সাংবাদিকতা জীবনে এই প্রথম অভিজ্ঞতা...

এক সময় চামড়া নিতে চলত গোলাগুলি, আর এখন চোখের জলে বাড়ি ফেরা!


মো: মহসিন চৌধুরী, ব্যুরো প্রধান, বৈশাখী টিভি, চট্টগ্রাম  ১৪ আগস্ট, ২০১৯ ১:১৩ : পূর্বাহ্ণ

হায়রে কোরবানির পশু চামড়ার বাজার। এক সময় দখল নিতে চলত গোলাগুলি, আর এখন চোখের জলে বাড়ি ফেরা, কি যে নিয়তি, সম্পদ কে কাটা মনে করেন যারা। উন্নয়নের রোড ম্যাপ যারা করেন তাদের নজর কিভাবে এড়ায়? দেশের এ অমূল্য সম্পদ বিনা মূল্যে পাওয়ার সুযোগ নষ্ট করে মাটিতে পুঁতে ফেলা!

আগে দেখতাম পাড়ায় কোরবানির পশুর চামড়া নিতে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মধ্যে কি অসম প্রতিযোগিতা। মুহূর্তে দাম উঠত। তাই দামও ভাল পাওয়া যেত, যে চামড়া এখন বিনা মূল্যেও অচল তা সেসময় ৩/৪ হাজারেও ঠেকত। আর সন্ধ্যার আধাঁরীতে চামড়ার বাজার দখল নিতে গোলাগুলি পর্যন্ত হত। হত্যা কান্ডের ঘটনাও ঘটেছে। আগে কি চামড়া দিয়ে যা তৈরী হত এখন তা কি হয়না? চামড়ার তৈরী জিনিসপত্র স্বাস্থ্য বান্ধব, বরং এর ব্যবহার ও চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু আমরা কোন পথে হাটছি? চামড়ার বাজার আর চমড়া নিয়ে টেনারী মালিক ও আড়তদারদের এমন তেলেসমাতি কোন ইংগিত করে।

এখন দৃশ্যপট পাল্টেছে। পাড়ায় আগের দৃশ্য নেই। চামড়া কিনতে নেই তোড়জোড়, নেই প্রতিযোগিতাও। আর গোলাগুলিও নেই। এবার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গী হয়েছে চোখের জল। লাভ দুরে থাক পুরো পুঁজিই ভেসে গেছে চোখের জলের সাথে। দাম বেধে দিয়ে ছিল সরকার, তার চেয়েও অনেক কম দামে কেনা, আবার ক্রতা না পেয়ে বিনা মূল্যেও মৌসুমি ব্যবসায়ীকে দিয়েছেন অনেকে।

এর পরও মুক্তি নেই। আড়তদার প্রথম দিকে চামড়া প্রতি ৫০ টাকা দর দেয়, সন্ধ্যার পর তো আর ক্রেতাই ছিলনা। বিনা মূল্যে নেয়ার লোকের অভাব। কারণ সংরক্ষনের জন্য লবণের দাম এক লাফে কয়েক গুন বেশী, তাই সেই উপায়ও ছিলনা। নগরীর চৌমুহনীর আশে পাশে রাস্তার দুপাশে চামড়ার স্তুপ। ক্রেতা নেই। এটি মূল উল্লেখযোগ্য নয়, খুজে মিলছিল না চামড়ার মালিকের। এক পর্যায়ে সব ফেলে বিক্রেতা উদাও।

কারণ পচনশীল চামড়া গলার ফাঁস হওয়ার উপক্রম। এমন অবস্থায় মোসুমি চামড়া ফেলে বাড়ি ফিরে যাওয়া যেন ছেড়ে যাওয়ায় নিরাপদ যেন – ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। প্রায় তিন দশকের সাংবাদিকতা জীবনে এমন অভিজ্ঞতায় মনটা ভারী বিষন্ন হল। বার বার ভেসে আসছে মালিক বিহীন চামড়ার স্তুপের পর স্তুপ এর দৃশ্য। এমন দৃশ্য নগরীর বিবির হাট, সল্ট গোলা সহ অনেক স্থানের। লক্ষাধিক চামড়া ছিল বেওয়ারিশ অবস্থায়।

শেষ পর্যন্ত সিটি করপোরেশনএগিয়ে আসল। ছড়িয়ে পড়া দুগন্ধে রোগ জীবাণু থেকে নগরবাসীকে বাঁচাতে অবর্জনা স্তুপে ফেলে দেয়া হয়েছে হাজার হাজার চামড়া। অনেক স্থানে একাজটিও হয়েছে বিলম্বে। ফলে দুর্গন্ধে রাস্তায় আসা যায়নি। মূল্যবান সম্পদের উৎস নিজেদের, আমদানি করতে হলে মনে হয় এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেত। হায়রে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা নেই, উন্নয়নের রোড ম্যাপ যারা করেন, যারা সরকারকে পরিকল্পনা প্রদান করেন তাদের ভাবনাটা বাস্তবিক ও দেশের সহায় স্বার্থের করা উচিত নয় কি?

নিজের উৎস এর কাঁচামালের গুরুত্ব বাড়াতে ভাবনায় আনতে হবে। তবেই দেশের সব মানুষের সমৃদ্ধি হবে। প্রবাদ আছে, ডাক্তার আসিবার আগেই রোগী মারা গেল – তা মাথায় রাখা উচিত নীতি নির্ধারকদের। নচেৎ এক দিন জন রোষ জবাব দেবে ষড়যন্ত্রকারীদের।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page