণ্ডবে দেশে দেশে বাড়ছে বিদ্বেষ, ক্ষোভ–ঘৃণা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক  ১১ নভেম্বর, ২০২৩ ১:০২ : পূর্বাহ্ণ

ফিলিস্তিনির অবরুদ্ধ গাজায় অবরত ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল। গত ৩৫ দিনে গাজা উপত্যকায় ৩২ হাজার টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল। এতে গাজায় সাড়ে ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক শিশু। তাদের হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ইসরায়েলের নারকীয় তাণ্ডবে বাকরুদ্ধ পুরো বিশ্ব। দেশে দেশে বাড়ছে ইসরায়েল বিদ্বেষ।

গার্ডিয়ান, বিবিসি ও সিএনএন সুত্রে জানা গেছে- জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্সসহ কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ইহুদিরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মানুষের ক্ষোভ এবং ঘৃণার শিকার হচ্ছেন ইহুদিরা। বিশেষ করে ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা ছড়িয়েছে জার্মানিতে।

দেশটিতে রাস্তাঘাটে রীতিমতো মুখ লুকিয়ে বা পরিচয় গোপন করে হাঁটতে হচ্ছে তাদের। চলমান ইসরায়েল ও হামাস সংঘাত জার্মানিতে সামাজিক বিভেদ ঘটিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর ভয়ে ইহুদিরা যেমন পালিয়ে বেড়িয়েছে তেমনি এখনো অনেকে মুখ লুকিয়ে আছে। ইহুদি পুরুষরা তাদের ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র জনসমক্ষে আনছেন না। গত ১৮ অক্টোবর জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের একটি সিনাগগে (ধর্মীয় উপাসনালয়) পেট্রোল বোমা ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে।

একই অবস্থা যুক্তরাজ্যে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে মানুষ। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৭ টায় গাজায় হামলায় ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবারাহ করা কারখানা অবরোধ করেন ব্রিটিশ ট্রেড ইউনিয়নের শত শত সদস্য। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের রচেস্টারে অসংখ্য সদস্য ব্যানার পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে আছে।

ব্যানারগুলোতে লেখা, এই কারখানাটি গণহত্যার অস্ত্র তৈরি করে। ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করুন। ইউরোপের আরও একটি দেশ ইতালিতেও যুদ্ধের পর থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

জেরুজালেমের ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু উপাসনালয়ের বাইরে ইউরোপের বৃহত্তম এবং বিশ্বের প্রাচীনতম ইহুদি এলাকাগুলোর একটি হলো রোমের ঘেটো। ইহুদিদের ওপর হামলার শঙ্কায় সেখানেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও হামাস সংঘাত শুরুর পর থেকেই দর্শনার্থীদের সংখ্যা কমেছে। ঘেটোর জনপ্রিয় ইহুদি-রোমান রেস্তোরাঁর মালিক মিশেল পাভোনসেলো বলেন, মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে আমার প্রায় ১০০-২০০টি অর্ডার বাতিল করেছি। কারণ দর্শনার্থীরা এখন আসতে ভয় পান। অনেকে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি তবে কেউ কেউ বলেছেন, পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নিরাপদ বোধ করি না।

ইউরোপের আরেকটি দেশ ফ্রান্সে গত তিন সপ্তাহে বেশ কিছু ইহুদি-বিরোধী ঘটনা ঘটেছে। গালিগালাজ ও প্রাণঘাতী হুমকিরও সম্মুখীন হচ্ছেন ইহুদিরা। সংঘাতের প্রথম ১০ দিনে পুলিশ এরুপ ৩২০টিরও বেশি ইহুদিবিরোধী কার্যকলাপ নথিভুক্ত করেছে। রাজধানী প্যারিসেও ইহুদিরা প্রচুর ভয়ে আছেন।

উত্তর শহরতলির বৃহত্তর ইহুদিদের এলাকাটিতে স্থানীয়রা নিয়মিত চলাচল কমিয়ে দিয়েছেন, এটি এখন পুরোপুরি শান্ত। কমেছে রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফেগুলোর গ্রাহক। কোশার পিজারিয়া রেস্তোরাঁর ম্যানেজার অ্যালেক্সিস টিমসিট বলেন, মানুষ ভয় পায়, হতবাক হয়ে যায়, তারা জীবনের প্রতি তাদের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছে। আমারও ব্যবসা ৫০ শতাংশ কমে গেছে, রাস্তায় কোনো কোলাহল নেই, কেউ হাঁটছে না।

বৃহস্পতিবার উত্তর আমেরিকার কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মন্ট্রিলে দুইটি ইহুদি স্কুলে হামলা চালানোর পর দেশটির ইহুদিরাও ভীতসন্ত্রস্ত। দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে রয়েছে, মন্ট্রিল সিনাগগে বোমা হামলা এবং শহরের কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি এবং ইসরায়েলপন্থি গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ।

এ ঘটনায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জাতীয়ভাবে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। মন্ট্রিল সফরকালে তিনি বলেন, আমি জানি মানুষের আবেগ বেশি এবং মানুষ ভয় পায়। কিন্তু একে অপরকে আক্রমণ করা আমরা কানাডিয়ান হিসাবে হতে পারে না।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ