অর্থনৈতিক উন্নয়নে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের চান প্রধানমন্ত্রী


১৩ মার্চ, ২০১৮ ২:২২ : অপরাহ্ণ

সকালেরসময় ডেস্ক::  বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের অংশীদার হতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর বিজনেস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এই দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামে পাঁচশো একর জমি দেওয়ার প্রস্তাবও দেন তিনি। ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুর মঙ্গলবার সাংরি লা হোটেলে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সকালে উদ্বোধনীতে শেখ হাসিনা সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে আমি সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের জন্য একই এলাকায় পাঁচশো একর জায়গা দেওয়ার প্রস্তাবটি উত্থাপন করে শেখ হাসিনা বলেন, এক জায়গাতেই পাঁচশো একর জায়গা বা তার থেকেও বেশি, আপনাদের যা প্রয়োজন: মূলত চট্টগ্রামের মিরেরসরাইতে।

ভৌগোলিক দিক থেকে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম সিঙ্গাপুরের কাছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগের জন্য মিরেরসরাই খুবই উপযুক্ত স্থান।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ “বিডা” ও সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজের “আইই” মধ্যে একটি, ডিজিটাল গভার্নমেন্ট ট্রান্সফর্মেশন বিষয়ে একটি এবং এফবিসিসিআই ও এমসিসিআইয়ের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের ম্যানুফ্যাকচারিং ফেডারেশনের দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

প্রথম সমঝোতা স্মারকে সই করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম ও আইর ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাথি লাই। ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ট্রান্সফরমেশনের জন্য সমঝোতা স্মারকে সই করেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের ইন্সটিটিউট অব সিস্টেম সায়েন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খুং চ্যান মেং এবং বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী। সিঙ্গাপুরের ম্যানুফ্যাকচারিং ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ডগলাস ফু ও এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ও এমসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট নিহাদ কবির অপর দুই সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের শর্ত সবচেয়ে উদার মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আইনের সুরক্ষা পাচ্ছেন। এছাড়া তারা কর অবকাশ, যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর ছাড় এবং মুনাফা নিজ দেশে ফেরত নিতে পারবেন।

বাংলাদেশের স্বল্প মজুরির কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিশাল তরুণ সমাজ রয়েছে, যারা উদ্যমী। তারা সহজেই প্রশিক্ষিত কর্মীতে পরিণত হতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান ও নিউজিল্যান্ডের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পণ্যের শুল্ক ​এবং কোটা মুক্ত সুবিধার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশে তৈরী পণ্যের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের তৈরী পোষাক খাতের সফলতা সকলের জানা। এই খাত থেকে ২০১৭ সালে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা ২০২১ সালের মধ্যে এই খাতের রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে চাই।

অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯৭ শতাংশ পূরণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের ১২০টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। কম খরচে উচ্চমানের ওষুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্রুতই প্রধান বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জ্ঞান শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলো দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। জাহাজ নির্মাণ বাংলাদেশের আরেকটি দ্রুত বিকাশমান শিল্প। আমরা ছোট থেকে মাঝারি আকারের বিশ্বমানের সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরি করছি।

দ্রুত শিল্পায়নের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১২০টি ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়ে তোলার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। আইটি শিল্পে বিদেশে বিনিয়োগের জন্য আমরা বেশ কিছু হাই-টেক পার্ক গড়ে তুলছি। আইটি পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে ২০২১ সালের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কথা মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।

কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে আধুনিক, টেকসই এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ অর্থনীতিতে রূপান্তরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধির চার থেকে পাঁচ শতাংশ দখল করে আছে উত্‌পাদন খাত। প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপারের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী তিন দশকের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বিকাশমান তিনটি অর্থনীতির একটি হবে। অন্য দুটি দেশ- ভারত ও ভিয়েতনাম।

বৃটেনের প্রথম সারির সাপ্তাহিক ‘ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস’ ২০১৭ সালের ৮ অগাস্ট প্রকাশিত সংখ্যায় বলেছে ‘বাংলাদেশ গত বিশ বছরে অর্থনৈতিক বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে’। অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নগরের ভোক্তায় পরিণত হবে এবং এতে একটি বড় বাজার সৃষ্টি হবে।

সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী লিম হং কিয়াং এবং সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাথি লাই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান এস এস থিও অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।বিজনেস ফোরামের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন। পরে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেনI

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ


You cannot copy content of this page