টানা দুই মাস ধরে ব্যাংকে এলসি খোলার হিড়িক


নিজস্ব প্রতিবেদক ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ৫:২১ : অপরাহ্ণ

দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিদেশি হিসাবে (নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে) ডলার সরবরাহ বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো ঋণপত্র বা লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলা বাড়িয়েছে। টানা দুই মাস ধরে বাড়ছে এলসি খোলার পরিমাণ। তবে গত অর্থবছরের শুরু সময়ের চেয়ে কিছুটা কম খোলা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের আগস্টে ৫ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়। আগের মাস জুলাইয়ে এর পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক মাসে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।

জুনে এলসি খোলা হয় ৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারের। তবে আগস্টের এলসি খোলার পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ১৬ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের আগস্টে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই শেষে ব্যাংকগুলোর নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে ডলারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে, গত বছরের একই সময় যা ছিল ৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোয় গত বছরের তুলনায় ডলার সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। তাই এলসি খোলার পরিমাণ বাড়ছে। এলসি খোলা কমলেও পণ্য আমদানির পরিমাণ কমেনি। পরিমাণ কমলে বাজারে পণ্যের সংকট দেখা দিত। মূলত আগে আমদানি এলসি খোলার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করা হতো না। ফলে আমদানির আড়ালে অনেক অর্থপাচার হতো। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক নজরদারি বাড়ানোর কারণে ওভার-ইনভয়েসিং কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানির আড়ালে দেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমদানিতে বিধিনিষেধ ও তদারকি বাড়ানোয় গত অর্থবছরে অর্থ পাচার কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর শেষে দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ১৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। চলতি হিসাবের ঘাটতির পরিমাণও

৩ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। তবে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপের কারণে লেনদেনের সামগ্রিক ঘাটতি (বিওপি) ৮ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড ৮৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়। এতে ৩৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি চলতি হিসাবের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন।

ডলারে। দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতিও ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকে। এ অবস্থায় গত অর্থবছরের শুরু থেকে দেশের এলসির লাগাম টেনে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক।

চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ের তুলানায় এলসি খোলা বাড়লেও নিষ্পত্তির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাইয়ে এলসি নিষ্পত্তি হয় ৫ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারের। আগস্টে তা কমে হয় ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ নিষ্পত্তি কমেছে ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। আর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ২৭ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারের। গত বছরের আগস্টে এলসি নিষ্পত্তি হয় ৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারের।

ব্যাংকাররা জানান, গত অর্থবছরে আগের খোলা এলসির দায় পরিশোধের চাপ বেশি ছিল। তাই গত অর্থবছরে বেশি ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়। তবে সে চাপ এখন কিছুটা কমে এসেছে। তাই নিষ্পত্তির পরিমাণ কমছে।

তবে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, এখনও তারা পর্যাপ্ত এলসি খুলতে পারছেন না। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, ব্যাংকগুলো বড় ব্যবসায়ীদের এলসি খুললেও ছোটদের খোলা হচ্ছে না। এলসি খুলতে না পারার কারণে তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার অবস্থা।

তবে ব্যাংকগুলোর ডলার সরবরাহ ও এলসি খোলা বাড়লেও ডলার সংকট এখনও পুরোপুরি কাটেনি। বাজার ঠিক রাখতে এখনও রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ডলার ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডরার বিক্রি করা হয়। ফলে রিজার্ভ কমে গত ৩০ আগস্ট দাঁড়ায় ২৩ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলারে।

বিদায়ী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৬৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়। আগের অর্থবছরে (২০২১-২০২২) খোলা হয় ৯৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৭০ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারের এলসি নিষ্পত্তি করা হয়। আগের অর্থবছরে (২০২১-২০২২) এর পরিমাণ ছিল ৮৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারের।

সূত্র—এবি/এসএস/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ