জনশক্তি রপ্তানিতে জগাখিচুড়ি

সিন্ডিকেটের খপ্পরে শ্রমবাজার–২৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা


নিজস্ব প্রতিবেদক ৩ জুন, ২০২২ ২:০৪ : পূর্বাহ্ণ

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে কথিত ২৫টি এজেন্সির সিন্ডিকেট ২৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট। একই সঙ্গে সংস্থাটি কর্মী পাঠাতে সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উম্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বায়রা।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক দেশের উন্নয়নবিরোধী, মুদ্রা পাচারকারী, মানব পাচারকারী, অভিবাসী শ্রমিকদের অর্থ লুণ্ঠনকারী ও স্বাধীনতাবিরোধী সিন্ডিকেট নির্মূল করে সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উম্মুক্ত করার দাবি জানান।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে কথিত ২৫টি এজেন্সির সিন্ডিকেটের বাজার দখলের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হবে। ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক রপ্তানির ফলে দেশের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। সে সময় শ্রমিক রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল ১৫ লাখ। কিন্তু হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ জন। এতে নিশ্চিত চাকরির সুযোগ হারিয়েছেন ১২ লাখ ২৫ হাজার কর্মী।

মোহাম্মদ ফারুক বলেন, অভিবাসন ফি বাবদ নেয়ার কথা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু নেয়া হয়েছে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। জনপ্রতি অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা। এভাবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ওপর বিদেশে পাচার করেছে ১০ সদস্যর সিন্ডিকেটটি। আর সে সময় ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে ১ হাজার ২০০ বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি।

তিনি বলেন, দীর্ঘ তিন বছর মালেশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাজারটি পুনরায় খোলার জন্য দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সমগ্র জাতি আশা করেছিল চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই শ্রমিক রপ্তানি শুরু হবে। কিন্তু সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার কারণে সেই আশা পূরণ হয়নি। ২০১৬ সালে সিন্ডিকেটের সদস্য সংখ্যা ছিল ১০, এখন তা হয়েছে ২৫ জন।

দেশে প্রায় ২ হাজারের কাছাকাছি বৈধ এজেন্সি থাকার পরও কেন ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে সে প্রশ্নও রাখেন মোহাম্মদ ফারুক। তিনি বলেন, বতর্মানে ১৭০০ থেকে ১৮০০ বৈধ এজেন্সি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক রপ্তানি করছে। কোন অপরাধে শত এজেন্সিকে বাদ দিয়ে শুধু ২৫টা এজেন্সি মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানি করার অনুমতি পাবে?

সংগঠনের মহাসচিব মোস্তফা মাহমুদ বলেন, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর বিদেশি শ্রমিক প্রয়োজন। আগামী ৩ বছরে মালয়েশিয়ার প্রয়োজন ১৫ থেকে ২০ লাখ শ্রমিক। আর সেই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে ২৫ জনের তৈরি একটি সিন্ডিকেট। এবারের ন্যূনতম টার্গেট মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানি করে ২০ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া। গত বছরের মতো এবার জনপ্রতি অতিরিক্ত ২ লাখ টাকা করে আদায় করতে পারলে তারা ২০ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে পারবে।

দীর্ঘ তিন বছর বন্ধ থাকার পর গত বছর ডিসেম্বরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে অনুমোদন দেয় মালয়েশিয়া। বাংলাদেশ থেকে সব পেশার শ্রমিক নেয়ার অনুমোদনের ঘোষণা দেয় দেশটি। দেশটির ঘোষণার নয় দিনের মাথায় গত বছর ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশ একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। সমঝোতা স্মারকের শর্ত মোতাবেক কর্মীদের বিমান ভাড়াসহ যাবতীয় ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকারীরা বহন করবে।

কিন্তু কর্মী পাঠানো শুরুর আগে নতুন শর্ত আসে কুয়ালামপুরের পক্ষ থেকে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী সারাভারান প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে এক চিঠি দিয়ে তাদের ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করার বার্তা দেয়। তবে ঢাকা এ শর্ত মেনে নিতে রাজি না হওয়ার পাশাপাশি ফিরতি বার্তায় নিবন্ধিত এক হাজারের বেশি রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা মালয়েশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে।

এদিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক দলের ভাষ্য, কর্মী পাঠানোই বড় কথা; কয়টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে যাবে সেটা বড় কথা নয়। অন্যপক্ষ বলছে, কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো যাবে না।

এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার ২৫ জনের সিন্ডিকেট দিয়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট করা হলে কাফনের কাপড় প?রে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অবস্থান নেয়ার হুমকি দেয় জনশক্তি রপ্তানিকারকদের একাংশ। এ হুমকির জবাবে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানন বলেন, আমি ভীত নই। তারা যত বেশি হুমকি দেবে, আমি তত বেশি নিষিদ্ধ করব।

সকালের-সময় /এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page