সকালেরসময় রিপোর্ট:: চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে শিক্ষকের কাছে ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক সমাপনী পরীক্ষার্থী। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতার রোষানলে পড়েন ওই শিক্ষক। অভিযোগ উঠেছে শুধু ধর্ষণ করতেন না তিনি শিক্ষার্থীদের নগ্ন ছবিও ধারণ করে রাখতো মোবাইলে। রবিবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বদু মুন্সি মিয়ার নতুন বাড়িতে এক সমাপনী পরীক্ষার্থী পড়তে গেলে ধর্ষণ করে নগ্ন ছবি ধারণ করে রাখে।পরবর্তী ওই শিক্ষার্থী বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের জানালে এ ঘটনা প্রকাশ পায়।
অভিযুক্ত প্রাইভেট শিক্ষক মুন্সি মিয়া উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নের বদু মিয়া বাড়ির মৃত আহমদ খলিল মাষ্টারের ছেলে। বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি শুনেছি, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর মা জানান, প্রতিদিনের ন্যায় রবিবার বিকেলে আরবী পড়তে মুন্সি মিয়ার বাড়িতে গেলে সে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তড়িগড়ি করে ছুটি দিয়ে দেন। এরপর ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে মুন্সি মিয়া ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষন করেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
ওই শিক্ষার্থী জানান, এর আগেও বেশ কয়েকবার এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। আরো কয়েকজনের সাথেও এমনটি করলেও তারা ভয়ে কাউকে বিষয়টি জানায়নি। তবে মুুন্সি মিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রায় সময় সে পড়তে আসতো না, এছাড়া পড়াও ঠিকমতো শিখতো না। রবিবার বিকেলেও সে পড়া না পারায় মারধর করেছি, এর বেশি কিছু হয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই শিক্ষার্থী ও তার পরিবার এ ধরণের অভিযোগ করছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয়রা জানান, এটি নতুন ঘটনা নয়, আরো অনেক শিক্ষার্থী তার লালসার শিকার হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. ইস্কান্দর বলেন, এ ধরণের ঘটনা সত্যি দুঃখজনক। মুন্সি মিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে থানায় অভিযোগ দায়েরের জন্য শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছি। মুন্সি মিয়া শুধু ধর্ষণ করতো না, পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নগ্ন ছবিও মোবাইলে ধারন করে রাখতো। তার মোবাইলের মেমোরি কার্ড উদ্ধার করে ওই শিক্ষার্থীর পরিবারকে বুঝিয়ে দিয়েছি। উদ্ধারকৃত মেমোরি কার্ডে একাধিক শিক্ষার্থীর নগ্ন ছবি পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
অবশেষে সোমবার ধর্ষণের শিকার হওয়ার সমাপনী পরীক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এতে উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মৃত এ কে নুরুল ইসলামের ছেলে প্রাইভেট শিক্ষক আক্তারুল আলম প্রকাশ মুন্সি মিয়াকে (৬৮) আসামী করা হয়েছে। ২৬ নভেম্বর সোমবার বিকেলে ওই পরীক্ষার্থীর মা থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করলে বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইরুল ইসলাম নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০ (সংশোধিত/০৩) এর ৯(১) এবং পর্ণগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৮ (১) ধারায় মামলা রুজু করেছেন।
ওসি সাইরুল ইসলাম বলেন, ভিকটিমকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ গত রবিবার রাতেই আসামীকে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের মোবাইলে ধারণকৃত মেমোরী কার্ড জব্দসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। মামলার বাদী জানান, প্রতিদিনের ন্যায় রবিবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে আরবী পড়তে মুন্সি মিয়ার বাড়িতে গেলে সে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তড়িগড়ি করে ছুটি দিয়ে দেন।
এরপর ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে আমার মেয়েকে ধর্ষণ ও মোবাইলে নগ্ন ছবি ধারণ করে রাখেন। পরবর্তী সে বাড়িতে এসে বিষয়টি জানায়। এ ঘটনা জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতার রোষানলে পড়েন ওই শিক্ষক। শুধু ধর্ষণ করে ক্ষান্ত হতেন না তিনি, মোবাইলে শিক্ষার্থীদের নগ্ন ছবিও ধারণ করে রাখার বিষয়টিও সামনে আসে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. ইস্কান্দর বলেন, অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তার এমন শাস্তি হোক, যাতে আর কেউ এ ধরণের অপরাধ করার সাহস না পায়।